
প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাকে নিয়ে রনির মন্তব্য
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ ও কলাম লেখক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ পাওয়া আগ পর্যন্ত নুরুল হুদাকে মানুষ হিসেবে ১০০ তে ১০০ নম্বর দিতে হতো। তবে আমাদের রাজনীতি এত খারাপ যে এখানে ফেরেশতাকে ঢুকিয়ে দিলে মুহূর্তের মধ্যেই তিনি ইবলিশ হয়ে যাবেন। নুরুল হুদা সাহেবেরও একই অবস্থা হয়েছে। সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া একটি ভিডিওতে তিনি এসব কথা বলেন। গোলাম মাওলা রনি বলেন, নুরুল হুদা যখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন, আমি আশা করেছিলাম তিনি খুব ভালো একটি নির্বাচন উপহার দিবেন। জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলাসহ প্রথম থেকে বেশ সাহসী কথাবার্তা বলছিলেন তিনি। তবে তার অধীনে ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল রাতের ভোট। যার কারণে তিনি খুবই কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে গ্রেপ্তার করার আগে মব তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের সংস্কৃতি হলো খুব ভালো মানুষ, নিরপেক্ষ এবং একেবারে দলকানা না হলে সাধারণত কাউকে ডিসি হিসেবে কোন রাজনৈতিক সরকার মনোনয়ন দেয় না। এদিকে নুরুল হুদা মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ মাইন্ডেড ছিলেন সেটা সবাই জানে। কিন্তু তারপরও তিনি বিএনপির সময় ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার আমলে তিনি লোভে পড়ে তার যে অধঃপতন হয়, সেটা এত নিচু পর্যায়ে চলে গেছিল যা কল্পনা করতে পারিনি। গোলাম মাওলা রনি আরো বলেন, নূরুল হুদার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার পরেও তিনি আমার অনেক ক্ষতি করেছেন। এজন্য দীর্ঘশ্বাস থাকলেও তার গলায় জুতোর মালা পরানো হবে; তার পরিবারের পরিজনের সামনে সন্তানের বয়সী ছেলেরা গালে জুতো মারবেন, এটা কেয়ামত পর্যন্ত আমি দেখবো বলে কল্পনা করিনি। এই মবের নিন্দা ও যারা এসব করেছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে রনি বলেন, এই ঘটনা আমাদের দেশের রাষ্ট্রের স্থিতিকে কাঁপিয়ে দিয়েছে, ফলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভেরিফাইড পেজ থেকে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেন।

স্মার্টফোন প্রতীক যে পাবে তার সবচেয়ে সুবিধা হবে : আব্দুন নূর তুষার
উপস্থাপক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার আব্দুন নূর তুষার বলেছেন, স্মার্টফোন প্রতীক যে পাবে তার সবচেয়ে সুবিধা হবে। আজ সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডি থেকে তিনি একটি পোস্টে এ কথা লিখেন। আবদুন নূর তুষার ওই পোস্টে লিখেন, ‘যে স্মার্টফোন প্রতীক পাবে তার সবচেয়ে সুবিধা হবে। হাতে ফোন নিয়ে দিন ও রাতের মিছিলগুলো কল্পনা করেন। এক পয়সা খরচ হবে না প্রতীক চেনাতে।’ এরআগে এক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘যারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে ১০ বছরের বেশি রাখতে চান না তারা এত বেশি সংস্কার চান যে- অনির্বাচিত স্যারকে আজীবন রাখতে চান।’

বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না: পিনাকী ভট্টাচার্য
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে কখনো দাঁড়াবেন না। সম্প্রতি একটি ভিডিও বার্তা তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ড. ইউনূসের প্রতি এটা সতর্ক বার্তা। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক মূল্যবোধ এর বিরুদ্ধে কখনো দাঁড়াবেন না। আপনি মনে রাখবেন, বাংলাদেশের খুব সাধারণ মুসলিম সমাজ আপনার পেছনে দাঁড়িয়েছে তার সমস্ত সমর্থন, আত্মার সমস্ত শক্তি নিয়ে। আপনি শক্তির ভালোবাসাকে উপেক্ষা করবেন না। এর পরিণতি হবে ভয়ানক। পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, নারী নীতিতে কী আছে আমরা পুরাটা পড়ে দেখিনি। কিন্তু যেই স্যাম্পল বা ট্রেলার দেখলাম, তাতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ শঙ্কিত। আমি আশা করব সাধারণ মানুষের সংখ্যাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন।

‘বাংলাদেশে এই প্রথম একটা সিরিয়াস পলিটিকাল গ্যাঞ্জাম এড়ানো গেছে সোফায় বসে’
সাবেক ছাত্রনেতা ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফাহাম আবদুস সালাম একটি ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘বাংলাদেশে এই প্রথম একটা সিরিয়াস পলিটিকাল গ্যাঞ্জাম এড়ানো গেছে সোফায় বসে। আমি তারেক রহমান সাহেবকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই কারণ গ্যাঞ্জাম করার ক্ষমতাটা তার।’ তিনি আরও লেখেন, ‘ইউনূস সাহেবকেও ধন্যবাদ কারণ তিনি জেদাজিদিতে যান নাই। যেকোনো দুইজন সভ্য মানুষ নেগোশিয়েট করে একটা সেন্সেবল জায়গায় আসতে পারেন।’ ‘আপনারা উভয়ই বাংলাদেশে আমাদের সন্তানদের জন্য ভালো একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি এখনো আশাবাদী। আমরা আওয়ামী জাহেলিয়া অতিক্রম করতে পারবো এবং সভ্যতা এইদেশে জায়গা পাবে।’ উল্লেখ্য, আজ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে সফররত প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে তাঁদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জনাব তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।

অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেন্জ মোকাবেলা ও ঈদুল আযহার অর্থনীতি
বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত সরকারের স্বৈরাচারী শাসন,লুটপাট ও অর্থ পাচারের কারণে ভঙ্গুর ও বিপর্যস্ত অবস্থায় পতিত হয়। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বিনিয়োগ, বেকারত্বের হার ও আমদানি -রপ্তানি প্রভৃতি প্রতিটি খাতই খারাপ অবস্হায় ছিল। সে অবস্হা থেকে সরকার স্বল্প সময়ের মধ্যে সঠিক নীতি গ্রহনের মাধ্যমে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি সূচকের উন্নতি সাধনে সমর্থ হয়েছে বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় এসেছে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের উপর ছেড়ে দেয়ার পর ও এক্সচেন্জ রেট বাড়েনি, স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ২৭.৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও দেশের পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। ইপিবি'র তথ্য অনুযায়ী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৪ হাজার ২১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি। সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন খাত সংহত হলেও বড় দুশ্চিন্তার বিষয় বিনিয়োগে স্হবিরতা। বেসরকারি বিনিয়োগ কমেছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, জ্বালানিসংকট ও উচ্চ সুদ হার সহ প্রভৃতি কারণে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, বিনিয়োগ না বাড়লে অর্থনীতির কোনো অর্জনই টেকসই হবে না। বর্তমান বিনিয়োগ ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য অন্যতম বড় চ্যালেন্জ। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে, বাংলাদেশে মোট ৬,৬৭২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১০.৬১ শতাংশ কম।আমদানী প্রবৃদ্ধি হ্রাস অর্থনীতির খারাপ অবস্থা কে নির্দেশ করে। অন্যদিকে বেকারত্বের হার ও বাড়ছে। বিবিএসের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাস শেষে ২৬ লাখ ৬০ হাজার বেকার আছেন। শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব হার প্রায় ৪০ শতাংশ। এ সকল চ্যালেন্জ মোকাবেলার জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করেছে। বিশেষ করে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বিডা বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তাদের নিয়ে বিনিয়োগ সন্মেলন আয়োজন করেছে, ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্স উন্নতির চেষ্টা করছে, বিনিয়োগ পরিবেশ ও বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সেবা একটি ডেস্ক থেকে দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগ ও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সামগ্রিক পরিস্হিতির উন্নতি করতে হবে। তাহলেই বাড়তে কাংখিত বিনিয়োগ, যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। অর্থনীতির এ সকল চ্যালেন্জের মধ্যে ঈদ -উল-আযহা সমাগত। ঈদ -উল - আযহা মূলত ধর্মীয় উৎসব হলে ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঈদ উল আযহা উপলক্ষে পশু লালন-পালন, কুরবানির পশু বিক্রি দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করে। এ সময় অর্থনীতিতে ব্যাপক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী গরু ও ছাগল কুরবানি হয়েছিল প্রায় ৫৮ লক্ষ । যার বাজার মূল্য প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। কুরবানিকৃত পশুর সরবরাহ ও বেচাকেনার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, চাঁদা, টোল, বখশিস,ফড়িয়া, দালাল, হাশিল, পশুর হাট ইজারা, রশি ও খুটির ব্যবসা, পশুর খাবার ও পশু কুরবানি ও বানানো এমনকি পশুর সাজগোজের জন্য বিপুল আর্থিক লেনদেন হয়। ফলে অর্থনীতিতে আর্থিক লেনদেন ও মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যায়। তা ছাড়া কুরবানিকৃত পশুর চামড়া বেচাকেনা, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য প্রচুর আর্থিক লেনদেন হয়। পশুর চামড়া রপ্তানি বাণিজ্যে, পাদুকা শিল্প এবং হস্তশিল্পেও ব্যাপক আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে। এক তথ্য মতে, দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে সতেরো লাখ ছোট-বড় খামার আছে। এর সঙ্গে প্রায় কোটি মানুষ জড়িত। এরা গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করে। এ সময় চামড়া শিল্পে ব্যাংক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। কুরবানির ঈদে পশুর চামড়া সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকরণ করার সঙ্গে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ও ব্যবসা জড়িত। এ সময় চামড়া শিল্পে সরকারি ব্যাংকগুলো প্রায় পাঁচ’শ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে থাকে। এতে ব্যাংকের আয় যেমন বাড়ে, তেমনি চামড়া শিল্পের আয়-উন্নতিও বৃদ্ধি পায়। তা ছাড়া এই শিল্পের সাথে জড়িত হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। লবণ চামড়া শিল্পে চামড়া সংরক্ষণের একটি অন্যতম উপাদান। এ জন্য দেশীয় শিল্পে লবণ উৎপাদন এবং চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রয়োজনে আমদানিও বেড়ে যায়। এক হিসেব মতে, গত বছর সরকারকে শুল্কমুক্তভাবে প্রায় চল্লিশ হাজার টন লবণ আমদানি করতে হয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ী, লবণশিল্প এবং পাদুকা শিল্পের আর্থিক তৎপরতা ও কর্মকাণ্ড অনেক বেড়েছে। ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছর ফ্রিজের বিক্রি বেড়ে যায়। কুরবানির ঈদকে সমানে রেখে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকার ফ্রিজ বিক্রি হয় বলে জানা যায়। ফলে এই শিল্পের উৎপাদন ও তৎপরতা অনেক বেড়ে যায়, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ঈদ -উল -আযহায় মশলা বিশেষ করে পিয়াজ,রসুন, আদা, এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গ, জিরা, তেজপাতা কুরবানির সময় উল্লেখযোগ্য হারে ব্যবহৃত হয়। এসব পণ্য অনেকগুলো আমদানি করতে হয়। এসব পণ্য কুরবানির বাজারে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। ঈদুল -উল -আযহা উপলক্ষে হজ পালনের প্রস্তুতি, যাতায়াত, আবাসন ব্যবস্থাপনা এবং সৌদিআরবে জীবননির্বাহের জন্য যে খরচ করে তা অর্থনীতিতে একটি বিশেষ অবদান রাখে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ দশ হাজার পাঁচশত ছিয়াত্তর জন মুসলিম হজ পালন করেন। প্রতি জনে গড়ে পাঁচ লাখ টাকা ব্যায় নির্বাহ করলে এই খাতে মোট অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া হজের ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাংলাদেশি এবং বিদেশী মুদ্রা ব্যয়ের সংযোগ রয়েছে। এর ফলে দেশের ব্যাংকিং খাতে সেবা এবং লেনদেন বেড়ে যায়। দেশের হজ ও টিকিট অ্যাজেন্সিগুলোর আর্থিক ও ব্যবসায়িক তৎপরতা অনেক বেড়ে যায় এবং সার্বিক অর্থনীতিতে হজের কর্মকাণ্ড গতিশীলতা আনয়ন করে। আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঈদের সময় ঈদ উপলক্ষে বোনাস প্রদান করা হয়। এক হিসেব মতে, দেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারির মধ্যে বোনাস বিতরণ করা হয় প্রায় পনেরো হাজার কোটি টাকা।দেশব্যাপী ষাট লাখ দোকান কর্মচারিদের বেনাস আসে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। পোশাক ও বস্ত্রখাতের সত্তর লাখ শ্রমিকের সম্ভাব্য বোনাস তিন হাজার পাঁচশত কোটি টাকা। তা ছাড়া আছে বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারির বোনাস। সবমিলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ঈদ উপলক্ষে অর্থনীতিতে বাড়তি যোগ হয়। ফলে অর্থনীতিতে মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে যায়। এই অর্থ কিন্তু বসে থাকে না। বরং তা বাজারে চাহিদা সৃষ্টি করে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেও গতিকে প্রভাবিত করে। তখন মানুষ জামা-কাপড়, জুতা, প্রশাধনী, আতর ও জায়নামাজ ইত্যাদিসহ নানা খাতে যেমন অর্থ ব্যয় করে. তেমনি গরিব-দুঃখী ও অভাবি মানুষকে দান করার ফলে অর্থনীতিতে অসাধারণ প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়। এ সময় দেশে অধিকাংশ শহুরে মানুষ মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনের সাথে ঈদ উদযাপন করার জন্য গ্রামের বাড়িতে ছুটে যায়। ফলে ট্রেন, বাস মালিক সবার ব্যবসায় গতি আসে। এতে কুরবানির সময় পরিবহন খাতে যে বাড়তি চাপ তৈরি হয়, তাতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বাড়তি ব্যবসা ও লেনদেন হয়ে থাকে। এই কর্মকাণ্ডের ফলে অর্থনীতিতে চাকা গতি লাভ করে। কুরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে প্রবাসী রেমিট্যান্সের প্রবাহ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। প্রবাসীরা তাদের পরিবার-পরিজনের নানাবিধ ঈদ খরচ ও কুরবানির জন্য প্রচুর বিদেশী মুদ্রা পাঠিয়ে থাকে। এতে অর্থনীতিতে লেনদেন বেড়ে যায় এবং জাতীয় অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আগের বছর ঈদের আগের মাস অর্থাৎ মে মাসে যেখানে রেমিট্যান্স আসে ২.২৫ বিলিয়র ডলার। অথচ একই বছর জুন মাসে ঈদ -উল - আযহা পালিত হওয়ার কারণে জুন মাসে মোট রেমিট্যান্স আসে ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৪ সালে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ নতুন রেকর্ড করেছে। পুরো বছরে মোট রেমিট্যন্স আসে ২৬.৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় তেইশ শতাংশ বেশি। আগস্ট বিপ্লবের পর থেকে প্রতি মাসে দেশে গড়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যায়। ২০২৫ সালে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তা আগের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি, ফ্রেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স দেশে প্রবেশ করে যথাক্রমে ২.১৮ বিলিয়ন, ২.৫৮ বিলিয়ন, ২.৬৩ বিলিয়ন ও ২.৭৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল যথাক্রমে ৩.২৯ বিলিয়ন, ২.৫২ বিলিয়ন, ২.১৮ বিলিয়ন এবং ২.০৪ বিলিয়ন ডলার। এই বিশাল অঙ্কের রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির চাকাকে যেমন সচল করেছে, পতিত সরকারের তলানিতে যাওয়া রিজার্ভকেও শক্তিশালী করছে। তবে ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ অনেক বেড়ে যায়।ঈদ -উল -আযহা অর্থনৈতিক গতিশীলতাকে ত্বরান্বিত করবে এবং সরকার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চ্যালেন্জ সমূহ কে মোকাবেলা করে হাজারো শহীদ ও প্রায় অর্ধ লক্ষ আহতের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বৈষম্যহীন বাংলাদেশ ২.০ গঠনে সমর্থ হবে। লেখক: আতিকুর রহমানআহবায়ক, লিয়াজোঁ ও মিডিয়া কমিটিবৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদ-এফবিসিসিআই

