ঝিনাইদহে চাতাল শ্রমিকের মৃত্যু, পরিবারের অভিযোগ হত্যা


ঝিনাইদহে চাতাল শ্রমিকের মৃত্যু, পরিবারের অভিযোগ হত্যা

ঝিনাইদহের ডাকবাংলা বাজারের একটি চাতাল থেকে নিসার আলী নামে এক শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। পরিবার থেকে দাবি করা হয়েছে, তাকে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহত নিসার আলীর বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার কান্দি গ্রামে। তিনি সোনা মণ্ডলের ছেলে এবং চাতাল শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। পুলিশ জানায়, তিনি তার পরিবারসহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজারে মেসার্স সরকার ইন্টারপ্রাইজ নামের চাতালে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। এই চাতালটির মালিক স্থানীয় শরিফুল ইসলাম।

ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে যান ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া। তদন্তে জানা যায়, সোমবার বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলার তালেশর গ্রাম থেকে নিসার আলী ও তার পরিবারের সদস্যদের চাতাল মালিক শরিফুল ইসলাম ও তার লোকজন জোরপূর্বক নিয়ে আসেন। পরে রাতে তাদের একটি দুইতলা ভবনের কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরদিন সকালে নিসারের নিথর দেহ পাওয়া যায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মর্গে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে নিসার আলীর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী দিপালী খাতুন অভিযোগ করেন, “ডাকবাংলা বাজারের মেসার্স সরকার এন্টারপ্রাইজ মালিক শরিফুল ইসলামসহ দুইজনের কাছ থেকে চাতালে কাজ করার বিনিময়ে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়েছিলেন নিসার আলী। ওই টাকা ফেরত পেতে সোমবার আমাদের তালেশর গ্রাম থেকে তুলে আনা হয়। রাতে আমাদের একটি ঘরে আটকে রেখে আমার স্বামীকে নির্যাতন করা হয়। এরপর সকালে বলা হয়, উনি স্ট্রোক করেছেন।”

তিনি আরও দাবি করেন, “শরিফুলসহ তিনজন মিলে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে।”

অন্যদিকে, অভিযুক্ত শরিফুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং অপর এক চাতাল মালিক আমিরুল ইসলাম জানান, “পাওনা টাকা আদায়ের জন্য স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সহায়তায় নিসার আলী ও তার স্ত্রী দিপালীকে সোমবার বিকেলে ডাকবাংলা বাজারে আনা হয়। রাতে তাদের চাতালের একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল। পরে সকালে নিসার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।”

তবে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, শরিফুল ও আমিরুলের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অর্থ লেনদেনের চেষ্টা করছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফারজানা জানান, “শরিফুল ইসলাম নামে একজন নিসার আলীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন এবং জানান, তিনি স্ট্রোক করেছেন। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায়, তিনি অনেক আগেই মারা গেছেন।”

সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ঘটনার বিষয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×