ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সাংসদ প্রার্থী শরীফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ( কুবি) শিক্ষার্থীরা। এসময় বিভিন্ন বিক্ষুব্ধ স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
শুক্রবার ( ১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল ফটকে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা, ‘হাদি ভাই গুলিবিদ্ধ, ইন্টেরিম জবাব দে', 'লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই', ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, 'দালালী না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, 'রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়', ‘দিল্লী না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, 'তুমি কে আমি কে, হাদী হাদী', ‘ভারতীয় আদিপত্য, ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও’- ইত্যাদি স্লোগান তুলে তীব্র প্রতিবাদ জানায়।।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরাফ ভুঁইয়া বলেন,‘জুলাই পরবর্তী সময়ে আমরা বারবার একটি কথা বলে আসছিলাম, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে হবে, আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে হবে, লীগের সন্ত্রাসীদের ঠেকাতে হবে। গত ১৭ বছর তারা শুধু ক্ষমতা বিস্তার করেনি, তারা তাদের অস্ত্রভান্ডারও সমৃদ্ধ করেছে। অস্ত্রের জোরে টিকে থাকার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আপনারা দেখবেন এই সরকার সেই অস্ত্র উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কিংবা এসব সন্ত্রাসীকে ঠেকাতেও ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা জানি তারা কী চায়, তারা চায় জুলাই যোদ্ধাদের শেষ করে দিতে, তারা চায় বাংলাদেশ থেকে জুলাইকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। আমরা দেখছি বাংলাদেশে হাদি ভাইয়েরা অনিরাপদ; সে বাংলাদেশে আমি আপনিও নিরাপদ নই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই হাদি ভাইয়ের ওপর হামলাকারীদের অতি দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
ইনকিলাব মঞ্চ কুবি শাখার আহ্বায়ক হান্নান রহিম বলেন, 'হাদী ভাই জুলাইয়ের অন্যতম যোদ্ধা। তিনি সবসময় ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। আমরা দেখেছি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলায় আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। ভারত কখনো বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না। একটা কথা আছে ভারত যাদের বন্ধু, তাদের শত্রুর প্রয়োজন হয় না। ৫ আগস্টের পর থেকেই ভারত আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। যখন তারা দেখলো আওয়ামী লীগ ছাড়াই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে, তখনই তারা জুলাই যোদ্ধাদের টার্গেট করেছে।’
তিনি আরও বলেন, 'হাদি ভাইয়ের ওপর হামলাকারীকে আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তরকারিতে আলু চেক করেন- এমন অচল মাল দিয়ে দেশ চলতে পারে না। সামনে বাংলাদেশ অনেক সংকটের মধ্য দিয়ে যাবে। তাই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বহিষ্কার করতে হবে। সর্বোপরি নির্বাচনের আগে সব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।'
কুবি ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক আবির বলেন, '২৪ জুলাইয়ের রক্তঝরা আন্দোলনে আমরা যে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করেছিলাম, স্বাধীনতার পর আবার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে হবে এটা কখনো কল্পনাও করিনি। আমরা ভেবেছিলাম স্বাধীনতার পর নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। কিন্তু নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন এটাই প্রমাণ করে আমরা এখনও নিরাপদ নই। দীর্ঘ ১৭ বছর ভারতীয় আধিপত্য আমাদের গ্রাস করে রেখেছে; ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে কণ্ঠই উঠেছে, তাকে নির্মমভাবে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'বুয়েটের আবরার ফাহাদ যখন সত্য উচ্চারণ করেছিলেন, তাকে হত্যা করা হয়। ইনকিলাব মঞ্চের হাদি ভাই যখন জুলাইয়ের চেতনাকে ধরে রেখে দুর্নীতি, ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, তাকেও একই কায়দায় সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই জুলাইয়ে রক্ত দিয়ে যে আওয়ামী মসনদ ভেঙে দিয়েছি, কিছু নতুন শকুন আবার সেই কায়দায় আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে চাইছে। এখনই যদি সতর্ক না হই, তবে খুব শিগগিরই আবার বদ্ধ শিকলে ফিরতে হবে আমাদের।'
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরে বক্স কালভার্ট রোডে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সাংসদ প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ হন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।