গবেষণায় নবযাত্রা: পাবিপ্রবি’র প্রথম জাতীয় কনফারেন্স
ফারুক হোসেন চৌধুরী পাবিপ্রবিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘বিজনেস ইনোভেশন, টেকনোলজি অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি’ শীর্ষক কনফারেন্স। যেটি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম জাতীয় কনফারেন্স। সেমিনারটি শুধু একাডেমিক গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিলনা, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, গবেষণার পরিসর এবং পাবনা শহরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিসরে এক ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই আয়োজন নবীন এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন গবেষণার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথে আরেক ধাপ এগিয়েছে বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনে করছেন। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ এই কনফারেন্সের আয়োজন করে। এতে পাঁচটি সেশনে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ জন অধ্যাপক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল-আওয়াল প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আকিজ উদ্দীনের জীবনী তুলে ধরে তাঁর মত উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেন। একইসাথে আলী বাবা ও অ্যামাজনের উদাহরণ তুলে ধরেন। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. ড. নজরুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো.শামীম আহসান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নূর উন নবী ও প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বক্তব্য দেন। দিনব্যাপী কনফারেন্সের প্রথম সেশনের প্রবন্ধের বিষয় ছিল একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি। এতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক ড. সালেহ জহুর। দ্বিতীয় সেশনের প্রবন্ধের বিষয় ছিল ইকোনমিকস এন্ড ফাইন্যান্স। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমজাদ হোসাইন। তৃতীয় সেশনের প্রবন্ধের বিষয় ছিল ম্যানেজমেন্ট ১। এতে সভাপতিত্ব করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলাম। চতুর্থ সেশন ম্যানেজমেন্ট-২ সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড এ এনএম জাহাঙ্গীর কবির । পঞ্চম সেশনের প্রবন্ধের বিষয় ছিল মার্কেটিং এন্ড ট্যুরিজম। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত স্বনামধন্য গবেষক ও শিক্ষাবিদরা তাদের উপস্থাপিত প্রবন্ধে-বর্তমান বিশ্বের প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসায়িক উদ্ভাবন, টেকসই উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ দিক নির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করেন। ব্যবসায়িক চিন্তাধারা এখন আর শুধু মুনাফাভিত্তিক নয়, তা আজ বিশ্বজনীন টেকসই উন্নয়নের অংশ। আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, উদ্যোক্তা উন্নয়নে প্রযুক্তির প্রভাব এবং পরিবেশ বান্ধব ব্যবসা মডেল- যেগুলোর সবই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক। বক্তারা বলেন, একবিংশ শতাব্দীর ব্যবসা কেবল আর্থিক সমৃদ্ধি নয় বরং সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল হতে হবে।কনফারেন্স সম্পর্কে ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আমিরুল ইসলামের মন্তব্য- এই কনফারেন্সের মাধ্যমে পাবিপ্রবি আবারও প্রমাণ করলো আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পাঠদান ছাড়াও নতুন ধারার গবেষণা ও জ্ঞান বিনিময়ের একটি প্রতিশ্রুতিশীল মঞ্চ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছি। এটি কেবল একদিনের কনফারেন্স নয় বরং এটি একটি দৃষ্টিভঙ্গি যা আমাদের ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত, নীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে টেকসই ও উদ্ভাবনী করে তুলতে সাহায্য করবে। তার মতে- আজকের দিনের ব্যবসা পরিচালনা তথা সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিভিন্ন ধাপের সমস্যা ও সম্ভাবনা আমরা জানতে পেরেছি। তরুন প্রজম্মকে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা পালন করবে এই আয়োজন। উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সহায়তা করবে। শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনের জ্ঞান অর্জন তথা একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি আধুনিক বিশ্বের নতুন নতুন ব্যবসা ও প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সাহসী হবে। গবেষকদের গবেষণার দিগন্ত প্রসারিত করেছে, শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের প্রস্তুতি দিয়েছে, ব্যবসায়ীদের নতুন প্রযুক্তি ও কৌশলের ধারণা দিয়েছে । কনফারেন্স নিয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. ড. নজরুল ইসলামের মন্তব্য- ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের আওতাভূক্ত শিক্ষকরা নতুন গবেষণার দিকনির্দেশনা পাওয়ার পাশাপাশি আধুনিক ব্যবসা, প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কে হালনাগাদ ধারণা পেয়ে নতুন গবেষণা করতে উৎসাহবোধ করবেন। পাঠ্যক্রম সমৃদ্ধ করতে পারবেন। এ ধরনের কনফারেন্স থেকে ব্যবসায়ীরা নতুন প্রযুক্তির ব্যবসা শেখা, টেকসই ব্যবসায়িক মডেল সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ট শিক্ষকদের মতে, এ ধরনের কনফারেন্স আয়োজন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সক্ষমতা ও উদ্যোগি মানসিকতার প্রমাণ মিলেছে। বিশ্ববিদ্যলয়ের নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় নবীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ভবিষ্যতে আরও বড় সভা, সেমিনার আয়োজন করা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি আন্তরিক। কর্তৃপক্ষ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা করতে উৎসাহ এমনকি তাগাদা দিচ্ছেন। শিক্ষকদের মতে এই আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের নেটওয়ার্কিং বাড়বে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে যৌথ অংশগ্রহণ ও ভবিষ্যৎ প্রকল্প গ্রহণ সহজ হবে। পাবনার একজন বিশিষ্ট গবেষকের মতে, জাতীয় কনফারেন্সের কারণে দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনামধন্য শিক্ষক-গবেষকদের আগমন ঘটেছিল। যারা দেশ-বিদেশের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেছেন, গবেষণা করেছেন, শিক্ষকতা করেছেন; তাদের মতো আলোকিত মানুষদের আগমনের কারণে পাবনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কারণ, উদ্দেশ্য তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিম সম্পর্কে স্থানীয় মানুষ সচেতন হচ্ছে। এই ধরণের সভা সেমিনার কনফারেন্স নিয়মিত অনুষ্ঠিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোয় স্বল্প-দিনেই পাবনা-বাসীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন হবে। তরুন প্রজম্ম আধুনিক ব্যবসা, প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতন হবেন। এই ধরনের উচ্চমানের একাডেমিক ইভেন্টের ফলে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে জ্ঞান ও গবেষণামুখী চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটার পাশাপাশি দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হওয়া যায়। এই গবেষকের মন্তব্য থেকে বলা যায়, কনফারেন্সটি শুধু একাডেমকি গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ নেই, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, গবেষণার পরিসর, শিক্ষার্থীদের মননে এক ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই আয়োজন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথে আরেকধাপ এগিয়ে নিয়েছে। কনফারেন্সের উদ্বোধনী বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস. এম আব্দুল-আওয়াল জানান- আগামী জুনে আরও একটি জাতীয় কনফারেন্স আয়োজন করা হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, গবেষকদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা একটি সেল তৈরির কাজ চলমান। উপাচার্য সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছেন। শিক্ষার্থীদের মতে-উপাচার্যের দূরদর্শিতা, নেতৃত্ব গুন ও একাডেমিক অগ্রগতির প্রতি দায়বদ্ধতার প্রকাশ দেখেছি এই কনফারেন্সে। পাশাপাশি উপাচার্যের একাডেমিক উৎকর্ষের প্রতি অঙ্গীকারের প্রমাণ মিলেছে। তাঁর দিক নিদের্শনায় বিশ্ববিদ্যালয় স্বল্পদিনেই গৌরবময় অবস্থানে পৌছাবে। উপাচার্যের দৃঢ় নেতৃত্ব, বিচক্ষণতা, আধুনিক চিন্তাধারা ও শিক্ষাবান্ধব মনোভাবের কারণে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান ও গবেষণার তীর্থস্থান হিসেবে গড়ে উঠবে । লেখক-মোঃ ফারুক হোসেন চৌধুরীঅতিরিক্ত পরিচালক, জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তর। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ইমেইল: [email protected]
.png)
এফবিসিসিআই -এর সংস্কার কেন জরুরি?
মতামতঃ আতিকুর রহমান ৫ই আগষ্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বাণিজ্য সংগঠন "বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি (এফবিসিসিআই) " এর সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার হয় বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদ - এফবিসিসিআইএ'র নেতৃত্বে বাংলাদেশের বঞ্চিত ও শোষিত ব্যবসায়ীবৃন্দ। কেননা বিগত ১৬ বছর এফবিসিসিআই কে একটি অকার্যকর ও দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে বিগত সরকার। যার ফলশ্রুতিতে ব্যবসায়ীরা হয়ে পড়ে অভিভাবকহীন এবং সাধারণ উদ্যোক্তারা জিম্মি হয়ে পড়ে বিগত সরকারের আর্শীবাদপুষ্ট সিন্ডিকেটের কাছে। বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদের নেতৃবৃন্দ জাকির হোসেন নয়ন, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী খোকন, জাকির হোসেন ও আতিকুর রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ চেম্বার ও এসোসিয়েশনের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবিসমূহ দৃঢ়তার সাথে ব্যক্ত করেন। সফল আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের দোসর পরিষদ ভেঙ্গে প্রশাসক নিয়োগে সমর্থ হন। বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদ -এফবিসিসিআই বেশ কয়েকটি সভা আহবান করে এবং উক্ত সভায় সকল এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাব ও লিখিত মতামত চাওয়া হয়। চেম্বার ও এসোসিয়েশন থেকে জমাকৃত প্রস্তাবনা থেকে সংকলন করে "বৈষম্য বিরোধী সংস্কার পরিষদ - এফবিসিসিআই" এর পক্ষ থেকে এফবিসিসিআই এর প্রশাসক জনাব হাফিজুর রহমান ও মহাপরিচালক, বাণিজ্য সংগঠন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর কাছে লিখিত ভাবে পেশ করেন এবং মাননীয় বাণিজ্য উপদেষ্টা বশির উদ্দিনের সাথে কয়েক দফা সাক্ষাৎ করে সংস্কারের বিষয়ে পরিষদের জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করেন। সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও আলোচনায় স্পষ্ট দাবী জানান যে, দেশের অর্থনৈতিক স্হিতিশীলতা, বৈষম্যহীন এফবিসিসিআই গঠন ও স্পল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এফবিসিসিআই সংস্কার জরুরি। সরকার ব্যবসায়ীদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং এটি শেষ পর্যায়ে। কিন্তু অতীব দুঃখের সাথে বলতে হয় একটি স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিগত দিনের ন্যায় এটাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। তারা বছরের পর বছর এফবিসিসিআই -এর বিভিন্ন পদ ব্যবহার করে সুযোগ সুবিধা নিয়েছে। কোন ভাবেই তারা চায় না নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হোক।-গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবঃ১। মোট পরিচালকের সংখ্যা ৮০ থেকে ৫০ এ নিচে নামিয়ে আনা। মনোনীত পরিচালকের সংখ্যা ৩৪ থেকে সর্বোচ্চ ১২ তে নামিয়ে আনা, ২। সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি, সিনিয়র সহ সভাপতি ও সহ সভাপতি নির্বাচিত হওয়া, ৩। টানা দুবার পরিচালক হওয়ার পর একবার বিরতি দেয়া।সংস্কার কেন জরুরি?বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসএম ই খাতের অবদান প্রায় ৩২ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে, দেশে ৭৮ লাখের বেশি কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটি মোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ৯৯ শতাংশের বেশি। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশ হয় এসএমই খাতে। এই খাতে আড়াই কোটির বেশি জনবল কর্মরত। কিন্তু এ সকল উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ বা ঋণ প্রাপ্তি খুবই জটিল এবং সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া কিন্তু ব্যাংক লুটেরা কতিপয় ব্যবসায়ী বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন ও এফবিসিসিআই এর পদ পদবী ব্যবহার করে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে আত্নসাৎ করেছে এবং বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকা থেকে ভর্তুকি দিয়ে বছরের পর বছর এ সকল ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা ব্যাংক থেকে ঋণ পায় না। সরকারের রাজস্ব আহরণের উল্লেখযোগ্য হার আসে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প ও সেবা খাত থেকে।এফবিসিসিআই এর বিগত ৬ টি কমিটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রায় ৪০ শতাংশ পরিচালক বারবার পরিচালক পদে নমিনেশন পেয়েছেন। কারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ার কারণে একই লোক সরকারের অনুগত ও সিন্ডিকেটের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন পদ ও সুযোগ সুবিধা বাগিয়ে নিতেন। নতুন ও কার্যকরি, প্রকৃত ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বের কোন সুযোগ দেয়া হতো না বরং পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হতো।বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিল ভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। বিগত সরকারের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় ২৬ টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রদত্ত এসকল ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যান হয়েছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতারা।অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে বাংলাদেশের মত ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে ৬১ টি ব্যাংকের কোন প্রয়োজন নাই। সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহন করে বেসরকারী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন এ রকম নজির ও স্হাপন করেছেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। বেসরকারি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইন্সুরেন্স কোম্পানি, বেসরকারী টেলিভিশন, এফ এম রেডিও, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারী মেডিকেল কলেজ , বিদ্যুৎ উৎপাদনের লাইসেন্স ও বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে অলিগার্ক হিসাবে গড়ে ওঠেছে বিগত সরকারের আর্শীবাদ পুষ্ট কিছু ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। কিন্তু সংগঠন বা ফেডারেশনের সাধারণ সদস্যদের কাছে তাদের কোন দায়বদ্ধতা ছিলোনা, তাদের আনুগত্য ছিল বিগত সরকারের প্রতি, দুর্নীতিগ্রস্হ এমপি ও মন্ত্রীদের প্রতি এবং কিছু প্রভাবশালী পরিবারের প্রতি।।বিগত সরকারের ভুল মুদ্রা নীতি ও অর্থ ব্যবস্হার কারণে বাংলাদেশে বৈদেশিক রিজার্ভের ব্যাপক ঘাটতি হয়, তখন এ সকল ব্যাংক মালিক ও অলিগার্ক গ্রুপ নিজেদের স্বার্থে ব্যাংক অন্য ব্যবসায়ীদের এলসি বন্ধ করে তাদের নিজেদের এলসি চালু রাখে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে, অনেক ফ্যাক্টরি কাঁচামালের অভাবে বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। অথচ ব্যাংক ও ব্যাংক মালিকরা পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে সকলকে আনুপাতিক হারে এলসি খোলার সুযোগ দেয়া উচিৎ ছিল। ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ তখন নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত ছিল, সদস্যদের বা ৪.৫ কোটি ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি।বিগত সরকারের সময় রাজনৈতিক নেতৃত্ব, আমলা ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ মিলে একটি সুবিধাবাদী অলিগার্ক গোষ্ঠী গড়ে তোলে। এরা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে কিভাবে আওয়ামী শাসনকে টিকিয়া রাখা যায় এটায় ছিল এদের কাজ। যা আমরা ২০২৪ সালের তথাকথিত জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রাক্তন সরকারপ্রধানের সাথে মিটিং ও জুলাই -আগষ্ট গণ আন্দোলনের সময় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের ভূমিকা থেকে স্পষ্ট দেখতে পায়। নূন্যতম মানবতাবোধ না দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থের কারণে গণহত্যাকারী শাসকের লেঁজুড় বৃত্তি করে প্রধানমন্ত্রী অফিসের মিটিং এ যেয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে আমৃত্যু পাশে থাকার, ফ্যাসিজমকে টিকিয়ে রাখতে পত্রিকা, টেলিভিশন সহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যবহার করে মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা চালানো সহ বিভিন্ন সহযোগিতা করেছেন।ব্যবসায়ী নেতা ও এফবিসিসিআই এর মূল কাজ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সরকারের সাথে দরকষাকষি করা, নীতি সহযোগিতা আদায় করা। অথচ বিগত ১৬ বছর এফবিসিসিআই ক্ষমতাশীল দলের অঙ্গ সংগঠন হিসাবে ভূমিকা পালন করেছে।বাংলাদেশ নভেম্বর ২০২৬ এ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ লাভ করবে। এলডিসি গ্রাজুয়েট হওয়ার পর বাংলাদেশ অনেক গুলো নতুন চ্যালেন্জের মুখে পড়বে। স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। কিন্তু এলডিসি থেকে চূড়ান্ত উত্তরণের পর এই সুবিধাগুলো আর থাকবে না। সম্প্রতি এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রকাশিত ‘Expanding and Diversifying Exports in Bangladesh: Challenges and the Way Forwards’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে রপ্তানি পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হলে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫.৫ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাভিশনের গুগল নিউজ ফলো করতে ক্লিক করুনতাছাড়া এলডিসিভুক্ত হওয়ার কারণে ডব্লিউটিওর ‘Agreement on Trade Related Aspects of Intellectual Property Rights (TRIPS)’ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেধাস্বত্ব হিসেবে ওষুধ আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানকে কোনো অর্থ প্রদান করতে হয় না। ট্রিপস চুক্তি অনুযায়ী ২০৩৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত এলডিসিভুক্ত দেশগুলো এ সুবিধা ভোগ করতে পারবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্য সংগঠনের অনেক ভূমিকা রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের ( মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ) এফটিএ করা জরুরি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের রপ্তানি ঝুঁকিতে পড়বে, বিদ্যমান রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে অগ্রাধিকার মূলক বাণিজ্য চুক্তি ( পিটিএ) হলেও করা জরুরি। পোশাক রপ্তানিতে আমাদের প্রতিযোগি দেশ ভিয়েতনামের প্রায় ৪০ টির অধিক দেশের সাথে এফটিএ রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের কোন দেশের সাথে এফটিএ নেই শুধু ভুটানের সাথে পিটিএ রয়েছে। এ টা প্রমাণ করে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরনের প্রস্তুতি খুবই সামান্য।বাংলাদেশের রপ্তানি বাস্কেট বৈচিত্র্যময় করার বিষয়ে অনেক কথা শোনা যায় কিন্তু কার্যকর কোন ভূমিকা নিতে দেখা যায় না। আমাদের রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশ তৈরি পোশাক খাতের উপর নির্ভরশীল। এটি যেকোন দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো না। অর্থনৈতিক স্হিতিশীলতা, বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে রপ্তানি খাতের বৈচিত্রময়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গত বছর এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এক্সপান্ডিং অ্যান্ড ডাইভারসিফাইং এক্সপোর্টস ইন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড দ্য ওয়ে ফরোয়ার্ড' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে বৈষম্যমূলক নীতিমালার কারণে দেশের রপ্তানি খাত বৈচিত্র্যহীন।এফবিসিসিআই এর কোন কার্যকর গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাই। রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন নীতি সহায়তা প্রাপ্তির জন্য গবেষণার মাধ্যমে কোনটি ব্যবসায়ীদের জন্য লাভজনক হবে সে বিষয়ে সুপারিশ করা। এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার জন্য প্রয়োজন শিক্ষিত, দক্ষ ও বিভিন্ন খাতের নেতৃত্ব প্রদানকারী প্রকৃত ব্যবসায়ীরা যেন বাণিজ্য সংগঠন বা এফবিসিসিআইকে পরিচালনা করতে পারে এমন একটি বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা । যা নতুন অলিগার্ক সৃষ্টি করবে না, বরং ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ খাতসহ সকল খাতের জন্য কাজ করবে, এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশের অর্থনীতিকে। সুখী সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে

মে দিবসের অঙ্গীকার হোক বৈষম্যহীন কাজ করার নিশ্চয়তা
আবছার উদ্দিন অলি: বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত পোশাক কারখানায় নিয়োজিত ব্যাপক শ্রমিক প্রাণহানীর ঘটনায় আমাদের শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এভাবে লাশের মিছিল আর কত লম্বা হবে। অপরাধীরা আর কত ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকবে। এদের বিচার কি হবেনা? এরা কি এতই ক্ষমতা ধর? বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে, শ্রমিকের প্রাণ যাচ্ছে। শোক প্রকাশ, শোক সভা, আর তদন্ত কমিটি বক্তব্য, বিবৃতি আর সেই সাথে রাজনীতি সমান তালেই চলছে। অপরাধী আড়ালে থেকে যাচ্ছে। তাই এবারের মে দিবসের অঙ্গীকার হোক বৈষম্যহীনভাবে কাজ করার নিশ্চয়তা চাই। ১ মে, মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরের শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি ও ৮ ঘন্টা শ্রম সময় নির্ধারণসহ অন্যান্য দাবিতে এক সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়। হে মার্কেটে গণজমায়েতেরও আয়োজন করে। এ সময় শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। পরবর্তী শ্রমিকদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১ মে-কে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছর ১ মে বিশ্বব্যাপী শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার ও ঐক্য সমুন্নত রাখার প্রত্যয়ে লাল হরফে লেখা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অবিস্মরণীয় দিন। বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষের মুক্তি ও অধিকার অর্জনের অফুরন্ত অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এ ১ মে। শ্রমিক শোষণ ও নির্যাতন প্রতিরোধে আত্মত্যাগের এক মহান আদর্শে উজ্জীবিত এ দিন। দুঃখজনকভাবে ১০০ বছর আগেকার সেই সমস্যার সমাধান আজও হয়নি। বরং সেই একই কায়দায় এবং কৌশলে শ্রমিকরা নিগৃহীত শোষিত বঞ্চিত। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশগুলোর শ্রমিকদের অবস্থা সত্যিই নিদারুণ কষ্টের। হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের পরও শ্রমিকরা এখনো অর্ধাহারে কিংবা অনাহারে রাত্রি যাপন করে। অনেক দেশে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেয়া হয় না। আমাদের দেশেও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন তাদের মজুরি সংক্রান্ত দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি আমাদের দেশে এখনো শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশেও প্রতি বছর মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। এই উপলক্ষে থাকে সভা সমাবেশ। এই উপলক্ষে আয়োজিত সভা-সমাবেশে সারগর্ভ বহু বাণী দেন জাতীয় পর্যায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা। কিন্তু পর দিন থেকেই আবার গতানুগতিক জীবন স্রোতে ভেসে চলে চলে সবাই। তাই আজও দেশের সরকারী অফিস, আদালত, প্রতিষ্ঠান আর কলকারখানার উৎপাদনমুখী কর্মকান্ডের চেয়ে দিনগত ঝরে যাচ্ছে বহু অমূল্য প্রাণ, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকারখানা। অন্যদিকে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না। ৮ ঘন্টার বেশি কাজ করতে হচ্ছে। বিভিন্ন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান এর প্রকৃত উদাহরণ। অন্যদিকে শিশু শ্রমের প্রথা ও প্রচলিত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োজিত এসব শ্রমিক নানাভাবে শোষিত হচ্ছে। তাদের জীবন হচ্ছে হুমকির সম্মুখীন। তারা অপুষ্টির শিকার, অমানবিক ব্যবহারের শিকার, অনেক ক্ষেত্রে বৈষম্যেরও শিকার। আমাদের শ্রমিক সমাজ এখনো কতটা যে নিগৃহীত তা বিভিন্ন শিল্প কারাখানার দিকে লক্ষ্য করলেই স্পষ্ট হয়ে যায়। গার্মেন্টস শিল্পে এ মাত্রাটা বেশি। কিন্তু এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের আস্থা খুবই শোচনীয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ অরুচিসম্পন্ন জায়গায় শ্রমিকরা এখানে গতর খাটুনি খাটে। কিন্তু মজুরির বেলায় কর্পদহীন। দেশে এখানো গার্মেন্টস রয়েছে, যেখানে শ্রমিকদের তিন মাসের পারিশ্রমিক বাবদ এক মাসের বেতন ধরিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া গার্মেন্টস পেশায় নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এখানে শ্রম দিতে এসে নারীরা ধর্ষিত হওয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে এবং আগুনে পুড়ে, ভবন ধসে প্রাণহানী ঘটে চলেছে। এ অবস্থা গার্মেন্টস শিল্প হতে শুরু করে অনেক জায়গা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই যদি হয় শ্রমিকদের অবস্থা তাহলে মে দিবস পালনের স্বার্থকতা কোথায়। যদিও সরকারিভাবে বারবার বলা হচ্ছে আইনানুগতভাবে কারখানা পরিচালনা করার কথা, তবুও আজ পর্যন্ত এই অসঙ্গতিপূর্ণ ব্যবস্থা দূর হয়নি। আমাদের অধিকাংশ কলকারখানায় মে দিবস জাতীয়ভাবে স্মরণ করার পেছনে শ্রমিকদের সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেও কাজ করেছে। এই সঙ্গে মালিকদেরও শ্রমিকের ন্যায্য দাবির প্রতি সচেতনতা থাকার তাগাদা তাও মে দিবস থেকে উৎসারিত। তাছাড়া দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেখানে হরতাল নির্ভর সংস্কৃতির চর্চা, সেখানে মেহনতি মানুষ বিশেষ করে যাদের দিনে এনে দিনে খাওয়ার অবস্থা তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। শ্রমজীবী মানুষ এখনো পুঁজির শোষণ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। প্রতি বছর তারা মে দিবসে নতুন করে শপথ নেয়। তাদের নিজ নিজ দেশে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য দুনিয়ার মজদুর এক হও এক হও- এটা নিছক একটা শ্লোগান হয়। এটা শোষিত বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষের হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত ব্যঞ্জনাময় ধ্বনি। আমরাও চাই, দুনিয়ার মজদুর ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিশ্ব শান্তি সমৃদ্ধির পথে হোক সহায়ক শক্তি। বঞ্চনার মাঝে সব পাওয়ার পরিপূরক দূর হোক শ্রমিক-মালিক বিশাল ব্যবধান আর বৈষম্য। সাম্যের পতাকাতলে সামিল হোক সবাই ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের জয়গান গেয়ে। লেখক: সাংবাদিক ও গীতিকার, চট্টগ্রাম।

