রেলওয়ের জমি দখল করে ভবন নির্মাণে ব্যস্ত বিএনপি-আ.লীগ নেতা
- পাবনা প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৭:২৭ পিএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রেলওয়ের জায়গা কৃষিজমি হিসেবে ইজারা নিয়ে শ্রেণী পরিবর্তণ করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর রেলপথে পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌর সদর এলাকায় রেললাইনের মাত্র ২০ গজ দূরে প্রকশ্যেই এই ভবন নির্মাণ চলছে। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলওয়ের জমিতে কৃষিজমি হিসেবে ইজারা নিয়ে অনুমোদনবিহীন অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের সুযোগ নেই।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর রেললাইনে বড়ালব্রিজ স্টেশনের পশ্চিম পাশে রেলওয়ের প্রায় এক একর পুকুর বালু ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে প্রায় চার হাজার বর্গফুট জুড়ে একটি ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ করে পুনরায় আরেকটি ভবনের কাজ শুরু করেছে নির্মাণ শ্রমিকরা। আশপাশে বিভিন্ন স্থানে নির্মাণসামগ্রী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। তবে পাশেই কয়েক বছর আগে অবৈধভাবে নির্মানাধীন একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করতে গেলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বাধায় ওই ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কয়েক বছর পর তারপাশেই আবার নতুন করে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভাঙ্গুড়া উপজেলার পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মহির উদ্দিন, মন্ডতোষ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আরশেদ আলী, পাটুলিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ, সাবেক ইউপি সচিব গোলাম আম্বিয়া, হাসিনুর রহমান বিপ্লব, ডি এম আব্দুস সাত্তার, প্রভাষক কুরবান আলী, আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে উঠেছে এই ভবন নির্মাণের অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, সেখানে রেলওয়ের পুকুরে আগে মাছ চাষ করা হতো। চার বছর পূর্বে ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে পুকুর ভরাট শুরু করেন আওয়ামীলীগ ও বিএনপির নেতারা। এ বিষয়ে কয়েকটি পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে উপজেলা প্রশাসন বালু ভরাট বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে পুকুরটি আবার ভরাট করা হয়। এখন সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মহির উদ্দিন বলেন, 'দুই বছর আগে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে বাণিজ্যিক করা হয়েছে। তাই ভবন নির্মাণ করছি। এতে আপনাদের সমস্যা কি।'
এ বিষয়ে আরেক অবৈধ দখলদার কোরবান আলী বলেন, 'ভবন নির্মাণের লিখিত কোন অনুমতি নেই। তবে উল্লাপাড়া রেলওয়ের কানুনোগো শরিফুল ইসলাম তাদেরকে মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছেন বলে দাবি করেন।'
কিন্তু ঘটনার বিষয়, উল্লাপাড়া এলাকার রেলওয়ে কানুনোগো শরিফুল ইসলাম জানান, 'এ ধরনের কথা কারো সঙ্গে হয়নি।'
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (পশ্চিম) রেজাউল করিম বলেন, 'রেলওয়ের জায়গায় অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের সুযোগ নেই। সারাদেশে রেণওয়ের জায়গা থেকে অবৈধ ভবন উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে। ভাঙ্গুড়ার বিষয়টিও দেখা হবে।'
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুন নাহার বলেন, 'রেলওয়ের জায়গায় ভবন নির্মাণ হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়েছি। নির্মাণধীন ভবনের ছবিসহ পাকশী রেলওয়ে কর্মকর্তাকে প্রেরণ করেছি। তারা যদি আমাদের সহযোগিতা চায় তাহলে তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।'