
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সংকটাপন্ন নদীগুলো পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপের মিলনায়তনে পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনারে পরিবেশ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে পানি ও পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজওয়ানা হাসান চলমান উদ্যোগ সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করে আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদারদের সাথে আলোচনার কথা উল্লেখ করেন এবং বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আগ্রহের কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘নদীগুলো পুনরুদ্ধার কঠিন, তবে সম্ভব। এবং এটি আজই শুরু করতে হবে।’
রিজওয়ানা হাসান নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্যকার বড় ব্যবধানের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘মূল চ্যালেঞ্জ হলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতির অভাব। ঢাকা সাতটি নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত হলেও এখানে পানি সংকট তীব্র। মানুষ তাৎক্ষণিক সমাধান আশা করে- আজ বিশুদ্ধ বাতাস, আগামীকাল পরিষ্কার নদী। কিন্তু বছরের পর বছর অবহেলিত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত পরিবেশ একদিনে পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।’
উপদেষ্টা জানান, অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের কারণে নদীগুলো তাদের স্বাভাবিক প্রবাহ হারাচ্ছে। যেসব নদী একসময় সাগরে মিলিত হতো, সেগুলো এখন শুকিয়ে যাচ্ছে। এগুলো শিল্প বর্জ্যের নর্দমায় পরিণত হয়েছে। আমাদের অবশ্যই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে।
সীমান্তবর্তী পানি ভাগাভাগির বিষয়ে তিনি কৌশলগত প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। রিজওয়ানা হাসান জানান, বাংলাদেশ ইউরোপীয় কনভেনশন অন শেয়ারড লেকস অ্যান্ড রিভার্স অনুসমর্থনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পানি আলোচনা শক্তিশালী করবে।
বন্যা ব্যবস্থাপনায়, তিনি বাংলাদেশের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান সম্পর্কে বলেন। ‘নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, বন্যা প্রতিরোধ ও জনগণের প্রস্তুতির জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আমাদের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা আরও কার্যকর হতে হবে এবং জনগণের ভাষায় তথ্য পৌঁছাতে হবে।’
রিজওয়ানা হাসান অতিরিক্ত বন্যাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখার প্রবণতার বিরোধিতা করে কৃষি, মৎস্য, নৌপরিবহন ও পানীয় জলের সুরক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানান। ‘আমাদের জনগণ দৃঢ়, কিন্তু শুধু দৃঢ়তা যথেষ্ট নয়। বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে বড় নদীগুলো রক্ষা এবং বন্যা ঝুঁকি কমাতে রিয়েল-টাইম তথ্য শেয়ার করতে হবে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়তে থাকায়, তিনি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের ওপর জোর দেন। ‘পরিবর্তনের একটি সীমা আছে। বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন কমানো না গেলে, আমরা কতটুকু মানিয়ে নিতে পারব? জলবায়ু পরিবর্তন শুধু আমাদের লড়াই নয়, এটি একটি বৈশ্বিক দায়িত্ব।’
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। বক্তব্য দেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) নির্বাহী পরিচালক এসএম মাহবুবুর রহমান, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান, ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মনিরুজ্জামান এবং আইসিডব্লিউএফএম ২০২৫’-এর আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান জিএম তারেকুল ইসলাম।