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা: শ্রমিকের রক্তে লেখা ইতিহাস কি আজও মূল্যহীন?
মো. মনিরুজ্জামান মনির: রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তিক শ্রমিক সংগঠন, অব্যবহৃত শ্রম আইন ও অনানুষ্ঠানিক খাতে আটকে থাকা কোটি শ্রমজীবী মানুষের করুণ বাস্তবতায় মহান মে দিবস আজ প্রশ্নবিদ্ধ। ইতিহাসের পটভূমি: শিকাগো থেকে আজকের ঢাকা- ১৮৮৬ সালের ১ মে। শিকাগো শহরের হে মার্কেটে হাজারো শ্রমিক জড়ো হয়েছিলেন আট ঘণ্টা কর্মদিবস প্রতিষ্ঠার দাবিতে। শান্তিপূর্ণ সেই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত হয় শ্রমিকরা। এই আত্মত্যাগের মাধ্যমেই বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আন্দোলনে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হয়। সেই দিনটির স্মরণেই বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস মে দিবস। বাংলাদেশেও এ দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়। থাকে র্যালি, আলোচনা, ছুটি। কিন্তু বাস্তবতা হলো- এই দেশে শ্রমিক শ্রেণির একটি বিশাল অংশ এখনও কোনো ধরনের শ্রম অধিকার ভোগ করে না। শিকাগোর আত্মত্যাগ আজ ঢাকার কলকারখানার বাস্তবতায় নির্বাসিত। বাংলাদেশের শ্রমজীবী জনগোষ্ঠী: সংখ্যায় বিশাল, মর্যাদায় ক্ষুদ্র- বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ (২০২২) অনুসারে, দেশে আনুমানিক ৬ দশমিক ৮ কোটি শ্রমজীবী মানুষ রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ করেন অনানুষ্ঠানিক খাতে, যেখানে নেই কোনো লিখিত চুক্তি, স্বাস্থ্যবীমা, কিংবা পেনশন সুবিধা। গার্মেন্টস, নির্মাণ, পরিবহন ও কৃষিখাতের শ্রমিকরা অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা, নিম্নমজুরি এবং অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হন। ২০২৩ সালে গাজীপুরে এক পোশাক কারখানায় আগুনে নিহত হন ১০ জন শ্রমিক। তদন্তে বেরিয়ে আসে, সেফটি এক্সিট তালাবদ্ধ ছিল। অথচ আইন অনুযায়ী, এটি একটি গুরুতর অপরাধ। শ্রম আইন: আইন আছে, প্রয়োগ নেই- ২০০৬ সালে প্রণীত এবং ২০১৩ সালে সংশোধিত বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার, ধর্মঘটের অধিকার, ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তাছাড়া ২০১৮ সালে শ্রম আইন পুনরায় সংশোধনের সময় আইএলওর সাথে সামঞ্জস্য রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। তবে বাস্তবে এসব অধিকার প্রায় অকার্যকর। শ্রমিক সংগঠন করতে গিয়ে বহু শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। আদালতে শ্রম বিরোধ নিষ্পত্তিতে গড়ায় ৩-৫ বছর। আইএলও কমপ্লেইন্টস ডাটাবেজে বাংলাদেশ ২০১৪-২০২৩ পর্যন্ত অন্তত ১২ বার শ্রম অধিকারের লঙ্ঘনের অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির শিকার শ্রমিক সংগঠন: বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বড় রাজনৈতিক দলের নিজস্ব শ্রমিক শাখা রয়েছে। ফলে শ্রমিক সংগঠনগুলো স্বতন্ত্রভাবে শ্রমিক স্বার্থ নিয়ে নয়, বরং দলের স্বার্থে পরিচালিত হয়। ১৯৮০’-র দশকে যেখানে একটি শক্তিশালী শ্রমিক ঐক্য গড়ে উঠেছিল, বর্তমানে তা ভেঙে পড়েছে অন্তর্দ্বন্দ্ব, বিভাজন ও নেতাদের সুবিধাবাদীতার কারণে। একই কারখানায় আজ তিনটি সংগঠন। একটির নেতৃত্বে আওয়ামী ঘরানার, অন্যটি বিএনপি, তৃতীয়টি বাম। এই বিভক্তির ফাঁকে শ্রমিকরা হারায় তাদের কণ্ঠস্বর। পরিসংখ্যান যা অস্বস্তিকর বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি: আইএলও (২০২৩): বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতে ৪৮ শতাংশ শ্রমিক অতিরিক্ত সময় কাজ করতে বাধ্য হন।বিলস রিপোর্ট (২০২২): গড়ে প্রতি মাসে একজন শ্রমিক কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মারা যান।লেবার ফোর্স সার্ভে: প্রায় সাড়ে তিন কোটি নারী শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ মাতৃত্বকালীন ছুটি পান।ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রার অফিস (২০২৩): শ্রমিকদের ইউনিয়ন নিবন্ধনের আবেদনের ৪৩ শতাংশ অগ্রাহ্য করা হয় রাজনৈতিক কারণে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মে দিবসের তাৎপর্য কোথায়? প্রতি বছর মে দিবসে শোভাযাত্রা হয়, ফুলের তোড়া দেওয়া হয় শহীদ মিনারে, উচ্চারিত হয় শ্রমিক সংহতির প্রতিশ্রুতি। কিন্তু এরপর? বাকিটা বছর চলে শ্রমিক নিপীড়নের চক্র। শ্রমিকরা নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ন্যায্য মজুরি ও স্বাস্থ্যসেবার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করেন। অথচ এই শ্রমিকদের ঘামেই দাঁড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতি। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ‘বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত থেকেই আসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশ। অথচ এই খাতের শ্রমিকরাই সবচেয়ে অবহেলিত।’ সমাধানের পথ কী? শ্রম আইন বাস্তবায়নে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু আইন থাকা নয়, তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি; শ্রম আদালতের সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশন প্রয়োজন। দ্রুত বিচার নিশ্চিতে সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে; রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, স্বতন্ত্র শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলা জরুরি। নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে; অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য একটি বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে তাদের স্বাস্থ্য, আবাসন ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে; আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ বাস্তবায়নে একটি নিরপেক্ষ মনিটরিং সেল গঠন করা উচিত। যেখানে থাকবে সরকার, শ্রমিক প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ। মে দিবস যেন স্মারকই না হয়, হয় শপথের দিন: মে দিবস শুধু অতীতের গৌরব নয়, এটি ভবিষ্যতের প্রেরণাও। বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষ আজও রক্ত ঝরাচ্ছে অন্যায় শোষণের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের কণ্ঠ আজও চাপা পড়ে রাজনৈতিক লাঠিয়াল বাহিনীর নিচে। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার- আইন দিয়ে, নীতি দিয়ে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা দিয়ে। আমাদের প্রজন্ম যদি শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের শপথ না নেয়, তাহলে মে দিবস আমাদের কাছে কেবল একটি ইতিহাস হবে—যা আমরা প্রতি বছর স্মরণ করবো, কিন্তু তার শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবো। লেখক: কলামিস্ট, সভাপতি, বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি

বৈশাখ মিশে আছে বাঙালির হৃদয়ে-অন্তরে
মো. গনি মিয়া বাবুল: পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ, চৈত্রের শেষ বৈশাখের শুরু। এই শেষ চৈত্র আর পহেলা বৈশাখ নিয়ে যে উৎসব আয়োজন, তা বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি। বাঙালির নতুন বছরের প্রথম দিন। মোঘল সম্রাট আকবর তার শাসনামলে ফসলের খাজনা তোলার সুবিধার্থে বাংলা বছরের হিসাব শুরু করেন। সেই থেকে বাংলা নববর্ষ বরণ শুরু হয়। পহেলা বৈশাখ ধর্ম বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে সকল সম্প্রদায়ের এক মিলনের স্মারক। সময় পরিক্রমায় নববর্ষ আজ পরিণত হয়েছে বাঙালির জীবনের সার্বজনীন সবচেয়ে বড় উৎসবে। বাঙালি জাতি সারাটা বছর অধীর আগ্রহে এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে। পহেলা বৈশাখ প্রকৃতির নিয়মে ঘুরে আসে। দেশজ সংস্কৃতি প্রভাব বিস্তার করে একটা সুস্থ ও সচেতন মানস গঠনের দায়িত্ব নেয়। সংস্কৃতির মধ্যে অবগাহন করেই মানুষ নিজের ব্যক্তিত্বের স্পষ্ট একটি রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করেন। নিজের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা যে কোন জাতিকে বড় হওয়ার প্রাথমিক দীক্ষা দেয়। বাঙালির জীবনে বাংলা নববর্ষ একটি সচেতন প্রতিফলন। মূলত বাংলা নববর্ষ উদযাপনের মধ্যে দিয়ে বাঙালি জাতি তার নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে। বাংলা নববর্ষের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। সচেতন জাতির পরিচয় প্রকাশিত হয়, বিচিত্র সাংস্কৃতির রূপের মধ্য দিয়ে। বাংলা নববর্ষ বাঙালি সংস্কৃতির সেই পরিচয়বাহী। নববর্ষ মানুষকে সচেতন করে তার সাংস্কৃতিক চেতনার স্বপন্দনে। জাতীয় জীবনে বর্ষ বরণের প্রথম দিনে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর অর্থ নতুনকে বরণের সাগ্রহ মনোভাব। বাঙালি একটি ভাষাভিত্তিক জাতি। যাদের জন্ম বঙ্গে, মাতৃভাষা বাংলা, মূলত তারাই বাঙালি। এই বাঙালির বড় উৎসব বাংলা নববর্ষ। বিগত বছরের দুঃখ, বেদনা, আনন্দ, উৎসবের স্মৃতিচারণ পরিহার করে নতুন বর্ষকে স্বাগত জানানো হয়। বৈশাখে উৎসবের ঢল নামে। মেলা বসে গ্রামে গ্রামে। নানা ধরনের হাতের তৈরী দ্রব্য ও খাবারের মেলা যেন গ্রামবাংলার মানুষের প্রতিচ্ছবি। তাদের জীবন যেন গ্রামবাংলার মানুষের প্রতিচ্ছবি। তাদের জীবন যেন খন্ড খন্ড হয়ে ধরা পড়ে তাদের হাতের কারু কাজে। মাটির পুতুল, পাটের শিখা, তালপাতার পাখা, সোলার পাখি, বাঁশের বাঁশি, ঝিনুকের ঝাড়, পুঁতিমালা, কত না অদ্ভুত সব জিনিসের সমাবেশ ঘটে সে মেলায়। চোখে না দেখলে যেন বিশ্বাসই হয় না বাংলার মানুষের জীবন এত সমৃদ্ধশালী। বাংলার মানুষ গরীব হতে পারে, দারিদ্র্যের নিস্পেষণে তারা জর্জরিত হতে পারে কিন্তু এসব দুঃখ কষ্ট তাদের জীবনকে আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। নববর্ষ বছরটির জন্যে আশার বাণী বহন করে নিয়ে আসে। তাই নববর্ষ আমাদের প্রাণে জাগায় আশার আলো ও উদ্দীপনা। এ জন্য আমাদের কাছে পহেলা বৈশাখ, পারসিকদের কাছে নওরোজ এবং ইংরেজদের কাছে হ্যাপি নিউ ইয়ার বিশেষ আনন্দময় দিবস। বাঙালি জীবনে যেমন ছিল পূণ্যাহ অনুষ্ঠান তেমনি হালখাতা অনুষ্ঠান। জমিদারি প্রথা বাতিলের সাথে পূণ্যাহ অনুষ্ঠান বিলুপ্ত হয়েছে কিন্তু হালখাতা অনুষ্ঠান সগৌরবে বিরাজমান। নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে উদযাপিত হয় হালখাতা উৎসব। বিগত বছরের ধার-দেনা শোধের পর্ব শুরু হয় এই দিনে। এর মধ্যে শুধু ব্যবসায়িক লেনদেন নয় হৃদয়ের বিনিময়ও ঘটে। ব্যবসায়িক লেনদেনের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখে মানুষে মানুষে সৌহার্দ্যতা বাড়ে। আজকাল পহেলা বৈশাখ উদযাপনের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে বিশেষ করে নাগরিক জীবনে। শহরে শহরে মুক্তাঙ্গণে কবিতা পাঠ, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি কর্মসূচী পালিত হয়। ঢাকায় রমনার বটমূলে এই অনুষ্ঠান বিশেষ ব্যাপকতা লাভ করেছে। শুধু নাচ-গানই নয়, বাঙালির বহুকালের অভ্যাস, পান্তা ভাত ও ইলিশ ভাজি খাওয়া ওখানে চালু আছে বহু বছর থেকে। বৈশাখের তথা বাংলা নববর্ষের চেতনা বাঙালির হৃদয়ে অন্তরে মিশে আছে, কিন্তু পরিতাপের বিষয় বাংলা নববর্ষের ব্যবহারিক প্রয়োগ আমাদের জীবনে প্রায় অনুপস্থিত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাংলা সন কিংবা বাংলা তারিখের ব্যবহার নেই বললেই চলে। স্কুল, অফিস, আদালত, ব্যাংক-বীমা, বিদেশ ভ্রমণের তারিখ নির্ধারণ ইত্যাদি কোন পর্যায়েই বাংলা তারিখ ব্যবহৃত হয় না। পৃথিবীর বুকে একমাত্র যে দেশের মানুষ তাদের ভাষা রক্ষার জন্যে আন্দোলন করে জীবন দিয়েছে, যে দেশে প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ পালিত হয় জমজমাট পরিবেশে, আনন্দঘন উৎসবে। সে দেশেই বাংলা সন ও বাংলা তারিখ উপেক্ষিত! এই অবস্থায় পহেলা বৈশাখের চেতনা তথা বাঙালির সংস্কৃতি আমাদের আদালতসহ দেশের সর্বত্র চালু করা প্রয়োজন। সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ও বাংলা তারিখ ব্যবহার করা অপরিহার্য। লেখক: শিক্ষক, কবি, কলাম লেখক, প্রাবন্ধিক ও সমাজ সেবক, ঢাকা।

তারুণ্যের রঙিন বৈশাখ বাংলা নববর্ষ
আবছার উদ্দিন অলি: শুভ নববর্ষ। সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। বৈশাখ নিয়ে আসে, মানুষে মানুষে প্রীতি মিলন। নববর্ষের শুভবাণী, শুভ সম্ভাষন। আজকের এই দিনে ভরে উঠুক উৎসবে আনন্দে সবারি মন। বাংলার প্রকৃতি, বাংলার ইতিহাস, বাংলা নববর্ষ, স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা বীর বাঙালরি গর্ব, নতুন আশা বুকে নিয়ে কাটাবো এ জীবন। নতুন করে সুখেরি স্বপ্ন দেখে দেশের মানুষ, ভালো করে বাঁচার আশায় ভরে তোলে বুক। মাঠে মাঠে সোনা ফলে ভরে কিষানের মন। তারুণ্যের নতুন বৈশাখ বাংলা নববর্ষ। বাংলা নববর্ষ আসে নতুনের কেতন উড়িয়ে। এইতো বসন্তে প্রকৃতি নব সাজে আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। প্রকৃতির সেই উজ্জ্বলতার রং আমাদের মনেও লেগেছে। তাই বসন্তের শেষে বাংলা নববর্ষের সূচনায় প্রকৃতির সান্নিধ্য এসে উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে বাঙালি। পহেলা বৈশাখ বাঙালির জাতীয় উৎসব। সমাজে পুরাতন মানুষের নানা অচলায়তনের বাধা প্রবল। ক্ষুদ্র সংকীর্ণ নানা স্বার্থ কেবলই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, কপটতা কৃত্রিমতার বিকাশে বাতাস ভারি হয়ে যায়। উৎসব এই সব ক্ষুদ্র স্বার্থে সংকীর্ণতা ছাড়িয়ে সবার সাথে এক হওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। চিন্তার জড়তা বুদ্ধির আড়ষ্টতা তার স্বপ্নের দৈন্যতা ঘুচিয়ে তবে উৎসবের আঙিনায় প্রবেশ করা যায় উৎসবকে ঘিরেই সুযোগ ঘটে এসব অচলায়তন ভাঙার। এই বৈশাখে নতুন বরণের উদ্যাপন হোক প্রাণের উল্লাসে। বৈশাখী মেলা যেন প্রাণের মেলা দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার উপস্থিতি হয়ে উঠে আনন্দঘন এক সমাবেশ। এটি আমাদের জীবনের অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছে। পহেলা বৈশাখের সাথে মেলার রয়েছে সুনিবিড় সম্পর্ক। ঐতিহ্য হিসেবে এ এলাকার মানুষের কাছে পরিগণিত হয় নববর্ষের সমস্ত আনন্দ যেন মেলা পার্বনকে ঘিরে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রচুর লোকের সমাগম ঘটে কোথাও তিলধারণের ঠাই থাকে না এ মেলা সম্প্রীতির এ মেলার সুন্দরের। বাংলা নববর্ষ হল বাঙালি জাতির নতুন দিনের উৎসব এবং এই নববর্ষে প্রত্যেক বাঙালি দেশীয় সাজে সজ্জিত হয়ে নিজেকে রাঙিয়ে তোলে। নববর্ষ হচ্ছে অভিন্ন চেতনার উৎসব আমাদের এক হয়ে বাঙালি সংস্কৃতি লালন পালনের শিক্ষা দেয়। আনন্দ মনে থাকলেও অনেক সময় পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে তা প্রকাশ করা যায় না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে। জীবনের জন্য সব কিছু বাঁচার তাগিদে এগিয়ে যেতে হয়। সুখ শান্তি খোঁজে আমরা ক্রমাগত ছুঁটে চলেছি। নববর্ষ নতুন সেতু বন্ধন রচনা করে আমাদের পথ চলাকে সুন্দর করে তোলে। পুরনো সব ভুলে নতুনের জয়গান এখন সবার মুখে মুখে। আমাদের প্রতিটি দিন হোক নববর্ষের দিনের মত। নববর্ষের আনন্দ ছুঁয়ে যাক সবার হৃদয়। নববর্ষের সব আয়োজন সুন্দরের পক্ষে। শান্তির পক্ষে। জীবনের জন্য দেশের জন্য এমনকি সমাজের জন্য মঙ্গল কামনায়। নববর্ষ সার্বজনীন উৎসব। দল মত জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এই উৎসবে প্রাণের টানে মিলিত হয়। আমাদের সৃজনশীলতা, সৃষ্টিশীলতা উদারতার জয়গানে সাড়া দেবে। নতুন এই বাংলায় আসুন বাঙালির নববর্ষের উৎসবে মিলিত হই। সমস্যা অনেক আমরা জানি। তবে অনেক সমস্যার বিপরীতে উৎসব একটিই। তাই মিলনেই উৎসবের সার্থকতা। সমস্যার আবিলতাকে পিছনে ফেলে বৃহৎ ও মহৎ প্রণোদনায় জেগে উঠি। সংসারে বাইরে বৃহৎ পৃথিবী ও মহৎ জীবনের আস্বাদ লাভ করি। বাংলা নববর্ষ বাঙালির উৎসবের দিন। এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দিন। আজ নববর্ষ আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এ দিনকে নতুন করে ভেবেছি। কিভাবে বাঙালির নববর্ষের চেতনাকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করা যায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এদেশের মানুষ চিরকাল ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ থেকে উৎসব পালন করে চলেছে। এই উৎসব আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। পারস্পরিক বন্ধন সহমর্মিতা এদেশের মানুষকে এগিয়ে নিয়ে গেছে আগামীর পথে। চট্টগ্রামে ঢোলবাদনের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় দলীয় সংগীত, আবৃত্তি, নৃত্য মুকাভিনয়, যন্ত্রসংগীত, কবিতা পাঠের আসর, বর্ষ বিদায় শোভাযাত্রা চিরায়াত বাংলা গান, পাহাড়ি গান, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান, আধ্যাত্মিক সংগীত, লালনগীতি, বাউল, রংপুরের বাওইয়া, ভাটিয়ারী, বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, লোক সংগীতসহ নানারকম অনুষ্ঠানমালা ছিল বর্ষ বিদায় বর্ষবরণে। সবার সহযোগিতায় এ মেলা হয়ে উঠে আনন্দময়। নববর্ষের অঙ্গীকার হোক সূখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ। নতুন আলোর দিগন্তে আমাদের সম্ভাবনা পৌঁছে যাক একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে। বাংলা নববর্ষ আবহমান বাংলার প্রাণের উৎসব। আসুন আমরা মিলিত হই উৎসবের আনন্দে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন একটি বছর শুরু হলো, নতুনের জয় গান আর নতুন চিন্তা-চেতনায়। নববর্ষের অঙ্গীকার হোক ব্যক্তি গোষ্ঠী দল কিংবা কাউকে খুশি করা, আঘাত নয়, কাউকে আঘাত করা নয় আমাদের মূলমন্ত্র হোক সুন্দর বাংলাদেশ। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ সুখ, শান্তি আর আনন্দে ভালো ভালোই কাটুক, এই প্রত্যাশা করি। রঙিন বৈশাখে রঙিন হয়ে উঠুক আমাদের সবার জীবন। লেখক: সাংবাদিক ও গীতিকার

