
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে তিনটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে এই তালিকায় নিজের দল ‘আমজনতার দল’ না থাকায় আমরণ অনশনে বসেছেন দলটির সদস্য সচিব তারেক রহমান। গতকাল বিকেল থেকে নির্বাচন কমিশনের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করছেন তিনি। আজ এই অনশনের প্রতি সমর্থন জানাতে উপস্থিত হন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
তিনি বলেন, “তারেক রহমান ভাই যে আন্দোলন করছে এই আন্দোলন যৌক্তিক এবং তার দল আমজনতার দলকে অবশ্যই নিবন্ধন দিতে হবে।”
আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে তারেক রহমানের অনশনের পাশে দাঁড়িয়ে রাশেদ খান আরও বলেন, “রাজপথের লড়াকু সৈনিক, ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সর্বদা লড়াই করা আপনার পরিচিত মুখ তারেক রহমান ভাই। তিনি প্রায় ২০ ঘণ্টা ধরে কমিশনের মূল ফটকের সামনে তার দলের নিবন্ধনের দাবি নিয়ে অনশন করছেন। আমরা বিভিন্ন সময়ে তার আন্দোলন-সংগ্রামের সাক্ষী হয়েছি।”
রাশেদ খান বলেন, “গতকাল তিনটি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে এনসিপি নিবন্ধন পেয়েছে, আমরা তাদের শুভকামনা জানাই। কিন্তু বাকি দুই দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন আছে। নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজপথের সক্রিয়তা প্রধান শর্ত হওয়া উচিত। কিন্তু শুধুমাত্র কমিটি তৈরি করে এবং বাসা-বাড়িকে অফিস হিসেবে দেখিয়ে দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে, যা আমরা মানতে পারি না।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “২৪ সালের ডামি নির্বাচনের আগে বিএনএম, সুপ্রিম পার্টিসহ কয়েকটি দলকে ডিজিএফআই নির্দেশনার মাধ্যমে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল। আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে অনুরোধ করেছিলাম এই ভুঁইফোড় দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল করতে। কিন্তু তা করা হয়নি। উল্টো, গণঅভ্যুত্থানের পর রাজপথে সক্রিয় দলগুলোকে এখনো নিবন্ধন দেয়া হয়নি।”
ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টিকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে রাশেদ খান বলেন, “ডেসটিনি প্রায় ৪২ লাখ গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করেছিল। তবু এই দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। ২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের আগে আমরা তাদের কখনো রাজপথে দেখিনি। হঠাৎ জেল থেকে বের হয়ে দল গঠন করেছে, কমিটি দিয়েছে, বাসাবাড়িকে অফিস হিসেবে দেখিয়েছে। কিন্তু তারেক রহমান, যিনি সক্রিয় রাজপথের নেতা, যিনি সর্বদা সংগ্রাম করেছেন, তার দলকে নিবন্ধন দেয়া হয়নি।”
রাশেদ খান আরও বলেন, “আমার ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে তারেক রহমানের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে আমি এখানে এসেছি। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ২০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তিনি অনশন করছেন। সারারাত শুয়েছেন, মশার কামড় খেয়েছেন। এমন একজন রাজপথের সংগ্রামী নেতা রাস্তায় শুয়ে থাকবেন, আর নির্বাচন কমিশন কোনো মন্তব্য না করলে চলবে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমি যাচ্ছি।”
তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, “তারেক রহমান ভাইয়ের যে আন্দোলন হচ্ছে, সেটি যৌক্তিক। তার দল ‘আমজনতার দল’কে অবশ্যই নিবন্ধন দেওয়া উচিত।”
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ গতকাল জানান, চূড়ান্ত পর্যালোচনার পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী) এবং বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টিকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন আগামীকাল পত্রিকায় দাবি-আপত্তি চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। প্রাপ্ত অভিযোগ বিবেচনার পর চূড়ান্ত নিবন্ধন প্রদান করা হবে।