ব্যারিস্টার ফুয়াদের অশ্লীল বক্তব্যের নেপথ্যে কি?
মো. মনিরুজ্জামান মনির: অনেক দিন ধরেই সোস্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলছেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ ওরফে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তিনি প্রায়ই বিতর্কিত মন্তব্য করে মাঠ গরম করার চেষ্টা করছেন। তিনি কতটা সফল হয়েছেন কিংবা বিফল হয়েছেন, তা নিয়ে আলোচনার দাবি রাখে। কিন্তু অশ্লীল ভাষা ব্যবহারে তিনি বেশ পটু- এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। একজন বিজ্ঞ আইনজীবী হয়ে তিনি যে ভাষায় কথা বলছেন, তাতে সভ্য সমাজের মানুষ লজ্জিত না হয়ে পারবে না। তার মতো অশ্রাব্য ভাষায় শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্য কোনও দেশের রাজনীতিক কথা বলেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তার এই অশ্লীল ভাষা বাংলাদেশি রাজনীতিকদের ইমেজ ক্ষুণ্ন করছেন বলেই প্রতীয়মান হয়। যদিও বিষয়টি নিয়ে তার দল আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) কোন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বলে জানা যায়নি। কিছু দিন আগে ফুয়াদ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে নিয়ে বিরূপ (পত্রিকায় লেখার মতো না) মন্তব্য করেন। বিষয়টি নিয়ে আমাদের দেশের এক শ্রেণীর ভিউ ব্যবসায়ী ডলার কামানোর ধান্দায় ব্যস্ত। বিভিন্নজন বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করে সেগুলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়া- ফেসবুক, টুইটার (এক্স), ইউটিউবে এগুলোর অসংখ্য ভিডিও ভেসে বেড়াচ্ছে। ব্যারিস্টার ফুয়াদের অত্যন্ত নিম্নমানের- অরুচিকর এই বক্তব্যে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে খালেদ মহিউদ্দিনের ‘টকশো’তে কথা বলেছেন মেজর রেজা। এ সময় তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। ফুয়াদের বক্তব্যে যে সেনা কর্মকর্তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তা তিনি তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে তিনি সেনাবাহিনী নিয়ে ফুয়াদকে আপত্তিকর মন্তব্য না করার আহ্বান জানিয়েছেন। শুধু মেজর রেজা নয়, তার মতো এ দেশের সাধারণ মানুষেরও একই আহ্বান থাকবে। সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব। শুধু দেশ নয়, জাতিসংঘ মিশনেও তারা তাদের দক্ষতা, দায়িত্ববোধের প্রমাণ রেখে চলেছেন। খোদ জাতিসংঘ বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেছে। এর আগে রেলের ব্যবস্থাপনা ঠিক করার জন্য রেলের ডিজিকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে ২৪ ঘণ্টা পেটানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন ফুয়াদ। তার এই বক্তব্যও সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা তার বক্তব্যে ব্যথিত হন। তাকে রেলের ডিজির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায় বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি। এখন প্রশ্ন হলো ফুয়াদ কেন এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য করছেন? এখানে দুটি প্রশ্ন সামনে আসছে। প্রথমত, তিনি কী সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় থাকতে চান? দ্বিতীয়ত, তার এই বিতর্কিত বক্তব্যের পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য কি আছে? সেটা হতে পারে সমাজকে অস্থিতিশীল করা কিংবা কারো উদ্দেশ্য হাসিল করা। তবে, তার উদ্দেশ্য যা-ই হোক, তিনি যে ভাষায়, কথা বলছেন, তাতে মানুষ উত্তেজিত হতে পারে। এ থেকে মব পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এটা সমাজ-দেশের জন্য সুখকর নয়। শান্তিতে বসবাস করা এ দেশের মানুষের অধিকার এবং আমরা এটাই প্রত্যাশা করি। ফুয়াদ বলেন, “সেনাপ্রধানকে বলছি ক্যান্টনমেন্ট উড়ায়ে দিবো” এবং রেলওয়ে নিয়ে বলেন, “ডিজি রেলকে রাস্তায় ফেলে ২৪ ঘন্টা শুধু পিটান তাহলে রেল ঠিক হয়ে যাবে”। এই বক্তব্যের কারণে ফুয়াদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হওয়া উচিত। রাষ্ট্র যদি কোন আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে সেনাবাহিনী ও রেল প্রেমিক জনতা তার বিরুদ্ধে যে কোন সময় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া ফুয়াদ একজন আইনজীবী এবং রাজনীতিক। দুটোই অত্যন্ত মর্যাদাশীল পোস্ট। তার আচরণ অবশ্যই সুন্দর হওয়া উচিত। কেননা, রাজনীতিকরা হলেন এক ধরনের শিক্ষক। তাদের কাছ থেকে এ দেশের মানুষ অনেক কিছু শিখে থাকে। সেই শিক্ষক যদি হন বদমেজাজী, অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন, তাহলে তার কাছ থেকে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ কী শিখবেন? সহকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে তার ভাবমূর্তিই বা কী হবে? আশা করি ব্যারিস্টার ফুয়াদ বিষয়গুলো মাথায় রেখে ভবিষ্যৎ পথ চলবেন। বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না: বিশ্বের সম্মানজনক পেশাগুলোর মধ্যে অন্যতম আইন পেশা। বাংলাদেশে যারা এই পেশায় নিয়োজিত তাদের বলা হয় এ্যাডভোকেট বা উকিল। আমেরিকায় আইনজীবীদের বলা হয় এ্যাটর্নি। অস্ট্রেলিয়ায় তাদের বলা হয় ব্যারিস্টার। বিভিন্ন দেশে আইনজীবীদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। ‘ব্যারিস্টার অ্যাট ল’র সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ‘বার অ্যাট ল’। এই কোর্সটি ইংল্যান্ডের চারটি ইনসের (লিংকনস্ ইন, গ্রেইসইন, ইনার টেম্পল ও মিডল টেম্পল) যেকোনো একটি থেকে করতে হয়। এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদের এই ‘বার অ্যাট ল’ ডিগ্রি ভুয়া দাবি করে ১ এপ্রিল ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ভারতে পালিয়ে থাকা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থীর স্ট্যাটাসে এই ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মিডল টেম্পলকে পাঠানো একটি ই-মেইলও যুক্ত করা হয়েছে। গোলাম রাব্বানী আসাদুজ্জামান ফুয়াদের এই ‘বার এ্যাট ল’ ডিগ্রির বিষয়ে জানতে মিডল টেম্পলকে একটি ই-মেইল করেন। সেখানে ফুয়াদের পরিচয় ‘আসাদুজ্জামান ফুয়াদ’ অথবা ‘ফুয়াদ আবদুল্লাহ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রতিউত্তরে মিডল টেম্পল জানায়, ‘আসাদুজ্জামান ফুয়াদ’ অথবা ‘ফুয়াদ আবদুল্লাহ’ নামে কোনো রেকর্ড তাদের কাছে নেই। এবি পার্টির প্রতিক্রিয়া: গোলাম রাব্বানীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু। ফেসবুকে তিনি বলছেন, এটা আমি পজিটিভ হিসেবে দেখছি। ফুয়াদকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার ব্যাপারে জনগণের আগ্রহ আছে এবং সবশেষে যখন প্রমাণিত হবে যে ফুয়াদের (আসল নাম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া) বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার হয়েছে। তখন তার পজিশন আরও হাই হবে ও গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে। ফুয়াদ ব্যারিস্টারি পাশ করার পর এক যুগেরও বেশি সময় ইউকেতে মেইনস্ট্রিম ‘ল’ প্র্যাক্টিস করেছে। এটার প্রতিবাদ বা প্রমাণ তার সহপাঠী বন্ধুরাই দিবে। আমরা এটার জবাব দেয়ার দরকার মনে করছি না। স্ট্যাটাসে তিনি ‘সোসাইটি অব মিডল টেম্পল’র একটি ই-মেইলও সংযুক্ত করেছেন। সেই ই-মেইলে বলা হয়, ২০০৮ সালে ২৯ অক্টোবর ফুয়াদ (আসল নাম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া) প্রতিষ্ঠানটিতে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। আলোচনা আর দীর্ঘায়িক করতে চাই না। আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এই দেশের নাগরিক। আমাদের ভাই, বন্ধু, স্বজন। তিনি একই সঙ্গে দুটি মহান পেশায় (আইন ও রাজনীতি) আছেন। এটা আমাদের জন্য গর্বের। দুটো পেশাই সেবামূলক। তিনি মানুষকে সেবা দেবেন, ভালবাসবেন- এটাই স্বাভাবিক। তার আচরণে কেউ কষ্ট পাক- এটা কাম্য নয়। লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি

বিশ্বব্যাপী ভোট ব্যবস্থার খুঁটিনাটি
নেতা নির্বাচন করতে মতামত প্রয়োজন হয়, মতামত প্রদানের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ভোট। সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পেলেই রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী তার আসন পাবেন এটিই স্বাভাবিক। তবে বর্তমান দুনিয়ায় ব্যাপারটি এতটা সহজও না। এই যেমন আমেরিকায়, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিপক্ষের চেয়ে কম সংখ্যক ভোট পেয়েও রাষ্ট্রপতি বনে গেছেন। আবার উত্তর কোরিয়ার মতো দেশেও নিয়মিত ভোট হয়। সবচেয়ে ভালো ভোটিং পদ্ধতি কোনটি, এই প্রশ্নের এখনো সমাধান মেলেনি। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নির্বাচন পদ্ধতি রয়ে গেছে। আজকে আমরা জানবো বিভিন্ন দেশের কিছু ভোটিং পদ্ধতির বিভিন্ন জানা অজানা দিক। মার্বেল দিয়ে ভোট আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় প্রচলিত আছে মার্বেল দিয়ে ভোট দেওয়া। এই পদ্ধতিটি খুব সাধারণ কিন্তু ভোট কারচুপি করা খুব জটিল। প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য আলাদা আলাদা পাত্র থাকবে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চাইলে প্রার্থীর পাত্রে মার্বেল ফেলবে। ভোটারদের আঙ্গুলে অমোচনীয় কালি দিয়ে দেওয়া হবে একাধিক ভোট এড়াতে। দেশটিতে শিক্ষার হার কম থাকায় ১৯৬৫ সালে এ পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চালু করে বৃটিশরা। দেশটিতে ২০২১ সালে এ পদ্ধতিতে সফলভাবে ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল। দেশটির জনগণ এ পদ্ধতিতে ভোট দিয়েই অভ্যস্ত। তাই আপাতত পরিবর্তন আসার সম্ভাবনাও কম। ভোট হবে, কিন্তু প্রার্থী একজনই আরেক অদ্ভুত ভোট পদ্ধতি চালু আছে উত্তর কোরিয়ায়। এখানে ৪-৫ বছর পরপর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৮ বছরের উপরে সবার ভোট প্রদান বাধ্যতামূলক। ভোটের দিন সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, এখানে একমাত্র প্রার্থী কিম জং উন। তার দলের নাম ওয়ার্কারস পার্টি। ভোট তাকেই দিতে হবে। ফলাফল যা হবার তাই হয়, শতভাগ ভোটে পাস করে সুপ্রিম লিডার কিম জং উন। যদিও দেশের পুরো নাম ডেমোক্র্যাটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া। মাসব্যাপী ভোট ভোটগ্রহণ সাধারণত একমাসেই শেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক দেশই এই নিয়ম অনুসরণ করে। কিছু দেশে দুই/তিন ভাগেও ভোট হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৩০/৪০ দিনব্যাপী ভোট শুধু পৃথিবীর একটি দেশেই হয়। সেটি হচ্ছে ভারত যা, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে সে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভোটগ্রহণকারীরা ছড়িয়ে পরে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, আয়তনে বড় ও অনেক অঞ্চল দূর্গম হওয়ায় এতো সময় লাগে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাদের সময় লেগেছে ৪৪ দিন। বিষ্ময়কর হলেও সত্য, ১৯৫১-৫২ সালে, প্রথম ভোটগ্রহণ করতে ভারতের সময় লেগেছিল ৪ মাস! ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে ভারতের বিভিন্ন রেকর্ড আছে, যেমন সবচেয়ে উঁচুতে ভোট কেন্দ্র স্থাপন, সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানে ভোট কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি। পৃথিবীর বাইরে থেকে ভোটপ্রদান সময় বদলে গেছে, পৃথিবীর মানুষ এখন মহাকাশেও ঘাঁটি গেড়েছে। কিন্তু দেশের নাগরিক হিসেবে তাদেরও তো ভোটপ্রদানের অধিকার আছে। মহাকাশে থেকে ভোটগ্রহণের রেকর্ড একমাত্র আমেরিকার। মার্কিন নভোচারী ডেভিড উলফ, ১৯৯৭ সালে প্রথমবার মহাকাশ থেকে ভোট দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে কেন্ট রুবিনস, উইলমোর ও সবশেষ ২০২৪ নির্বাচনে সুনিতা উইলিয়ামস মহাকাশে থেকে ভোট দিয়েছেন। মহাকাশ থেকে ভোটপ্রদানের মাধ্যম হচ্ছে অনলাইন। তবে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এক্ষেত্রে সবধরনের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। কন্ঠভোটে প্রেসিডেন্ট যদিও কন্ঠভোট এখনো বিভিন্ন দেশের সংসদে চালু আছে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য। কিন্তু একসময় কন্ঠভোটের মাধ্যমে দেশের রাজা পর্যন্ত নির্বাচন করা হতো। কন্ঠভোটের নিয়মটি ছিল এরকম, একটি নির্দিষ্ট স্থানে দেশের সচেতন নাগরিকগণ একত্রিত হতো। এরপর কোন নির্দিষ্ট লোককে রাজা নির্বাচন করা যায় কিনা সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হতো, সমাবেত সবাই উচ্চকণ্ঠে হ্যাঁ অথবা না ভোট দিত। সংখ্যাগরিষ্ঠের কন্ঠের ভোটে রাজা/ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হতো। গ্রিস ও রোমে এইধরনের ভোটিং পদ্ধতি চালু ছিল, অবশ্য তখনকার সময় সেখানে নারীদের ভোটাধিকার ছিল না। ভোটারদের বয়সের যোগ্যতা পৃথিবীর প্রায় ৮৫% দেশেই ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর। তবে ব্যাতিক্রম ও আছে, যেমন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও ইকুয়েডর ইত্যাদি ল্যাটিন আমেরিকান দেশে ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৬ বছর। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া, উত্তর কোরিয়া, সুদান ও গ্রিসে ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৭ বছর। আবার কুয়েত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লেবানন ও ওমানে ২১ বছর হওয়ার পূর্বে ভোট ভোটার হওয়া যায় না। লেখক: এ এম এস নিশাত (শিক্ষাক্যাডারে কর্মরত)

আওয়ামী লীগ থেকে অন্য দলগুলো কি শিক্ষা গ্রহণ করবে?
মো. মনিরুজ্জামান মনির: যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকেন, তাদের মধ্যে একটা অহমিকা অটোমেটিক্যালি তৈরি হয়ে যায়। তখন তারা আর জনগণের ভাষা বুঝতে পারেন না কিংবা বুঝতে চান না। তারা ব্যক্তি স্বার্থে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা অনেক কিছুই জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে জনগণের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়। এই দূরত্ব বাড়তে বাড়তে একটা সময় তারা সরকারের ওপর বিরক্ত হয়ে যান; ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠে নামেন। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আন্দোলন বৃহৎ আন্দোলনে রূপ নেয়। সরকারবিরোধী গোষ্ঠী ও দেশপ্রেমিক জনগণও এই আন্দোলনে যোগ দেন। একটা সময় সরকারের পতন হয়। এটাই গণতান্ত্রিক দেশের স্বাভাবিক চরিত্র। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম না। এ দেশে আন্দোলন সংগ্রামে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি তরুণ ও ছাত্রসমাজই সব চেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে, রাখছে, রাখবে। তারাই জনগণকে বারবার জাগিয়ে তুলেছে। পুলিশের বন্দুকের সামনে তারাই বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে বারবার। ’৫২, ৬৯ ও ৭১’-এর পর ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন ঘটিয়েছিল মূলত ছাত্রসমাজ। দীর্ঘ সময় পর ২০২৪ সালে আরেকটি অভ্যুত্থান দেখল বাংলাদেশ। আন্দোলনের তীব্রতার মুখে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলেন টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা।আওয়ামী লীগের মতো একটা বড় ও প্রাচীন দলের প্রধানকে যখন দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়; তখন তার ও দলের ভুল নিয়ে চলে নানা বিশ্লেষণ। এটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করতে পারে তাদের ভবিষ্যত শিক্ষা-দীক্ষার জন্য। তারা যেন এই ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে পারেন। শেখ হাসিনার সব চেয়ে বড় ভুল হলো পরিবারতন্ত্র। বিভিন্ন পদে তিনি আত্মীয়-স্বজনকে বসিয়েছেন। দলের দুঃসময়ে তারা তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। এই পরিবারতন্ত্রের কারণে ক্ষতি হয়েছে দলের। ত্যাগী-নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তাদের অনেককে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। অনেকে রাজনীতির মাঠ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। উদাহরণটা শুরু করতে চাই কুমিল্লা থেকে। এই নগরের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি ছিলেন আ ক ম বাহারউদ্দিন। কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনে তার মেয়ে তাহসিনা সূচনা বাহার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এবং ভোটে জিতেও যান। খুলনার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তালুকদার আব্দুল খালেক। এর আগে তিনি বাগেরহাটের এমপি, প্রতিমন্ত্রী এবং এরও আগে খুলনা সিটির মেয়র ছিলেন। একাদশ সংসদে তার স্ত্রী হাবিবুন নাহার বাগেরহাট-৩ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। পরে তিনি বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হন।ঢাকা দক্ষিণ সিটির অন্যতম জনপ্রিয় মেয়র ছিলেন সাঈদ খোকন। তার বাবা মোহাম্মদ হানিফও অত্যন্ত জনপ্রিয় মেয়র ছিলেন। এই সাঈদ খোকনকে বাদ দিয়ে রাজনীতিতে হঠাৎ আবির্ভাব হওয়া ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগের টিকিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই শেখ মনির ছেলে। তাপসের আরেক ভাই শেখ ফজলে শামস পরশকে সপ্তম কংগ্রেসে যুবলীগের চেয়ারম্যান করা হয়। এখানে লক্ষণীয় যে তাপস ও পরশ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। কেবল শেখ পরিবারের সদস্য হওয়ায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে তাদের চেয়ারে বসানো হয়েছে। গত সংসদে ঢাকায় যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন; তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাহাউদ্দিন নাছিম। মাদারীপুরের এই ভদ্রলোককে ঢাকায় কেন মনোনয়ন দিতে হলো? ঢাকার স্থানীয় এমন কোনও নেতা নেই; যাকে মনোনয়ন দেওয়া যায়? স্থানীয়দের মনোনয়ন না দেওয়ায় হয়তো শেখ হাসিনার ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি; কিন্তু নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। বেশ কয়েক বছর অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। ঢাকায় এতো নেতাকর্মী থাকতে চাঁদপুরের এই লোককে কেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্ব দিতে হলো? ঢাকার পাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা হলো নারায়ণঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি এবং পরে মন্ত্রী হন গোলাম দস্তগীর গাজী। তার স্ত্রী হাসিনা গাজী তারাব পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের টিকিটে। ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে টানা তিন বার এমপি এবং পরে মন্ত্রী হন ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার আপন ছোট ভাই এহতেশাম বাবর ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের টিকিটে। সারাদেশে একই অবস্থা ছিল। বাবা এমপি, ছেলে উপজেলার চেয়ারম্যান কিংবা পৌর মেয়র। স্বামী এমপি আবার স্ত্রী মেয়র কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যান। কখনো কখনো এই দায়িত্বে বসানো হয়েছে এমপি-মন্ত্রীর নিকট আত্মীয়কে। এ কারণে টানা সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগে কিছু সুবিধাভোগী তৈরি হয়েছে। নতুন নেতা কিংবা ত্যাগী কর্মী তৈরি হয়নি। ফলে রাজপথে লড়াই করার মতো নেতাকর্মী দলটিতে ছিল না। এছাড়া অনেক নেতার নির্যাতনে অনেক নেতাকর্মীও গোপনে দলের বিরোধিতা করেছেন। বিতর্কিত বক্তব্য: গত ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোটা বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। মামলার পর আদালত যে রায় দেন, এতে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। আদালতেই সমাধান হবে। সাংবাদিকের এক প্রশ্নে তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা (কোটা) পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? তার এই বিতর্কিত বক্তব্য শুধু তার জন্য নয়, দেশ ও জাতির জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরই ১৪ জুলাই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের স্লোগান ওঠে, ‘আমি কে? তুমি কে? রাজাকার রাজাকার’। পরে তা বদলে হয় ‘চেয়েছিলাম অধিকার/ হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমি কে? তুমি কে? রাজাকার, রাজাকার/ কে বলেছে? কে বলেছে? সরকার, সরকার’। ক্ষেত্রবিশেষে সরকারের বদলে ‘স্বৈরাচার’ শব্দটিও শোনা গেছে। এরপর এই আন্দোলন আর দমানো যায়নি। সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা রাজধানীর সব সড়ক অবরোধ করে প্রতিদিনই আন্দোলন করেন। আন্দোলন পরবর্তীতে এমনভাবে বৃদ্ধি পায় যা আর কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এর আগে গত ৪ জুলাই কোটা ইস্যুতে আদালত যখন শুনানি আরও এক মাস পেছান তখন ছাত্রদের আন্দোলন আরও তীব্রতর হতে থাকে। অবশেষে ৬ জুলাই কোটাবিরোধীরা সারা দেশে ‘বাংলা বন্ধের’ ডাক দেন। সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, পরীক্ষা বর্জন ও সাধারণ ছাত্র ধর্মঘটের আহ্বান জানান। গত ১১ জুলাই ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটাবিরোধীরা সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে যে শক্তি প্রদর্শন করছেন, তা বেআইনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, শিক্ষার্থীরা লিমিট ক্রস করে যাচ্ছেন। সারা দেশব্যাপী জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কোটা আন্দোলন করতে দেওয়া প্রশাসনিক দুর্বলতা কি-না এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা প্রশাসনিক দুর্বলতা নয়, আমরা ধৈর্য ধরছি। ধৈর্য ধরা মানে দুর্বলতা নয়। সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেওয়া হবে। আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের কতিপয় নেতা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটার জবাব ছাত্রলীগই দেবে। ছাত্রদের বিষয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত সীমিত থাকবে। আমরা দেখি রাজনৈতিকভাবে কারা প্রকাশ্যে আসে, তখন দেখা যাবে। আমরাও মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পরই ১৬ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে প্রথমে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে দফায় দফায় ক্যাম্পাসজুড়ে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী একজোট হয়ে ফের আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র, রড ও লাঠিসোঁটা হাতে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর দখলে চলে যায় ক্যাম্পাস। সংঘর্ষের সময় কয়েকজন যুবককে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেখা গেছে। সন্ধ্যায় বহিরাগতদের ক্যাম্পাস থেকে বের করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সেখানে পুলিশ প্রবেশ করে। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর মধ্যরাতে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে পুলিশ। এভাবে আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অ্যাকশনে যায়। তাদের গুলিতে দেড় হাজারের মতো মানুষ নিহত হন। আহত হন আরও অনেক মানুষ। তাদের সিংহভাই ছাত্র-তরুণ। এক পর্যায়ে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান বলে খবর আসে। এরপর সারাদেশে তাণ্ডব চালানো হয়। থানায় থানায় আক্রমণ করা হয়। অনেক পুলিশ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী এবং তাদের সম্পদ হামলার শিকার হয়েছে। আওয়ামী লীগের এই পরিবারতন্ত্র, ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন এবং অহমিকায় পতন থেকে অন্যান্য দলগুলো শিক্ষা গ্রহণ করবে- এটাই প্রত্যাশা করছি।

আন্তর্জাতিক বন দিবস ২০২৫: ‘বন বনানী সংরক্ষণ, খাদ্যের জন্য প্রয়োজন’
দীপংকর বর: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এ ধরণীকে বাসযোগ্য রাখতে বনের গুরুত্ব অপরিসীম। বায়ুর গুণগতমান রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক পরিবেশের বিরূপ প্রভাব রোধ, ভূমিক্ষয় ও মরুময়তা রোধ, কার্বন সংরক্ষণ এবং কার্বন নিঃসরণ রোধসহ প্রাণীকুলের বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদা পূরণে বন অনাদিকাল থেকে অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। তাছাড়া, বনভিত্তিক জীবিকা বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু বন উজাড় ও অপ্রতুল সংরক্ষণ কার্যক্রমের ফলে অনেক দেশেই বনজ সম্পদ হুমকির মুখে পড়ছে, যা খাদ্য নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রভৃতির কারণে প্রতিনিয়তই বনভূমির পরিমাণ কমছে। বিকাশমান কৃষি ও আবাসনের জন্য ভূমি ব্যবহার পরিবর্তনের কারণে সংকুচিত হচ্ছে বনাঞ্চল। শুধু তাই নয়, নদী, খাল, জলাভূমি, জলাশয় ইত্যাদি জবরদখল ও ভরাটের কারণে প্রতিবেশের যে বিপর্যয়ের ঘটছে তা নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। তাই প্রতিবেশ, বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন আইন, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনসহ এ সংক্রান্ত সকল আইন ও বিধিমালার সঠিক প্রয়োগ ও যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে। বন সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার এবং টেকসই বন ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০১২ সালে ২১ মার্চকে আন্তর্জাতিক বন দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বনজসম্পদের গুরুত্ব তুলে ধরতে এবং নীতিনির্ধারক, গবেষক ও সাধারণ মানুষকে বনায়নের গুরুত্ব সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করতে ২০১৩ সাল হতে প্রতি বছর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নির্দিষ্ট একটি প্রতিপাদ্যকে কেন্দ্র করে এ দিবস পালন করা হয়। এবারেও বন অধিদপ্তরে আন্তর্জাতিক বন দিবস উদযাপন করা হবে । ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক বন দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বন বনানী সংরক্ষণ, খাদ্যের জন্য প্রয়োজন’। এই প্রতিপাদ্য বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। বন আমাদের খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টি নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। বিশ্বের বহু জনগোষ্ঠীর খাদ্য তালিকায় বন থেকে প্রাপ্ত ফলমূল, বাদাম, মধু, ভেষজ উদ্ভিদ, মাশরুম ও শাকসবজি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। সুতরাং, বন কেবল তাদের পুষ্টির উৎস নয়, বরং জীবনধারা ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এছাড়া, অনেক ঔষধি উদ্ভিদ পুষ্টি ও ভেষজ চিকিৎসার জন্যও ব্যবহৃত হয়। বন থেকে পাওয়া সকল খাদ্য উপাদান মানুষকে পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি স্থানীয় জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতেও ভূমিকা রাখে। বন উজাড় হলে খাদ্য উৎপাদনও হুমকির মুখে পড়ে। সঠিকভাবে বন সংরক্ষণ করলে তা দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে সহায়তা করে। বন থেকে সংগৃহীত মশলা, তেল, রজন এবং ঔষধি গাছ খাদ্য ও ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বনজ পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তাই বনজসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হলে খাদ্যশিল্পের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে। খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ টেকসই করতে হলে বন সংরক্ষণ ও পুনঃবনায়নের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের ১৫ দশমিক ৫৮ ভাগ এবং বৃক্ষাচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ; যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। দেশের প্রধান বনাঞ্চলগুলোর মধ্যে সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বন, মধুপুর গড় ও শালবন উল্লেখযোগ্য। বনভূমির উপর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, নগরায়ণ, শিল্পায়ন, কৃষি সম্প্রসারণ, অনিয়ন্ত্রিত বন নিধন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বনসম্পদ হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষ করে, অবৈধ কাঠ কাটার প্রবণতা, চারাগাছের অপর্যাপ্ত রোপণ, বনাঞ্চলের ওপর অনুপ্রবেশ এবং বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংসের ফলে জীববৈচিত্র্যও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় দেশের বনজ সম্পদ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন নীতি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে বন সৃজনের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বন সংরক্ষণ আইন দেশের বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আইনি কাঠামো প্রদান করছে। এ ছাড়া, টেকসই বন ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে গ্রিন ইকোনমি ধারণা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যেখানে বনজসম্পদ ব্যবহারে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। বন অধিদপ্তরের আওতায় বন ও বৃক্ষাচ্ছাদন বৃদ্ধি, বন পুনরুদ্ধার কার্যক্রম, বন অবক্ষয় রোধ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নেতিবাচক প্রভাবসহ অন্যান্য সংকট মোকাবিলা, উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী সৃজন এবং বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর বনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন বনভূমিতে ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ হাজার ৫৩০ হেক্টর ব্লক বাগান, ৮৬৬ কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান, ৪৬০ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজন এবং বিক্রয় বিতরণের জন্য ১৯ দশমিক ৮০ লক্ষ চারা উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও, জবরদখলকৃত মোট বনভূমির উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি/২০২৫ পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৮২ একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে।বন, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় বননীতি ২০২৪ অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া বন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন, ২০২৫ এবং গ্রামীণ বন বিধিমালা, ২০২৫ প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম এবং আইইউসিএনএর সহায়তায় ১ হাজার টি উদ্ভিদ মূল্যায়নপূর্বক রেড লিস্ট প্রকাশ করা হয়েছে। বন অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের সকল অফিসসমূহে নার্সারিতে ইউক্যালিপটাসের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিবেচনায় আকাশমনি প্রজাতির চারা উত্তোলন ও রোপণ বন্ধ রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বৃক্ষ সংরক্ষণ ও এর বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য বৃক্ষ হতে পেরেক উত্তোলন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বন সংরক্ষণ ও বন খাত থেকে কার্বন নি:সরণ কমানোর লক্ষ্যে ১ হাজার ৩০৩ একর জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধারপূর্বক বনায়ন করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার বিশেষ উদ্যোগে বিভিন্ন সরকারি কাজে বরাদ্দকৃত বনের জমি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বর্ণিত কার্যক্রমগুলো বন, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়ার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইকো-ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অনুকূলে বরাদ্দকৃত ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি বন বিভাগের অনুকূলে হস্তান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে প্রশাসন একাডেমি স্থাপনের জন্য বন্দোবস্তকৃত কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলায় ৭০০ (সাতশত) একর এবং মাল্টিডিসিপ্লিন একাডেমির নামে ১৫৬ একর বনভূমির বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ‘টেকনিক্যাল সেন্টার’ নির্মাণের জন্য কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় বরাদ্দকৃত ২০ একর সংরক্ষিত বনভূমি অবমুক্তকরণ (ডি-রিজার্ভ) বিষয়ক জারীকৃত প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়। এছাড়া একই ধরনের আরও কয়েকটি বরাদ্দ বাতিলের কার্যক্রম মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বন, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে- রক্ষিত এলাকার মাস্টারপ্ল্যান ও ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান প্রণয়ন; দেশীয় ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতির জীনপুল সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ; সরকারি জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধারপূর্বক বনায়ন কার্যক্রম পরিচালনা; বাংলাদেশের বন এবং বন্যপ্রাণী ও তাদের আবাসস্থল সংরক্ষণে জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, কনফারেন্স, দিবস উদযাপন, ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াড পোস্টার, বিলবোর্ড, লিফলেট, বুকলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা।বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। আমাদের যেটুকু বনাঞ্চল আছে সেটার সংরক্ষণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বনের স্বাস্থ্য ও বৈচিত্র্য উন্নত করতে হবে। বন অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে পতিত ও প্রান্তিক সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমি বনায়নের আওতায় এসেছে। সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নির্মল পরিবেশ সৃষ্টিতে সামাজিক বনায়ন অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বনায়ন কার্যক্রমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের জন্য সবুজ অর্থনীতি যাত্রা ত্বরান্বিত হচ্ছে। বন সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী যেমন বিশেষ নৃগোষ্ঠী, কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা বনসম্পদের প্রতিদিনের ব্যবহারকারী। তাই বন সংরক্ষণে তাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে হবে। সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার স্থানীয় জনগণকে বন রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত করছে, যেখানে তারা বন সৃজনের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও পরিবেশবাদী সংগঠন স্থানীয় জনগণের মধ্যে বন সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে বন সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে, জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এই প্রচেষ্টা সফল হবে না। স্থানীয় জনগণ, কৃষক, বননির্ভর সম্প্রদায় এবং নীতিনির্ধারকদের মধ্যে বনের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, স্কুল-কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে বোঝাতে হবে যে বন সংরক্ষণ শুধু জীববৈচিত্র্যের জন্য নয়, বরং টেকসই খাদ্য উৎপাদন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও অপরিহার্য। টেকসই বন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হলে পরিকল্পিত নীতি প্রণয়ন এবং সেগুলোর বাস্তবায়ন জরুরি। বাংলাদেশে সামাজিক বনায়ন, বন সংরক্ষণ আইন ও বনভিত্তিক জীবিকা উন্নয়নের মতো বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তবে এগুলোকে আরও কার্যকর করতে হবে। বন উজাড় রোধে কঠোর মনিটরিং, অবৈধ কাঠ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ এবং বনভূমি পুনঃবনায়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে বন সংরক্ষণে সম্পৃক্ত করা গেলে বন ও খাদ্যের টেকসই সম্পর্ক রক্ষা করা সম্ভব হবে। নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে কৃষি ও বন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি, বনজ খাদ্যের চাষাবাদকে উৎসাহিত করা এবং বন ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। বন সংরক্ষণ ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে উন্নত দেশগুলোর প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা দরকার। বন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় উন্নত দেশগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশও টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তঃসরকার প্যানেল এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণাকে কাজে লাগিয়ে দেশীয় নীতিমালা প্রণয়ন করলে বন সংরক্ষণ আরও কার্যকর হবে। গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে বনজ খাদ্য উৎপাদন, রপ্তানি এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকা উন্নয়নের পথ সুগম করা সম্ভব হবে। বন সংরক্ষণ ও খাদ্য নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে জনসচেতনতা, কার্যকর নীতি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সরকার, গবেষক, স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান খাদ্য নিরাপত্তার সংকট ও পরিবেশগত পরিবর্তনের মুখে বন সংরক্ষণ ও খাদ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতির প্রয়োজনীয়তা আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই উন্নয়ন নীতিমালায় এমন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে, যেখানে বন সংরক্ষণ ও খাদ্য নিরাপত্তা পরস্পরের সম্পূরক হিসেবে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশে সামাজিক বনায়ন, বনজসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং টেকসই কৃষি চর্চার মাধ্যমে এই ভারসাম্য রক্ষার উদ্যোগ ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে, তবে তা আরও কার্যকর করতে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন। এ দেশকে বর্তমান জনগোষ্টী ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য টেকসই পরিবেশ উন্নয়নকল্পে বিজ্ঞানভিত্তিক ও লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বন সংরক্ষণ, উন্নয়ন, বনজদ্রব্যের টেকসই উৎপাদন এবং এর সুচিন্তিত ও টেকসই ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, স্থানীয় জনগোষ্ঠী, কৃষক, গবেষক এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। বন উজাড় বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা, বনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং গবেষণা ও প্রযুক্তির সহায়তায় বনসম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক বন দিবস ২০২৫ আমাদের এই বাস্তবতা উপলব্ধি করার সুযোগ এনে দিয়েছে, যেখানে সবাই মিলে একটি সুস্থ, সবুজ ও খাদ্যনিরাপদ পৃথিবী গড়ার জন্য অবদান রাখতে পারে। এখন সময় এসেছে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একসঙ্গে কাজ করার, যাতে বন আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। লেখক: উপপ্রধান তথ্য অফিসার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়

৩ কোটি ৮০ লাখের অধিক কিডনি রোগীর দাবি ও প্রত্যাশা
মো. আবদুল আলী: কিডনি সুরক্ষা ও রোগ প্রতিকারের একমাত্র উপায়- জনসচেতনতা এবং “অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় অকাল মৃত্যু নয়” হোক আমাদের প্রত্যয়। আজ ১৩ মার্চ (বৃহস্পতিবার) কিডনি দিবস-২০২৫ পালিত হচ্ছে। এই বছরের প্রতিপাদ্য হল “আপনার কিডনি কি সুস্থ? তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করুন, কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষা করুন”। গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, ১৮ কোটি জনসংখ্যার এই বাংলাদেশে ৩ কোটি ৮০ লাখের অধিক মানুষ কোনো-না-কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। মরণব্যাধি কিডনি রোগের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। প্রতি বছর অগণিত মানুষ অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছে। প্রিয়জনকে বাঁচাতে মৃত্যুর দিনক্ষণ পর্যন্ত চিকিৎসার পেছনে ছুটতে বাধ্য থাকে ভুক্তভোগী পরিবার। প্রবাদ আছে “কিডনি রোগী মরেও যায়, মেরেও যায়”। বাস্তবে আমৃত্যু চিকিৎসার ভার সয়বার সাধ্য ধনী, মধ্যবিত্ত বা হতদরিদ্র কারো নেই। এমন বাস্তবতায় আমাদের অদম্য প্রত্যয় “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি”। কিডনি রোগের দুষ্প্রাপ্য, ব্যয়বহুল চিকিৎসায় ভুক্তভোগী এবং নির্মম বাস্তবতার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে অর্থাভাবে চিকিৎসাবঞ্চিত হতদরিদ্র কিডনি-রোগী ও ভুক্তভোগী পরিবারের বুকফাটা বোবাকান্না ও নির্মম কষ্টের আওয়াজ সরকার, সামর্থ্যবান ও মানবিক সমাজে ছড়িয়ে দিয়ে সর্বজনীন সহযোগিতা ও উদ্যোগের মাধ্যমে জীবন রক্ষার প্রয়োজন। ৬৮ হাজার গ্রামবাংলার অগণিত হতদরিদ্র কিডনি রোগী চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করছে। অপর দিকে সীমিত সাধ্যের গুটিকয়েক কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস অর্থাভাবে মাঝপথে বন্ধের কারণে ব্যাপক হারে কিডনি রোগীর মৃত্যু আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। কোনো একক ব্যক্তি বা পরিবারের পক্ষে কিডনি রোগের ব্যয়বহুল চিকিৎসা সামাল দেয়া সম্ভব নয়। ক্রমবর্ধমান কিডনি রোগী ও মৃত্যুর হার কমাতে প্রয়োজন রাষ্ট্রের যথোপযুক্ত পদক্ষেপ ও মানবিক সমাজের সহযোগিতা। বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে দেশের ৩ কোটি ৮০ লাখের অধিক কিডনি রোগীর দাবি ও প্রত্যাশা পূরণে চিকিৎসক, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাব, ব্লাড ও অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, ন্যায্যমূল্যে ডায়ালাইসিস, ঔষধসহ সমন্বিত প্রচেষ্টায় কিডনি-রোগীদের চিকিৎসার সু-ব্যবস্থা মূল উদ্দেশ্য। লক্ষ্য অর্জনে স্বাস্থ্যবিষয়ক দপ্তর, এনজিও, মানবিক সংগঠন, ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ও দেশ-বিদেশের সহযোগিতায় রোগীদের বিড়ম্বনামুক্ত সাশ্রয়ী মূল্যে, বিনা মূল্যে চিকিৎসার সু-ব্যবস্থার মাধ্যমে জীবন রক্ষার এক অদম্য প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে আসছে চট্টগ্রামে “কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা”। মূলত জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ ও মানবিক সহযোগিতা। কিডনি সুরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় জনসচেতনতা: এ উপলক্ষ্যে ডায়াবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, ক্যান্সার, থেলাসেমিয়া, স্ট্রোক, স্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার, পাইলস, গ্যাস্ট্রিক, লিভার ডিজিজ, হৃদরোগ, প্যারেলাইজডসহ মাতৃত্বের গর্ভ ও প্রসবকালীন সচেতনতা ইত্যাদি ক্রমবর্ধমান রোগসমূহের প্রতিকারমূলক প্রাথমিক ধারণা (প্রযোজ্য শ্রেণির) পাঠ্যপুস্তকে অন্তভর্‚ক্ত করা হলে অনায়াসে ১৮ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে জনসচেতনতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচার সকল রোগের উৎপত্তির মূল উৎস। এসব জনগুরুত্বপূর্ণ ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্যাবলি প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনসাধারণের অসচেতনতা, অসাবধানতা, রোগের লক্ষণ সম্পর্কে ধারণার অভাব, রোগ প্রতিকারক ও আক্রান্ত রোগীর করণীয় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানের যাবতীয় তথ্যাবলি সম্প্রচারে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ। বিদ্যমান ক্লিনিক ও হাসপাতালসমূহে স্বল্পমূল্যে মানসম্মত ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু: পরিসংখ্যানমতে, দেশের ১৮ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ২ কোটিরও অধিক মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। তার উপর প্রতিবছর ৪০ হাজারেরও অধিক মানুষ য্ক্তু হচ্ছে কিডনি বিকলের তালিকায়, যা খুবই উদ্বেগজনক। এই বিশাল সংখ্যক কিডনি-রোগীর তুলনায় চিকিৎসা-সুবিধা, চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী, চিকিৎসা উপকরণ ও মেশিনারীজ সল্পতা-সংকট রোগীর চিকিৎসা প্রাপ্তির পথে মূল প্রতিবন্ধকতা। বিশেষ করে চুড়ান্ত পর্যায়ের রোগীদের জীবন রক্ষার অন্যতম অবলম্বন মানসম্মত ডায়ালাইসিস সেন্টার অপ্রতুল। তাই দরিদ্র ও হতদরিদ্র রোগীদের সামর্থ্যের মধ্যে বিদ্যমান হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহে মানসম্মত ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন সময়ের দাবি। অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় অকাল মৃত্যু নয়: প্রবাদ আছে ‘কিডনি রোগী মরেও যায় মেরেও যায়’। অসম্ভব ব্যয়বহুল এ-রোগের চিকিৎসা মৃত্যুর দিনক্ষণ পর্যন্ত। এমন বাস্তবতায় ডাক্তার ভিজিট, টেস্ট রিপোর্ট ফি, রিপোর্র্ট পর্যবেক্ষণ ফি, ফেষ্টুলা স্থাপন, ডায়ালাইসিস, কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যয় ও ওষুধের উচ্চমূল্যসহ কিডনি চিকিৎসায় সর্বক্ষেত্রে ব্যয়হ্রাসে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ। এ লক্ষ্যে জীবনরক্ষাকারী ডায়ালাইসিস মেশিন, ডাইলেজার ও ডায়ালাইসিস উপকরণসহ যাবতীয় ওষুধ, যন্ত্রপাতি ও মেশিনারীজ সরঞ্জাম দেশি বিদেশি অংশীদারীত্বে দেশে উৎপাদন এবং জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির উপর যাবতীয় আমদানি শুল্ক মওকুফ করে চিকিৎসাব্যয় কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ। জনবহুল এলাকায় শৌচাগার স্থাপন: প্রস্রাবের চাপ দীর্ঘমেয়াদি চেপে রাখা-অভ্যাসে পরিণত হলে কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। একজন পুরুষ যতটা সহজে শোভন কিংবা অশোভনভাবে পয়-প্রস্রাব ত্যাগের সুযোগ নেয়, একজন মহিলার পক্ষে তা কখনো সম্ভব নয়। ফলে মহিলা কিডনি রোগীর সংখ্যা দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, শৌচাগার একদিকে মানবসেবা অপরদিকে লাভজনক ব্যবসাও বটে। সে বিবেচনায় উপজেলা থেকে শুরু করে জেলাশহর পর্যন্ত প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক জনবহুল এলাকায় সরকারি, স্থানীয় সরকার, এনজিও, মানবিক, সামাজিক উদ্যোগে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নির্মাণ কিডনিসহ নানাবিধ রোগ প্রতিকারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এছাড়াও সব ধরনের ঔষুধের প্যাকেট ও পাতার গায়ে ওষুধের দাম মুদ্রণ, ভেজাল ওষুধ উৎপাদন বন্ধ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রয়ের উপর কঠোর নজরদারি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থাসহ ব্যাথানাশক ও এন্টিবায়োটিক সেবনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ বাধ্যতামূলক করণ। সর্বসাধারণের জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে স্বাস্থ্যবীমা প্রচলনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির বিষয়ে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অন্যান্য সাধারণ অবদান রাখতে সহায়ক হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সরকারি উদ্যোগ, মানবিক সমাজের মনোযোগ, নাগরিক সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রিয় মাতৃভ‚মি বাংলাদেশ হতে পারে স্বাস্থ্যও চিকিৎসা-ট্যুরিজমের জন্য সারা বিশ্বের রোল মডেল। লেখক: আজীবন সদস্য, কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা

মানুষ, সমাজ ও ভাষা
আফতাব চৌধুরী: ভাষা হচ্ছে কতগুলো অর্থবহ ধ্বনি সমষ্টির বিধিবদ্ধ রূপ; যার সাহায্যে একটি বিশেষ সমাজের লোকেরা নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় করে। যে জনসমষ্টি এক ধরনের ধ্বনি সমষ্টির বিধিবদ্ধ রূপের দ্বারা নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময় করে ভাষা বিজ্ঞানীরা তাকে একটি ভাষা সম্প্রদায় হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এখানে একটি ধ্বনি সমষ্টির উল্লেখ করা যাক- ‘আমরা বই পড়ি’। এ ধ্বনি সমষ্টি নির্দিষ্টক্রমে বিন্যস্ত করে শুধু বাঙ্গালিরা ব্যবহার করে এবং এর দ্বারা যে ভাব প্রকাশিত হয় তা আমরা বাঙ্গালিদের একটি ভাষা-সম্প্রদায় হিসেবে অভিহিত করতে পারি। এ ক্ষেত্রে ইংরেজরা যে ধ্বনি সমষ্টি ব্যবহার করবে তা হল- উই রিড বুকস। জার্মানরা এ ক্ষেত্রে বলবে- উইর লেসেন বিলসার। ফরাসিরা বলবে- নুয়াস লিসন্স ডেসলিভার্স। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে, একই ধরনের ধ্বনি সমষ্টি দিয়ে সব মানুষের কাজ চলে না। এক এক ধরণের ধ্বনি সমষ্টি ও ধ্বনি সমাবেশ-বিধিতে এক একটি জনগোষ্ঠী অভ্যস্ত। ভাষা হচ্ছে মানুষের এমন এক অনন্য সুলভ বৈশিষ্ট্য, যা অন্য প্রাণী থেকে মানুষকে স্বাতন্ত্র্য দান করেছে, তার স্বাতন্ত্রের এ অভিজ্ঞানটি সে পৃথিবীতে তার আবির্ভাবের পর ক্রমবিকাশের ধারায় অর্জন করছে। এ অনন্য সুলভ সম্পদটি শুধু তার আছে। কারণ তার প্রয়োজন আছে এ সম্পদের। তার কারণটি অবশ্য আমরা যদি তলিয়ে দেখি তবে দেখতে পাব এর মূলে আছে আবার অন্য একটি আরো গভীরতম মানব বৈশিষ্ট্য, যেটি অন্য প্রাণীর নেই। সেটি হচ্ছে মানুষের মন এবং মনের ক্রিয়াজাত তার চিন্তারাজি। বিবর্তনের ধারায় ঝড়ের পরে প্রাণের বিকাশ হওয়ায় বৃক্ষলতা-পশুপক্ষীর আবির্ভাব সম্ভব হয়েছে। এর পরের ধাপে মনের বিকাশের ফলে মানুষের আবির্ভাব হল। মন আছে বলে মানুষ চিন্তা সম্পদের অধিকারী। নিজের ভাব ও চিন্তার সম্পদকে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে চায় বলে তার প্রয়োজন হয় এক উন্নততর প্রকাশ মাধ্যম যার নাম ‘ভাষা’। শুধু ক্ষুধা-তৃষ্ণা বা অন্য জৈববৃত্তি প্রকাশের তাগিদে ভাষার জন্ম হয়নি। জৈব চাহিদাকে অন্যের মনে সঞ্চার করে সমস্যার সহজতর সমাধানে ভাষা আমাদের সহায়তা করে ঠিক কিন্তু পুরোপুরি জৈব বৃত্তির তাগিদে ভাষার জন্ম হয়নি। যদি শুধু জৈব তাগিদে ভাষার জন্ম হত, তবে জীবজন্তুরা ভাষার জন্ম দিতে পারত অথবা শুধু জৈব প্রয়োজন মিটাতে হলে জীবজন্তুর মতো অস্ফুট ভাষা ও ইঙ্গিত হলে মানুষের কাজ হয়ে যেত। বস্তুর উন্নততর ভাব ও চিন্তাকে প্রকাশের জন্য মানুষের ভাষার প্রয়োজন। এ জন্য চিন্তা ও ভাষার মধ্যে অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক রয়েছে। চিন্তার সঙ্গে, মানুষের মনের সঙ্গে তার আত্মার সঙ্গে ভাষার এ অপরিহার্য সম্পর্ক আছে বলে জার্মান মনিষী হুমবোল্ট আরো গভীরে গিয়ে বলেছেন- মানুষের ভাষা হল তার আত্মা, আর আত্মা হল তার ভাষা। উক্তিটিতে কবি সুলভ উচ্ছ্বাস আছে স্বীকার করি। কিন্তু অস্বীকার করতে পারি না যে, মনীষীর মূল অনুভূতিটি নির্ভূল কারণ ভাষার সঙ্গে মানুষের মন ও তার আত্মার যোগ অবিচ্ছেদ্য। অর্থাৎ ভাষার উৎস তার মনে, মনের চিন্তারাজির প্রকাশের তাগিদে ভাষার জন্ম। ভাষা হচ্ছে মানুষের চিন্তার ধ্বনি মাধ্যম বিকাশ। ভাষাবিদরা বলেছেন, চিন্তা ও ভাষা মূলত এক, পার্থক্য শুধু এটুকু যে চিন্তা হল নিজের সঙ্গে নিজের নীরব কথোপকথন এবং যে প্রবাহটি আমাদের চিন্তা থেকে ধ্বনির আশ্রয়ে ওষ্ঠের মধ্য দিয়ে বয়ে আসে তা হল ভাষা। ভাষা সৃষ্টির মূলে মানুষের দুটি দিক রয়েছে। ব্যক্তি মানুষের মন ও চিন্তা, সমাজবদ্ধ মানুষের ভাব বিনিময়ের ইচ্ছা। অর্থাৎ ভাষার যেমন একটি ভাবগত উৎস আছে, তেমনি একটি সমাজগত চাহিদাও আছে। আধুনিককালে সাহিত্যের যেমন সমাজগত দিকটি বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে, তেমনি ভাষার সমাজগত দিক প্রাথমিক তাৎপর্য লাভ করছে। ভাষা বিজ্ঞানীরা তাই প্রথমে মনে করিয়ে দিচ্ছেন- ‘দ্যা ফার্স্ট পয়েন্ট উই মাস্ট মেক এবাউট ল্যাঙ্গুয়েজ, দেন, ইজ দ্যাট ইট ইজ এ সোস্যাল, র্যাদার দেন এ বায়োলজিকেল অ্যাসপেক্ট অফ হিউম্যান লাইফ।’ তাই ভাষা বিজ্ঞানীরা আজকাল সমস্বরে বলছেন, ‘ভাষা হচ্ছে একটি সামাজিক সংস্থা। এ কথার তাৎপর্য দ্বিবিধ। প্রথমত, ভাষার জন্ম সামাজিক প্রয়োজনে অর্থাৎ সমাজের অন্তর্গত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ভাব বিনিময়ের প্রয়োজনে। দ্বিতীয়ত, ভাষার প্রকৃতি নিয়ন্ত্রিত হয় সমাজের কাঠামো অনুসারে। যে সমাজে শিশুর প্রতি সম্পর্কের আচরণের পার্থক্য আছে, সেখানে তাদের প্রত্যেকের জন্য ভাষার রয়েছে পৃথক পৃথক নাম-সম্পর্ক চিহ্ন। তাছাড়া কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সামাজিক গঠনের পরিবর্তন ঘটছে। ফলে এ সব সম্পর্ক চিহ্নের পরিবর্তন ঘটছে। সামাজিক প্রয়োজনে ও সামাজিক কাঠামো ভাষার প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এসব কারণে আমরা ভাষাকে একটি সামাজিক সংস্থা বলতে পারি। আমাদের সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, সভ্যতার ক্রমবিকাশের দ্বারা যেমন ক্রমোন্নতি লাভ করবে তেমনি তার নতুন নতুন নান্দনিক উপলব্ধি, সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ ভাব ও বৈজ্ঞানিক আবিস্ক্রিয়া প্রকাশের জন্য ভাষাকে হতে হবে তত সূক্ষ্ণ উন্নত ও মার্জিত প্রকাশক্ষম। লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

বাঙালির প্রাণের ভাষা প্রিয় বাংলা ভাষা
আবছার উদ্দিন অলি: ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ খ্যাতিমান গীতিকার আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা ও দেশ বরণ্যে সুরকার আলতাপ মাহমুদের সুরে এই কালজয়ী গানটি একুশের চেতনায় আমাদের উজ্জীবিত করেছে। আমাদের সাহস, অনুপ্রেরণা উৎসাহ যুগিয়েছে। এই একটি গান এত জনপ্রিয় যে, যাকে এখনো অন্য কোন গান জনপ্রিয়তার দিক থেকে অতিক্রম করে যেতে পারিনি। তাইতো একুশের গান বাংলা ভাষার অহংকার। বিনম্র শ্রদ্ধায় পালিত হবে একুশে ফেব্রুয়ারি। বাংলা ভাষা প্রাণের ভাষা। সমগ্র বাংলাদেশের প্রায় ১৮ কোটি লোক বাংলা ভাষা ব্যবহার করে এবং হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকলেই এর বিকাশ ও সমৃদ্ধিতে সাহায্য করে এটিকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে উন্নীত করেছে। ভাষার জন্য আন্দোলনের অর্ধ শতাব্দীকাল পরেও বাংলা ভাষার শহীদরা সেদিন যে স্বপ্ন দেখে নিঃশেষে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন তার কতটা পূরণ হয়েছে, সেই প্রশ্ন উচ্চারিত হয়ে আসছে জনে জনে। স্বাধীনতা পরবর্তী ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা সংবিধান অনুযায়ী বাংলা ভাষা হলেও তার কতটুকু জাতীয় জীবনে প্রবর্তিত হয়েছে বা তার প্রাপ্য মর্যাদা অর্জন করেছে এ প্রশ্ন এখনো অমিমাংসিত। বাংলা ভাষাকে তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণার দাবিতে সেদিন পূর্ববঙ্গের সরকার প্রধান সমীপে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে শত শত নাগরিকের স্বাক্ষর সম্বলিত যে স্মারকপত্র পেশ করা হয়েছিল বাংলা ভাষা ভারতবর্ষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্পদশালী ভাষা এবং বিশ্বে প্রধান প্রধান ভাষাগুলোর মধ্যে একটি বিশিষ্ট স্থানের অধিকার। ১৯৫২-২০২৫ এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় আমরা দেখলাম, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের অন্তহীন প্রেরণার উৎস। সেই ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে বাঙালি তরুণেরা মাতৃভাষার মর্যাদার দাবিতে ঢাকার রাজপথে যে রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন, এই ফেব্রুয়ারির সেই রক্তেরই ডাক শুনেছে সমগ্র বাংলাদেশ। এবারের ডাক ন্যায়বিচারের, মানবতার ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সংঘটিত ইতিহাসের নৃশংসতম অপরাধের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান। ৫২’র শহীদ, তোমাকে সালাম। মাতৃভাষার দাবিতে বাঙালি তরুণদের সেদিনের আত্মবলিদান শুধু ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, ক্রমেই একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন ও অঙ্গীকার দানা বেঁধেছিল। সে স্বপ্নই স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আমাদের পথ দেখিয়েছে। তাই ফেব্রুয়ারি স্বাধীনতা, মুক্তি, সাম্য, গণতন্ত্র-আধুনিক বাঙালির সব শুভ চেতনার মাস। তারপর আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারির মিলেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এই দিবসটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও বটে। মাতৃভাষা বাংলার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের মহিমা ছড়িয়ে পড়েছে ভৌগলিক সীমারেখা অতিক্রম করে পৃথিবীর সব জাতি-গোষ্ঠীর মাতৃভাষার স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে। সত্য, ন্যায়, শান্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের দৃঢ় অঙ্গীকারের বার্তা ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয় এই দিনে। সবার সব পথ এসে মিশে গেছে শহীদ মিনারে। কন্ঠে ছিল সেই চিরচেনা বিষন্ন সুর। অনুপ্রাণিত ভোরের হাওয়ায় মর্যাদা সুমন্নত রাখতে বাংলা মায়ের বীর সন্তানদের বুকের রক্ত ঢেলে রাজপথ রাঙিয়ে দেওয়ার দিন অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। দিনটি সারা বিশ্বে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। একুশ মানেই মাথা নত না করা। একুশ মানেই আন্দোলন, সংগ্রাম, প্রতিরোধ। বিশ্বের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর নিজ নিজ মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশের বিষয়টি তাদের রাজনৈতিক অধিকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আমাদের এই দেশেও সংখ্যার দিক থেকে ছোট অনেক জনগোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন মাতৃভাষা রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতির পাশাপাশি সব সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির স্বকীয় পরিপুষ্টির সুযোগ অবারিত রাখা অত্যন্ত জরুরি। শুধু আনুষ্ঠানিকতায় মাতৃভাষায় মর্যাদা নেই, সর্বস্তরে মাতৃভাষার প্রচলন ঘটলেই কেবল তার মর্যাদা পায়। শিক্ষাসহ জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমে প্রয়োজন একটি জাতীয় ভাষা পরিকল্পনা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন কিছু স্থায়ী প্রতিষ্ঠান ও মানুষ, যাঁরা বাংলা ভাষার বিকাশের লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যাবেন। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক। ১৯৫২ সালের এ দিনে ভাষার মর্যদা রক্ষা করতে প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, শফিক, জব্বার, বরকত, সালামসহ আরও অনেকে। সারাবিশ্বের সকল নাগরিকের সত্য ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সব ভেদাভেদ ভুলে একুশের উদ্বুদ্ধ হয়ে জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার শপথ নেই। লেখক: সাংবাদিক ও গীতিকার, চট্টগ্রাম

মানবিক চেতনার স্বপ্নবাজ কিডনি যোদ্ধা এসএম জাহেদুল হক স্মরণে
হৃদয় বড়ুয়া: মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়। পৃথিবীতে মানুষের শারীরিক উপস্থিতি স্বল্পকালীন। এ সময়ের মাঝে কেউ যদি মহৎ অবদান রাখে, সে-ই প্রতিষ্ঠিত হয় মহাকালের ইতিহাসে। অন্যথায় হারিয়ে যায় কালের গর্ভে। যে মানুষটিকে স্বশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি আজ তার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী। তিনি হলেন এসএম জাহেদুল হক। পেশায় সাংবাদিক হলেও বাস্তব জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী-সংগ্রামী, পরিশ্রমী সত্যনিষ্ঠ হার না মানা একজন স্বপ্নবাজ মানবিক চেতনার মানুষ। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন আর তা বাস্তবায়নে নিরলস নির্ভিক নির্লোভ ভূমিকা পালন করতেন। তাঁর কাছে একটা পিতৃস্নেহ, শাসন, অনুরাগ ও ভালোবাসা পেয়েছি। তিনি ছিলেন আমার শিক্ষাগুরু, আদর্শ সমতুল্য। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি আমাকে হাতে কলমে কাজ শিখিয়েছেন ও মানুষের প্রতি দয়া দাক্ষিণ্য অনুকম্পা প্রদর্শন করা শিখিয়েছেন। সর্বদায় দিয়েছেন উদ্যমী হওয়ার অনুপ্রেরণা। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে একটি ডায়ালাইসিস সেন্টার ও দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি এ সংস্থার পতাকা তলে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী পরিবারসহ বহু গুণী মানুষকে নিজগুণে সমবেত করতে পেরেছিলেন। তাই, তিনি মৃত্যুবরণ করেও বেঁচে আছেন তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ও তাঁর মানবিক চেতনার কর্মকাণ্ডের মধ্যে। এসএম জাহেদুল হক ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলাার উত্তর কাঞ্চনার মিয়া বাড়ির মনুফকির হাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৃত মোজাহেরুল হক ও মাতা মৃত মাহাবুবা বেগম। অত্যন্ত পরোপকারী মেধাবী মানুষটি ১৯৮২ সালে দাখিল, ১৯৮৪ সালে আলিম, কামিল, ১৯৮৭ সালে ফাযিল, ১৯৮৯ সালে বিএ অনার্স ও ১৯৯৮ সালে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন। স্বপ্নবাজ চেতনার মিষ্টভাষী জাহেদুল হকের জীবনের সিংহভাগ সময় মানব সেবায় ব্যয় করেন। তিনি সাংবাদিকতার পেশায় সিএমইউজের সাবেক অর্থ সম্পাদক ও দৈনিক কর্ণফুলী, দৈনিক খবরপত্র, দৈনিক স্বাধীন বাংলা পত্রিকায় ব্যুরো চীফসহ বিভিন্ন পত্রিকায় নানা দায়িত্ব পালন করেন। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ছুঁটে আসা জাহেদুল হকের জীবদ্দশা এত সহজ ছিল না। তিনি সাংবাদিকতা পেশার পাশাপাশি একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থারও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে আচার-আচারণ, নম্র-ভদ্রতায় জয় করেন মানুষের হৃদয়। পরিচিতি পায় জাহেদ ভাই নামে। তাঁর ১০০ ফুটের অফিসে সব স্তরের মানুষ ছুটে আসত। বলা যায়, বুদ্ধিমত্তা ও একজন ভালো পরামর্শক ও দক্ষ সংগঠক ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত হন, নেমে আসে তাঁর জীবন বেয়ে এক কালো অধ্যায়। এ ব্যয়বহুল ডায়ালাইসিস চিকিৎসা চালাতে গিয়ে তিনি হিমশিম খেয়ে যান। এক পর্যায়ে দুটি কিডনি বিকল হয়ে পড়ে। তিনি ২০১৬ সালে ভারতের একটি মেডিকেলে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করেন। ব্যয়বহুল কিডনি চিকিৎসার ভার বহন করতে না পেরে অকালে বিনা চিকিৎসায় বহু মানুষের মৃত্যু তাঁকে ভাবিয়ে তুলে, অংঙ্গীকার করেন তাদের জন্য কিছু করার। জীবদ্দশায় জাহেদুল হক একজন কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগী হওয়ার সত্বেও দিন-রাত হতদরিদ্র কিডনি রোগীদের সেবায় সব সময় অতিবাহিত করে যান। কিডনি রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন একাগ্রচিত্তে। এমন ব্যয়বহুল ডায়ালাইসিস খরচ ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট সামর্থ না থাকা হতদরিদ্র কিডনি রোগীদের কল্যাণের জন্য ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা। তাঁর মেধা, হার না মানা অদম্য প্রত্যয়ে স্বপ্ন নিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলা কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধন পায়। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে একটি ডায়ালাইসিস সেন্টার ও দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে গেছেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ‘যে ভোর চড়ই-ঘুঘু-বুলবুলির রাজত্বে থাকে সে ভোরে ছিল পেঁচার আত্মনাদ’! স্বপ্নবাজ কিডনি যোদ্ধা এসএম জাহেদুল হক আর নেই। এমন না ফেরার দেশে পাড়ি দেয়া স্বপ্নবাজকে দেখে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাঁর বলা একটি শব্দ হৃদয়ে তীব্র আঘাত করেছে যা এখনও করছে ‘হৃদয় কিডনি রোগীদের জন্য একটি হাসপাতাল করে যেতে পারলে আমার আত্মা শান্তি পাবে, কিডনি রোগীদের আত্মনাদ আমাকে ঘুমাতে দেয় না’ ২০২৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাত ৩টায় নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অত্যন্ত মেধাবী-সংগ্রামী, পরিশ্রমী সত্যনিষ্ঠ হার না মানা এই স্বপ্নবাজ মানবিক চেতনার মানুষটিকে নিজ গ্রামে মসজিদের প্রাঙ্গণে পারিবারিক কবর স্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়। তার প্রথধম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাচিত্তে স্মরণ করছি। স্মৃতিতে তিনি অমর হয়ে রবে হৃদয়ে। প্রভু দয়াময় তাঁর অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায় হোন, তাঁর পরিবার-পরিজনের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। এটাই আজকের দিনের একমাত্র কামনা। লেখা: সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী, আজীবন সদস্য- কিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থা

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস: তারুণ্যের হৃদয় ছোঁয়া ভালোবাসা
আবছার উদ্দিন অলি: ডিজিটাল যুগে ভালোবাসার সংজ্ঞা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন কে কাকে ভালোবাসে, আর কে বাসে না, সেটা বুঝাই খুব কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভালোবাসায় বিশ্বাসের জায়গা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ভালোবাসার রঙ বদলায় চাওয়া পাওয়ার এই জীবনে, নিজেকে হারায় যুগে যুগে প্রিয়জনে, স্বার্থের টানে যদি ভালবাসার মাপকাঠি হয়, সে ভালবাসায় নেমে আসে পরাজয় জীবনের প্রতিটি ক্ষণে, সত্যিকারের ভালবাসা যদি থাকে মনে প্রাণে, সেই মানুষের বন্ধন চিরজীবন হয়ে উঠে, ভালবাসার আপনজনে। ১৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) ভালবাসা দিবস। ভালোবাসার দিন, ভালোলাগার দিন। সব সময় ভালোবাসা সবার জন্য ভালোবাসা প্রতিদিন, প্রতিমাস, প্রতিক্ষণ। দেশের জন্য ভালোবাসা, সন্তানের জন্য ভালোবাসা, বাবা-মায়ের জন্য ভালোবাসা, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, বন্ধুর বান্ধবের ভালোবাসা, প্রেমিক প্রেমিকার ভালোবাসা, শুভাকাংখী ও শুভার্থী জন্য ভালোবাসা- সব ভালোবাসার মূলমন্ত্র একটাই, সেটা হলো নিজেকে অন্যের সুখ দুঃখ, হাসি কান্নায় অংশীদার করা। ভালোবাসার জন্য সবচাইতে বেশি প্রয়োজন সুন্দর মন। রুচিশীল চিন্তাভাবনা। কারো ক্ষতি না করার মনমানসিকতা গড়ে তোলা, ভালোবাসায় কারো ক্ষতি, অহংকার, থাকা কাম্য নয়। নিজের সুন্দর মনটাকে সুন্দর ভাবে অন্যকে উপস্থাপন করাই ভালোবাসা। শরীরের প্রতি আকাংঙ্খা, নারী লোভ, মানিব্যাগের প্রতি দূর্বলতা, আধুনিকতার নামে উশৃংঙ্খলতা, উগ্রতা, বিদেশী সংস্কৃতির ছায়া অনুকরণ, আমাদের প্রকৃত ভালোবাসা কালো আধাঁরে অন্ধ গলির চোরাপথে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্ম তথ্য প্রযুক্তির ভালো দিকটার চাইতে খারাপ দিকটাই ঝুঁকে পড়েছে। সাইবার ক্রাইম, ইয়ারা ট্যাবলেট, উগ্র পোশাক, মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, নোটবুক আইফোনসহ অন্য সব ব্যবহৃত জিনিসপত্রে নগ্নছবির ব্যবহার ও তরুন তরুনীদের নগ্ন দৃশ্য ধারন করে ব্ল্যাক মেলিং চলছে। যার কারণে ভালোবাসা, পশুত্বের রূপ লাভ করছে। হচ্ছে খুন, ধর্ষণ, আত্মহত্যা, যৌন হয়রানী, ইভটিজিং, বিবাহ বিচ্ছেদ, কিশোর গ্যাং, মাদকের প্রতি আসক্তি সহ ছড়িয়ে পড়েছে নারীর প্রতি সহিংসতা। চারটি অক্ষরের একটি শব্দ ভালোবাসা। প্রেমের ধরণ হরেক রকম। এই প্রেমকে নিয়ে কবি কবিতা লিখেছেন, গীতিকার লিখেছেন গান, সাহিত্যিক তার ভাষায় প্রকাশ করেছেন নানা রকমের চিন্তাধারা। শিল্পী প্রেম নিয়ে গেয়েছেন গান সেই সাথে বাদ পড়েনি এমনকি বিজ্ঞানীও। দেশে এখন প্রেমিক প্রেমিকার সংখ্যা এত বেশী যে, কল্পনার বাইরে। তা বুঝা যায় শহরে একটা কফি হাউসও প্রতিদিন একটি ঘন্টার জন্যও খালি থাকে না। জোড়া জোড়া কপোত-কপোতি নিরবে আপন মনের কথা বলে যায় ডেটিং স্পটগুলোতে। আবার কখনো কখনো এখানে ভিলেন মাস্তান বখাটেদের আড্ডা বসে। হয়তো একটু উঁকি কিংবা কিছু বাংলা ছবির সংলাপ বড় গলায় বলার জন্য। আবহমান কাল হতেই প্রেম করতে গিয়ে অনেকে হয়েছে নি:স্ব। ছেলে মেয়েদের পছন্দ-অপছন্দের কোন তোয়াক্কাই করেনি অভিভাবকেরা। যদি কোন ছেলে মেয়ে প্রেম করতে গিয়ে কোন বিপদে পড়েছে তাহলে তাকে করা হয়েছে সমাজচ্যুত, কলংকিত এমনকি দৈহিক নির্যাতন করে তার অভিলাষকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রেম করাটা আসলে কেউ ভালো চোখে দেখে না। যদি কোন অভিভাবক শুনে তার ছেলে মেয়ে প্রেম করছে অতঃপর বিয়ে করবে তাহলে কোনভাবেই সেই প্রেম সার্থক হতে দেয় না, ছেলেটা যতই ভালো হোক শিক্ষিত, ভদ্র, ঘরবাড়ী, আয় রোজগার থাকুক না কেন তার অপরাধ সে প্রেম করেছে। এ সমাজে ছেলে-মেয়েদের প্রতিদিনই মিডিয়ায় প্রেম শেখানো হচ্ছে। এমন একটা রীতি গতানুগতিক ধারায় চলে আসছে প্রেম করে বিয়ে করলে সুখী হওয়া যায় না। বড় একটি কুসংস্কার আমাদের সমাজে বিরাজ করছে, একটা সুন্দর মন আর সহনশীল ও আন্তরিক মনোভাব বড় বেশী প্রয়োজন এক্ষেত্রে। ভালোবেসে কেউ ঘর বাঁধে, কেউ ঘর ছাড়ে তবু মানুষ প্রেম করে এবং অনাদিকাল করবে। প্রেম পবিত্র ও পরিস্কার বাস্তবমুখী খাঁটি সুন্দর মন ও মননশীলতার ভেতরে গড়ে তুলতে হবে তবে প্রেমটা হবে নজর কাড়ার মত। এসএমএস, ই-মেইল, ফেইসবুক, ইন্টারনেটে চলছে ভালোবাসার আলাপ চারিতা। ভুল বানান রুচিহীন মেসেজ, অর্ধনগ্ন ছবি আদান-প্রদান চলছে। ভালোবাসার পাত্র-পাত্রীরা মোবাইল কোম্পানীর ফ্রি টকটাইম ও এসএমএস এর বিশেষ ছাড় কখন আসবে সে অপেক্ষায় প্রতীক্ষার প্রহর গুণে। ফেসবুকে নতুন নতুন ছবি ডাউনলোড করা, ই-মেইলে নতুন মন্তব্য লেখা চলছে সমানতালে। হোক শুদ্ধ কিংবা ভুল বানান। রুচিহীন ভালোবাসা চলছে, চলবে। আবার কেউ কেউ বাজার থেকে মেসেজ বই কিনে, ম্যাগাজিন কিংবা নতুন কোন বই থেকে মেসেজ কপি করে প্রিয়জনকে পাঠাচ্ছে। নকলের জোয়ার চলছে। হাতের লেখা চিঠির সেই আবেগ, এই গভীরতা নেই, সেই হৃদ্যতা এখন আর দেখা দেয় না। নিবিড় সুখের বন্ধন আর প্রেমের রহস্যময়তা কিংবা ভালোবাসার যত ছলকলা ভিন্নরূপে ভিন্ন মেজাজে উপস্থাপনা হচ্ছে। তবুও ভালোবাসা, ভালোবাসার মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে। ভ্যালেন্টাইন’স ডে ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখুক অনন্তকাল। লেখক: সাংবাদিক ও গীতিকার

বিচারহীনতার সংস্কৃতি যেন না আসে
গাজী তারেক আজিজ: দেখতে দেখতে ছয় মাস পার করলো অন্তর্বর্তী সরকার। পার করছে চরম বৈরী সময়। এরই মধ্যে ঘটে গেলো আরেক নির্মমতা। গুড়িয়ে দেয়া হলো স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের তীর্থস্থান খ্যাত ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাড়ি। যে বাড়িতে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট স্ব-পরিবারে হত্যাকান্ডের শিকার হন বঙ্গবন্ধুসহ একই পরিবারের মোট ১৭ জন সদস্য শহীদ হন। এ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নিকট আত্মীয় আরও ৯ জন শহীদ হন। সর্বমোট ২৬ জনকে খুনিরা নৃশংসভাবে সে রাতে খুন করে। যা ছিল নজিরবিহীন এক হত্যাযজ্ঞ। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুননেছা, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্ণেল জামিল (বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার), সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক প্রমুখকে খুন করে খ্যান্ত হয়নি খুনিরা। প্রায় একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালিয়ে শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াতের বাসায় হামলা করে সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত, এক আত্মীয় বেন্টু খান, আবদুল নঈম খান রিন্টুকে (আওয়ামী লীগ নেতা আমীর হোসেন আমুর খালাতো ভাই) খুন করে। ওই সময় দেশে না থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ভয়ঙ্কর সেই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর ওই সময় খুনিরা প্রকাশ্যে তাদের এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বিভিন্ন বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে স্বীকার করে। এ হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই বিচারের আওতায় যেন কোন দিন না আসে তাই দেশে নতুন আইন ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ চালু করা হয়। যা ছিলো কালো আইন বলে খ্যাত। নির্মম এই হত্যাকাণ্ড যারা করেছে তাদের বিচারের আওয়াতায় না এনে উল্টো বিচারের পথ আইনগতভাবে রূদ্ধ করার বেআইনী প্রক্রিয়া জাতিকে করেছিলো কলুষিত। শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনি ব্যবস্থা থেকে অনাক্রম্যতা বা শাস্তি এড়াবার ব্যবস্থা প্রদানের জন্যই মূলত বাংলাদেশে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ এ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন। এতে করে তৎকালীন বিচার পাওয়ার পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছে বলে মনে করা হলেও আদতে তা হয়নি। ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায় থেকে বিচার ও শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে সেই কালো আইন কিংবা বিচারহীনতার যে আইনানুগ সংস্কৃতি তা থেকেও দেশ, দেশের বিচার ব্যবস্থা ও বিচারালয় কলুষমুক্ত হতে পেরেছিল বলেও ধরে নেয়া হয়। তথাপিও আরেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রামে সার্কিট হাউজে হত্যা করে। তখন বুঝতে বাকি থাকে না, দেশের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা দেশ বিরোধী চক্র থেমে ছিল না। আর সেটা যুগে যুগে চলমান ছিল, আছে এবং থাকবে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন ব্যক্তিকে ক্ষমতা থেকে হটানো কিংবা হটাতে চক্রান্ত করে দেশকে চরম অস্থিতিশীল করেও কেমন যেন এক ধরনের আনন্দ অনুভব করে আরেক ধরণের লোক। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে হয় কৌশলী হতে হবে অথবা ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকা চাই। যুগে যুগে এই ধরনের অবস্থা বা সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে শাসকদের কেউ কেউ এতটাই কঠোর ও কঠিন হয়েছে যে তা নির্মমতার মাত্রা অতিক্রান্ত করেছে। একটা পর্যায়ে তারা স্বৈরশাসক তকমা পেয়ে আরো বেশিমাত্রায় কঠোর হয়েছেন। সবার কেউ কেউ আরো বেপরোয়া হতেও দ্বিধা করেননি। এই পরিস্থিতি উৎরিয়ে কেউ মহান হতে পেরেছেন তেমনটা দেখা যায় না খুব একটা। আবার শাসকের রোষানলে পড়ে নিজেদের জীবন-যৌবন কাটিয়েছেন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। এইসব নেতারা গণমানুষের রাজনীতি করে জীবন যৌবন উৎসর্গ করেছেন। তেমনই একজন ছিলেন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি মানুষকে ভালোবেসে, বিশ্বাস করে আত্মবলিদান করেছেন স্বমহিমায়, স্বগৌরবে। বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে একটা স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড উপহার দিয়েছিলেন। আর এই সময়ে এসে তাঁকেও চরম দেশপ্রেমের পরীক্ষায় পড়তে হচ্ছে! তা না হলে কেন তাঁর নিজের বাসভবন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও শেষে গুড়িয়ে দেয়া হয়। সভ্য সমাজ তো দূরে থাক, অতীতের সকল সংকটেও কেউ যে বাড়ির দিকে আঙুল তুলে কথা বলার সাহস করেনি, তাই হলো। তারপর কি দেখলাম? মিডিয়ার অতি উৎসাহ যতটা না মানুষকে বিদ্বেষ ছড়িয়েছে ঠিক ততটাই নজিরবিহীন পাহারাদারের ভূমিকাও ছিল লক্ষ্যণীয়। সেটা কেমন? প্রশ্ন থেকে যেতে পারে! তা হচ্ছে আরেক ধরনের গুজব রটিয়ে ফায়দা ওঠানো। যেমন ৩২ নাম্বারের সেই বাড়িটার পার্কিং বেজমেন্টে তথাকথিত আয়নাঘরের সন্ধান লাভের আশায় কথিত ভিউ ব্যবসায়ী অনলাইন মাল্টিমিডিয়ার ক্যামেরা। না হলে সুযোগ মতো সেখানটায়ও কোন না কোন হাঁড়গোড় রেখে আরেক গল্পের ফাঁদ পেতে মিডিয়ার খোরাক বানানো যেত! যা মিডিয়ার কল্যাণে আর হয় নি। দীর্ঘ কয়েকদিনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। আর হতাশ হয় তথাকথিত ‘মবকারীরা’। কিছুই পাওয়া গেল তো না-ই! একটা যেনতেন ছোট দুই তিন ইঞ্চি সাইজের হাঁড় নিয়েও গবেষণার কোন কমতি নেই! একেকজন যেন বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। তা ভালো কথা! পাশাপাশি সারাদেশে শুরু হলো ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা। গাজীপুরে হলো ব্যতিক্রম। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাসায় অগ্নিসংযোগ আর লুটপাট করতে গেলে স্থানীয় জনতার দাবড়ানি খেয়ে পালাতে তো পারলোই না উল্টো হামকার শিকার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কতিপয় নেতা-কর্মীর। এতে ক্ষেপে যায় কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা ও স্থানীয় নেতাদের দাবী তারা সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়ি রক্ষা করতেই গিয়েছিল। আর হামলার শিকার হয়েছে। তারা ভাবতেই পারেনি এভাবে প্রবল বিরোধিতায় পড়তে হতে পারে! কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের কর্মসূচি চলে। এই কয় দিনে আরো দেখা হয় ৩২ নাম্বারের ইট রডসহ খুলে নেয়ে যেতে। সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযানের নামে সেনাবাহিনীসহ যৌথবাহিনীর নেতৃত্বে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। ধরা হতে থাকে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের। বলা হয়েছিল গায়েবী মামলা হচ্ছে। হয়েছেও তাই। সরকারে থেকেই আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বললেন মামলায় নাম থাকলেই যেনতেন গ্রেফতার নয়। পুলিশ প্রধানও একই কথা বারবার বলেছেন। তথাপিও আমরা দেখছি অনেক নিরীহ লোককে ধরে উল্লেখিত গায়েবী মামলায় ফরওয়ার্ড করতে। পাশাপাশি যাদের নাম এজাহারে উল্লেখ করেছে কিন্তু অভ্যুত্থান তথা আন্দোলনে কোন ভূমিকা ছিল না তেমন লোকদের ধরে চালান করা হচ্ছে। এতে কি হচ্ছে? একটা পরিবার আর্থিক ও মানবিক বিপর্যয়ে পড়ছে। উপরন্তু গেপ্তার হলে জামিন পেতে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। আর এক শ্রেণির লোক মামলার তদ্বির বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এই পর্যন্ত ডেভিল হান্টে গ্রেফতার হয়েছে প্রায় ২ হাজার লোক। জানা হয়নি সকলেই আওয়ামী লীগ কর্মী সমর্থক কিনা? তাছাড়া সরকার থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের এবং অন্য যারা গ্রেপ্তার হচ্ছে তাদের ‘ডেভিল’ বলে সম্বোধন করা হচ্ছে। এক শ্রেণির আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকরা তৎকালীন যেমন বেনিফিশিয়ারী নয়। তেমনই এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েও কি রক্ষা হচ্ছে? বোধ করি অনেকটাই অনাকাঙ্খিত এই ঝড় তৃণমূলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকা কর্মীদের জন্য ‘অশনিঝড়’। এ দিকে সরকার থেকেও ঘোষণা করা হচ্ছে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে। এতেও কেউ কেউ সন্দিহান। কারণও অনেকটা স্পষ্ট। রাজনীতিকদের দ্বিচারিতা। তাদের একেক সময় একেক ধরনের বয়ান। কখনো সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া। আবার কখনো প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবী জোরালো করা। আবার যাদের ভোটের মাঠে অতিশয় দূর্বল বলে ভাবা হচ্ছে তারাই আবার প্রার্থী চূড়ান্ত করে ঘোষণা দিতেও শুরু করেছে। অন্যদিকে ভোটের রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত বড় দল বিএনপি ভোটের বিকল্প কিছুই ভাবছে না। তাদের দাবী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন। আবার নেতাদের একেক কথাও পরিষ্কার যথাসময়ে ভোট অনুষ্ঠান হওয়া নিয়ে। এদিকে ভোটের মাঠে যোগ বিয়োগ গুন ভাগের যে সমীকরণ এতে করে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের আরেকটি কমিটি, জাতীয় নাগরিক কমিটিও রাজনৈতিক দল গঠন তথা আত্মপ্রকাশ নিয়ে ঘোষণা দিতেই যদিও বিএনপি স্বাগত জানিয়েছে তথাপিও সতর্ক উচ্চারণে বলেছে সরকারে থেকে কেউ রাজনৈতিক দল গঠন করলে জনগণ ভালোভাবে নিবে না। মূলতঃ জনগণের দোহাই দিয়ে নিজেদের অভিব্যক্তিই প্রকাশ করেছে দলটি। যদিও অভ্যুত্থান পরবর্তী তারা যথেষ্ট চাঙ্গা থাকলেও এখন এই ঘোরচক্র সময়ে কিছুটা হলেও আতিশয্যে ভাটা পড়তে শুরু করেছে। আবার জামায়াত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের জোট গঠন করে চমকে দিতে চাইলেও কতটুকু সক্ষমতা রয়েছে তা নিয়েও বোদ্ধামহল তথা অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোও যথেষ্ট সন্দিহান। আবার ছন্নছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে বলা হচ্ছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি, এবি পার্টিসহ আরো কিছু দল মূলতঃ জামায়াতের বি টীম হয়েই মাঠে রয়েছে। আর যদি ছাত্রদের দল জামায়াতের সাথে ভোটের জোট করে সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সে অভিযোগ নেহাৎই উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই বলেও অনেকেই তেমনটা মনে করছেন। সর্বোপরি সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আহ্বান করা হচ্ছে মব থামাতে। চলছে অপারেশন ডেভিল হান্ট। চলছে গ্রেপ্তার। নির্বাচনী আয়োজন। তথাপিও রাষ্ট্রীয় যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকটাও দেখতে হবে। কথায় আছে ছোটবেলায় পুকুরে ব্যাঙ দেখে বাচ্চাদের ঢিল ছোঁড়ার আনন্দে যেন ব্যাঙের পরিবারে বিষাদের ছায়া না নেমে আসে! ডেভিল বলা হোক আর সন্ত্রাসী বলা হোক নিরীহ লোক গ্রেপ্তার করে বাহবা না কুড়িয়ে সংখ্যা কম হোক তবু যথাযথ হোক। সেটাই কাম্য। আরো উদ্বেগ ভর করেছে দেশের সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন এবং খালাস ও খালাসের প্রক্রিয়ায়। তেমন দৃষ্টান্ত না হোক যা ভবিষ্যতে নিজের বিরুদ্ধে যায়! লেখক: অ্যাডভোকেট, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই ও আমাদের করণীয়
প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালিত হয়। যার মূল লক্ষ্য ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন নিশ্চিত করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং বিভিন্ন ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা এই দিবসকে কেন্দ্র করে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে। যার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ, নির্ণয় ও চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর প্রায় ১০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুসফুস ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, অন্ত্র ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সার।গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৮০% ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি আমরা সচেতন হই এবং সঠিক জীবনযাত্রা অনুসরণ করি। ক্যান্সারের বিভিন্ন কারণ রয়েছে যার মধ্যে কিছু প্রতিরোধযোগ্য। জেনেটিক কারণ ছাড়াও জীবনযাত্রার ধরন, খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশগত দূষণ, ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ক্যান্সার প্রতিরোধেসঠিক পুষ্টি ও ভিটামিন গ্রহণ ছাড়া কোন বিকল্প নেই।শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন।বিশেষ করে ভিটামিন ডি, বি১, বি১২ এবং থার্টিন শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট সকালে রোদে থাকা উচিত যা শরীরে ভিটামিন ডি উৎপাদনে সহায়তা করে। রাসায়নিক ও কেমিক্যালযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।ভেজালমুক্ত ও অর্গানিক খাবারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকযুক্ত খাদ্যদ্রব্য পরিহার করা জরুরি। প্রায় ৩০-৫০% ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য, যদি আমরা কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চলি।বেশি পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল, আঁশযুক্ত খাবার এবং কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন গ্রহণ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপান ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ।শতকরা প্রায় ৪০% ক্যান্সার ধূমপান ও বায়ু দূষণের কারণে হয়।তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ফলে ফুসফুস, মুখগহ্বর, গলা ও পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলেধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করতে হবে। ধূমপান পরিহার করলে এবং দূষিত বাতাস থেকে দূরে থাকলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।মোবাইল ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের অতিরিক্ত আসক্তি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম এড়ানো উচিত।বাসা-বাড়িতে মশার কয়েল ও ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত স্প্রে কম ব্যবহার করতে হবে।বায়ু দূষণ ও অন্যান্য পরিবেশগত দূষণ ৩৫% ক্যান্সারের জন্য দায়ী। দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। স্থূলতা অনেক ধরনের ক্যান্সারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার সফলতার হার অনেক বেশি থাকে। তাই নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করা জরুরি।বর্তমানে ক্যান্সার চিকিৎসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ইমিউনোথেরাপি, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি ও জেনেটিক থেরাপির মাধ্যমে এখন ক্যান্সার চিকিৎসা অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। তবে ক্যান্সারের নিরাময় এবং উন্নত চিকিৎসা সবার জন্য সহজলভ্য করা এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখার মাধ্যমে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। আমরা যদি নিজেরা সচেতন হই এবং পরিবার ও আশপাশের সবাইকে সচেতন করি, তাহলে এই মরণব্যাধি থেকে বাঁচতে পারব।এই বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে আসুন আমরা প্রত্যেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই—ক্যান্সার সম্পর্কে জানব, সচেতন হব এবং অন্যদেরও সচেতন করব। লেখক : সৈয়দ হুমায়ুন কবিরক্যান্সার গবেষক ও সভাপতি ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ।

বিশ্বায়নের নতুন রূপ ও জলবায়ু পরিবর্তন
আফতাব চৌধুরী: একবিংশ শতাব্দীতেও বিশ্বায়নের সংজ্ঞা নিয়ে সমাজ চিন্তাবিদদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। বিশ্বায়ন কি ধনতান্ত্রিক সমাজের বিশ্বব্যাপী আগ্রাসন? অথবা ম্যাকডোনা লাইজেশন, নাকি সাংস্কৃতিক আগ্রাসন? কেউ কেউ আবার সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ, বিশ্ব-বৈশ্বিক গ্রাম এসব প্রপঞ্চ দিয়েও ব্যাখ্যা করেছেন বিশ্বায়নকে। বিশ্বায়ন একটি পুরনো প্রত্যয় এবং শুধু পশ্চিমাকরণ নয়। বিশ্বায়নের ঢেউয়ের ধারাবাহিকতায় জ্ঞানের বিকাশ, ধর্মের প্রসার, মানুষ, পণ্য, প্রযুক্তি ও ভাষার গতিশীলতা ঊনবিংশ শতাব্দীর বহু আগেই শুরু হয়েছে। যেমন সীমান্ত ছাড়িয়ে ইন্দোনেশিয়া অথবা চীনে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটে। অথবা ইংরেজি সার্বজনীন ভাষায় পরিণত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে আধুনিক রাষ্ট্র, অলিম্পিক, আন্তর্জাতিক সম্মেলন তথ্য প্রযুক্তি ইউরোপের বাইরে প্রসারিত হতে তাকে। আন্দ্রে গুন্ডার ফ্রাংক এ সময়েও বলেছেন, ‘বিশ্বায়নের কেন্দ্র ছিল চীন ও ভারত।’ বিশ্বায়নের ইতিবাচক দিক হিসেবে বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, দারিদ্র উপশম-নিরসন ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারকে ইঙ্গিত করা হয়। আর এর নেতিবাচক দিকগুলোর উল্লেখ বহু পুরনো ও প্রতিষ্ঠিত- সেগুলো হল সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতা, দাসত্ব, সমাজে চরম অসমতা সৃষ্টি। তবে একবিংশ শতাব্দীতে এসে পশ্চিমা বিশ্বের একচ্ছত্র আধিপত্য খর্ব হতে দেখা যায়। উদ্ভব হয় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর। বাজার ব্যবসায়ের নতুন মাত্রা ব্রাজিল, রাশিয়া ও চীনের মত দেশগুলোকে শক্তিশালী করে তোলে। উত্তর আধুনিকতাবাদী তাত্ত্বিকদের অনেকেই তাই নতুন করে সমাজ সম্পর্কে তত্ত্ব দিতে শুরুকরেন। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকেও এ সময়ে ছাড়িয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর প্রচার মাধ্যম। আর এর মাধ্যমে বিভিন্ন আদর্শ ও মতবাদ পুরো বিশ্বকে জয় করে নিচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে যেসব সংকট তৈরি হচ্ছে, তার পেছনে কোন বিশ্বযুদ্ধ নেই বা তা সমাধানের জন্য কোন একক শক্তি নেই; বরং সব নিয়ন্ত্রণ করছে প্রযুক্তি ও প্রচারনির্ভর বাজার ব্যবস্থা। সংকট নিরসনে রাষ্ট্র যেন আর নিজের অবস্থানে থাকতে পারছে না। বিশ্ব একটি প্রাচীন প্রক্রিয়া ও তার কিছু সুফলও আছে। কিন্তু একটি রাষ্ট্র ও নাগরিকদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব যে বিশ্বায়নের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে, সে প্রশ্ন কি আজও আমাদের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে না? একটি দুর্বল রাষ্ট্রের নীতিমালা বা প্রতিশ্রুতি পূরণ নির্ভর করছে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলোর উপর- তারা আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা, চীন, জাপান যে-ই হোক না কেন। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশগুলোর নিজস্ব বাজার ব্যবস্থা পরাজিত হয় বিদেশী বিনিয়োগের কাছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য শিল্পের উপরই নির্ভর করতে হয় অথবা বড়জোর নির্ভর করতে হয় মানবসম্পদের উপর। বর্তমান বিশ্বায়ন তাই একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডের রাজনৈতিক শক্তি ও অনুপস্থিত অর্থনৈতিক শক্তির মাঝে ক্ষমতার খেলা। সে খেলা বস্তুত জন্ম দেয় অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির রাজনৈতিক অর্থনীতি। বিশ্বায়নের মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানব সমাজ নিজেকে আধুনিক প্রমাণ করেছে হয়তো বা কিন্তু প্রানহীন করেছে অন্যান্য প্রজাতি ও জীববৈচিত্র্যকে। পরিবেশগত, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিজীবনের বিচ্ছিন্নতা প্রযুক্তিকেন্দ্রিকতার সরাসরি ফল। জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ফলে বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দুর্বল দেশগুলো। কোপেনহেগেনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এটি যেমন স্বীকার করা হয়েছে, তেমনি এশীয় দেশগুলো যে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়বে তাও তুলে ধরা হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর মত আমরা নিজেরাও জানি না, সম্পদ উৎপাদন ও ব্যবহার ঝুঁকিকেও সামাজিকভাবে উৎপাদন করছে। বিশ্বায়নের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর আধুনিকতাবাদী তাত্ত্বিকদের প্রচার মাধ্যমকে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসাবে দেখানোকে তখনই সাধুবাদ দেওয়া যাবে যখন প্রচার মাধ্যম এ ঝুঁকিগুলোকে বিশ্বব্যাপী প্রচার ও তা নিরসনে ব্যাপক সহায়তা করবে। সার্বভৌম রাষ্ট্রকে তার নিজের অবস্থান ফিরিয়ে আনতে এ মাধ্যমই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ভোগবিলাসী জীবনে এ উপমহাদেশের অধিকাংশ দরিদ্র মানুষের অংশগ্রহণ নেই- কার্বন নির্গমনের হার শূন্যের কোঠায়- তবু কেন তারাই জলবায়ু পরিবর্তন বা পরিবেশ অবক্ষয়ের জন্য সবচেয়ে বেশী মূল্য দিবে? সনাতনী ঢঙে পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ বা পশ্চিমা শক্তিকে মোকাবিলা করতে না- পারলেও নিজেদের জ্ঞান দিয়ে নিজেদের দুর্যোগকে তো আমরা মোকাবিলা করেছি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিপূরণের জন্য যেখানে কোপেনহেগেনে কার্যকর অংশগ্রহণ করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি, সেখানে রাজপথে দাঁড়িয়ে নদী বাঁচাও, পলিথিন ব্যবহার বন্ধ, টু স্ট্রোকবিশিষ্ট ইঞ্জিন বন্ধ, বিষাক্ত রাসায়নিক সার বা দ্রব্য আমদানী বন্ধ করতে তো মানুষ সাফল্য পেয়েছে। তাই, বিশ্বায়নের আগ্রাসী ভাব রুখতে হলে সম্মিলিত সামাজিক শক্তির কোন বিকল্প নেই। প্রযুক্তি ব্যবহারের নীতিমালা, পরিবেশবান্দব প্রযুক্তি গ্রহণ করা না করা সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ আরো কার্যকরভাবে থাকা জরুরি। নতুন করে ভাবতে হবে। যুদ্ধের সময় যখন পশ্চিমা দেশসহ প্রায় সারা বিশ্বের মানুষ ও প্রচার মাধ্যম পাশে এসে দাঁড়ায়, মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে যখন ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ কথা বলে- সেখানে রাজনৈতিক অর্থনীতি ততটা অনুপ্রেরণা দেয় না। যতটা দেয় মানবিকতাবোধ। এসব ভূমিকাও বিম্বায়নের সংজ্ঞায় পড়ে, তাই ঝুঁকিপূর্ণ পৃথিবী ও সমাজকে ঝুঁকিমুক্ত করে বাসযোগ্য করার জন্য প্রয়োজন বর্তমান বিশ্বের গতি-প্রকৃতিকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা। লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

দ্বৈত নাগরিকদের রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো যাবে না
মো. মনিরুজ্জামান মনির: আপনার এক পা বাংলাদেশে। আরেক পা ব্রিটেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে, কানাডা, ভারত কিংবা অন্য কোন উন্নত দেশে। আপনি বাংলাদেশকে টাকা কামানোর স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন। চুরি-বাটপারি, ঘুষ-দুর্নীতি, অবৈধ বাণিজ্য, নোংরা হাতে লুটপাট করে ওই সব দেশে টাকা পাচার করেছেন। গড়ে তুলছেন সম্পদের পাহাড়। আপনার কাছে জাতি কী প্রত্যাশা করতে পারে? আপনি কিই-বা দিতে পারেন? নিঃসন্দেহে বলা যায়, দেওয়ার মতো আপনার কাছে কিছুই নেই! কারণ আপনি যে-দেশের আলো-বাতাসে বড় হয়েছেন; খাবার খেয়েছেন; শুধু মোহের কারণে সেই দেশের সাথে প্রতারণা করছেন। আপনাকে জাতির কুলাঙ্গার বললে অত্যুক্তি হবে না বৈ কি! বলছিলাম দেশের নিয়ম ভেঙে যারা দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন; আমলা, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী হয়েছেন; অর্থ পাচার করেছেন- তাদের কথা। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি সাংসদ বা মন্ত্রী হতে পারেন না। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এ বিষয়ে বলেন, ‘বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তির সাংসদ নির্বাচিত হওয়া বা মন্ত্রিত্ব লাভের সুযোগ নেই। তথ্য গোপন করে যদি এ কাজ হয়ে থাকে, তাহলে আইন ও সংবিধান পরিপন্থী কাজ হয়েছে।’ সংবাদ মাধ্যম বলছে, ‘ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গোপনে সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ‘রেসিডেন্স কার্ড’ রয়েছে বেলজিয়ামের। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যুক্তরাজ্যের নাগরিক; সাবেক দুই প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও জুনাইদ আহম্মেদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ‘গ্রিন কার্ড’ (বৈধ অনুমতি) রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও সাংসদ ছিলেন- এমন ২৪ জনের দ্বৈত নাগরিকত্ব (রেসিডেন্স কার্ড বা গ্রিন কার্ড) থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিদেশি নাগরিকত্ব পেতে হলে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কোনো কোনো দেশে রেসিডেন্স কার্ড বা গ্রিন কার্ড পাওয়ার পরের ধাপে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। সাবেক পাঁচজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নাগরিকত্ব রয়েছে যুক্তরাজ্যে। তারা হলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল, মো. তাজুল ইসলাম, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মো. মাহবুব আলী। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বা গ্রিন কার্ড রয়েছে সাবেক চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ সাতজন সাবেক সাংসদের। তারা হলেন আব্দুস শহীদ, নসরুল হামিদ, জুনাইদ আহম্মেদ, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, মাহফুজুর রহমান ও সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ। কানাডার নাগরিকত্ব রয়েছে এমন ছয়জনের নাম পেয়েছে দুদক। তাদের মধ্যে একজন সাবেক মন্ত্রী, অন্যরা সাবেক সাংসদ। এর মধ্যে রয়েছেন আবদুর রহমান, মাহবুব উল আলম হানিফ, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, শামীম ওসমান, শফিকুল ইসলাম শিমুল ও হাবিব হাসান। সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব রয়েছে সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এবং জাপানে থাকার অনুমতি (রেসিডেন্স কার্ড) রয়েছে সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের। সাবেক সাংসদ (টাঙ্গাইল-২ আসন) তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির জার্মানির নাগরিক এবং সাবেক সাংসদ (ময়মনসিংহ-১১) এমএ ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনির নাগরিকত্ব নিয়েছেন। বিএনপি-জাপার কী অবস্থা: বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় নেই ১৮ বছর। এর আগে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তিন বার দলটি সরকার গঠন করে। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বেও দলটি সরকার গঠন করেছিল। এর বাইরে প্রায় সব সংসদে তাদের দলের প্রতিনিধি ছিলেন। তাদের কেউ কি বিদেশি নাগরিকত্ব গোপন করে এমপি-মন্ত্রী হয়েছিলেন কি না; সেটাও পরিষ্কার করা দরকার। অন্যদিকে, দেশের আরেকটি বড় দল জাতীয় পার্টি। এই দলটি প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে টানা ৯ বছর দেশ শাসন করেছিল। এর বাইরে তারা সব সময় সরকারের কাছাকাছি থেকে ক্ষমতা ভোগ করেছে। তাদের দলের নেতারা এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। তাদের কেউ বিদেশি নাগরিক কি না- সেই প্রশ্ন উঠেছে। দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের বিদেশি নাগরিক বলে কিছু দিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। যদিও এটা সত্য কিনা, তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। আশা করি, জাতীয় পার্টি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিষয়টি খোলাসা করবে। আর যদি সেটা তারা না করে, তাহলে ‘সন্দেহ’ বা অপপ্রচার আরও ঘনিভূত হবে। মনে রাখতে হবে অপরাধ কখনো চাপা থাকে না। এটা প্রকাশ পায়- আজ নয়তো কাল। আর তখন সেটা ইতিহাসের কালো অধ্যায় হয়ে থাকে। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত কিংবা অন্য কোনও দলের নেতা দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন কি না; দুদককে সেই বিষয়টিও তদন্ত করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারে দ্বৈত নাগরিক আছে কি না: বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যারা আছেন; তাদের কারো বিদেশি নাগরিকত্ব আছে কি না; তা প্রকাশ করা জরুরি। আশা করি, তারা নিজেরাই বিষয়টি খোলা করবেন। যদি তাদের কারো বিদেশি নাগরিকত্ব থেকে থাকে; তাহলে তিনি-তারা সংবিধান ভায়োলেট করে শপথ নিয়েছেন। তার বা তাদের উচিত পদত্যাগ করা। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস জার্মানির নাগরিক বলে গুঞ্জন রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলছেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে আইনকানুন, বিধিবিধান ও নৈতিকতার তোয়াক্কা করত না। এই সরকার অবশ্যই নিয়ম মেনে দেশ পরিচালনা করবে- এটাই দেশের মানুষ প্রত্যাশা করছে।’ বিদেশে সম্পদের পাহাড়: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী আবদুস সোবহান গোলাপের পরিবারের যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক ফ্ল্যাট বা বাড়ি রয়েছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) তাদের ওয়েবসাইটে গত বছরের জানুয়ারি মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন গোলাপ। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন। এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি (ডলারের বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৪২ কোটি টাকা)। সালমান এফ রহমানের সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব থাকলেও তার ‘বাগানবাড়ি’ যুক্তরাজ্যে। সেখানে তার চারটি বাড়ি রয়েছে। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৬-২০২১ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও আরব আমিরাতে ৬২০টি বাড়ি কিনেছেন; যার বাজারমূল্য প্রায় ৪৮ কোটি ডলার (প্রায় ৫ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা)। গত ৩১ অক্টোবর গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি উল্লেখ করেছে সিআইডি। এর আগেই গত সেপ্টেম্বর মাসে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আল-জাজিরার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিপুল সম্পদ থাকার বিষয়টি তুলে ধরে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বাড়ি রয়েছে লন্ডনে। তার এক মেয়ে আগে থেকেই লন্ডনে থাকেন। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান কানাডার নাগরিক। দেশটির টরন্টো শহরে তার বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া দুবাইয়ের আজমান শহরে তার আরেকটি বাড়ি রয়েছে। কানাডায় বাড়ি, ব্যবসাসহ বিপুল সম্পদ রয়েছে ফেনীর সাবেক সাংসদ আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর নাসিম। তার মেয়ে কানাডায় থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি রয়েছে মানিকগঞ্জের সাবেক সাংসদ সালাহউদ্দিন মাহমুদ জাহিদের। তার মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। নাটোরের সাবেক সাংসদ শফিকুলের বাড়ি রয়েছে কানাডার টরন্টোর নিকটবর্তী স্কারবরো শহরে। গত বছরের শুরুতে বাড়িটি কেনা হয়। সাংসদদের ঘনিষ্ঠ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ‘বাড়িটি কিনতে ১৭ লাখের বেশি কানাডিয়ান ডলার খরচ হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ১২ কোটি টাকা।’ এ ছাড়া, সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও তার ছেলের নামে দুবাইয়ে বড় ধরনের বিনিয়োগ থাকার বিষয়টি জানতে পেরেছে দুদক। অনুসন্ধানে যুক্ত দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ‘সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদদের মধ্যে যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, তাদের সবার বিদেশে বাড়ি-গাড়িসহ বিপুল সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছেন তারা। অনুসন্ধান শেষে দ্বৈত নাগরিকত্বসহ বিদেশে বাড়ি-বিনিয়োগ ও টাকা পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য মামলায় উল্লেখ করা হবে।’ অর্থপাচার: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান গত ২ নভেম্বর এক সেমিনারে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে মোট কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব নয়। ব্যাংকের মতো আনুষ্ঠানিক মাধ্যম ব্যবহার করে ১৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচারের কথা জানা যায়। বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতার বলয় প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের মাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসা- এই ত্রিমুখী আঁতাত মৌলিক ভূমিকা পালন করেছে। সব প্রতিষ্ঠানেই দীর্ঘ সময় ধরে দলীয়করণের চর্চা হয়েছে; গত ১৫-১৬ বছরে যার চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখেছি। এতে আমলাতন্ত্রকে কর্তৃত্ব দিয়েছে রাজনৈতিক শক্তি আর তা বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন এজেন্সিকে। ফলে, এসব জায়গায় কতটুকু পরিবর্তন আনা যাবে, তা গুরুত্বপূর্ণ। যে পরিবর্তন আসবে বলে আমরা আশা করছি, তা যেন টেকসই হয়।’ যারা টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে।’ আমরা আশা করব, দুদক যেন কেবল আশ্বাসই না দেয়। সেটার বাস্তব প্রতিফলনও ঘটাতে হবে। বেগমপাড়া: কানাডার প্রধান নগরী টরন্টো। এটি কানাডায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের সবচেয়ে প্রিয় আবাসস্থল। সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এটি ‘বেগমপাড়া’ নামে বাংলাদেশিদের কাছে ব্যাপক পরিচিত। তবে বেগমপাড়া বলে সেখানে কোন স্থানের নাম নেই। এটি কেবলই মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া একটি নাম। সেখানে বাংলাদেশি প্রাসাদসম বিপুল সংখ্যক বাড়ি রয়েছে। টরন্টো নগরীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় এবং টরন্টোর আশপাশের ছোট ছোট শহর মিসিসওগা, হ্যামিল্টন, গুয়েল্ফ ও অন্টারিও লেকের পাড়ঘেঁষা উপশহরগুলোর প্রাসাদসম অট্টালিকা বা ‘লেকশোর অ্যাপার্টমেন্ট’ ক্রয় করে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশি ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বেগমপাড়া। এসব বাড়ি কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট সাধারণ কানাডীয় নাগরিক কিংবা কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের ক্রয়ক্ষমতার আওতায় থাকা বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট নয়। এগুলোর দাম প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার (১০ কোটি টাকার সমমূল্যের) থেকে শুরু করে ২-৩ মিলিয়ন ডলার (২০-৩০ কোটি টাকার সমমূল্যের) হয়ে থাকে। মূলত দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক, আমলা, সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে নিয়ে কানাডায় এসব বাড়ি কিনেছেন। তাদের অধিকাংশ গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে সে-দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। বাংলাদেশে মাল কামানো (টাকা লুটপাট) শেষ হলে একটা সময় তারা উড়াল দেবেন সেখানে। বিতর্কিত ক্রিসেন্ট, বিসমিল্লাহ এবং বেক্সিমকো গ্রুপসহ ঢাকা ও চট্টগ্রামের চল্লিশটি প্রতিষ্ঠান গত এক দশকে রপ্তানি আয় থেকে উপার্জিত ৫৮৮ মিলিয়ন ডলার দেশে আনেনি। ঢাকাভিত্তিক শীর্ষ ২০টি প্রতিষ্ঠান ৫৫৯ মিলিয়ন ডলার এবং চট্টগ্রামভিত্তিক শীর্ষ ২০টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় দেশে আনেনি। সব মিলিয়ে এই ৪০টি প্রতিষ্ঠান এখনো প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে পারেনি বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এসব আমলা, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে বলে আশাকরি। এস আলম ও আজিজ খান: বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম। বাংলাদেশে ভোজ্যতেল আমদানি থেকে পাওয়ার প্ল্যান্ট- সবই আছে এই গ্রুপের। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অনেক বেসরকারি ব্যাংক। তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা আটটি ব্যাংকের মধ্যে চারটি ব্যাংক থেকে ঋণের নামে লুট করেছে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ধনকুবের ও ব্যবসায়ীরা ব্যাংকখাত থেকে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। এর মধ্যে কেবল এস আলম-ই অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। বিতর্কিত এই শিল্পপতি বাংলাদেশের পাশাপাশি সিঙ্গাপুরের নাগরিক ছিলেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি বাংলাদেশের নাগরিত্ব ত্যাগ করেছেন। অর্থাৎ তিনি এখন সিঙ্গাপুরের নাগরিক। ব্যবসার নামে তিনি যে লুটপাট করেছেন; হয়তো সেই অপরাধের বিচার আর করা যাবে না। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরেই স্থায়ী নিবাসী (পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট) হিসেবে সিঙ্গাপুরে বসবাস করে আসছেন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। সম্প্রতি তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। দেশটির আইনে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ না থাকায় আজিজ খানকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হয়েছে। সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় আজিজ খান রয়েছেন। আজিজ খান ১৯৮৮ সাল থেকে সিঙ্গাপুরে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বসবাস করছেন এবং ২০১৬ সালে সামিটের প্রধান কার্যালয় সিঙ্গাপুরে স্থানান্তর করেন। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ১১০ কোটি ডলার। সামিট গ্রুপ বাংলাদেশে জ্বালানি- বিশেষ করে বিদ্যুৎখাতের বড় ব্যবসায়ী। তার ভাই কর্নেল (অব.) ফারুক আওয়ামী লীগের নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী। বিগত সরকারের সময় এই গ্রুপ বিভিন্নভাবে সরকারের আনুকূল্য পেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি: বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে যারা দেশে মন্ত্রী-সাংসদ হয়েছে; তারা প্রতারক। তারা এদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তাদের শপথ গ্রহণই ছিল অবৈধ। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিচারহীনতার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। তথ্য গোপন ও প্রতারণা করা ওই সব প্রভাবশালীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। তাদের অনেকে পালিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। আবার অনেকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। যারা কারাগারে আছেন; তাদের বিচার করাটা হয়তো সহজ। আর যারা বিদেশে পালিয়ে গেছেন; তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। যেসব রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ী অর্থপাচার করেছেন তাদের ছবিসহ সংবাদ প্রচার করতে হবে। এতে মানুষ তাদের আসল চেহারাটা দেখতে পাবে। লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি।