
বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, জনগণের অভ্যুত্থানের পথ ধরে উদিত গণতন্ত্রের সূর্যকে আর কখনো অস্তমিত হতে দেওয়া যাবে না।
শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। 'জুলাই বিপ্লব: গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা' শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। আয়োজনটি করে হিউম্যান রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশন।
বক্তব্যের একপর্যায়ে ড. মঈন খান বলেন, "উদারতা হলো বিএনপির সবচেয়ে বড় গুণ।" তিনি দাবি করেন, এই রাজনৈতিক গুণাবলিই বিএনপিকে অন্যান্য দল থেকে আলাদা করেছে।
জুলাই মাসের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে তিনি বলেন, "জুলাইয়ের প্রতিটি যোদ্ধার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা। তারা হাসিনার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিজেদের জীবন দিয়ে সমগ্র জাতিকে একটি ফ্যাসিস্ট রেজিম থেকে উদ্ধার করে মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন।"
ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণে তিনি তুলে ধরেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শৃঙ্খলা ও সময়নিষ্ঠতার উদাহরণ। মঈন খান বলেন, একবার এক অনুষ্ঠানে সকাল ১০টায় নির্ধারিত সময় অনুযায়ী উপস্থিত হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। উপস্থিতি কম দেখে তিনি নিজেই মাইক হাতে নিয়ে খালি চেয়ারগুলোর সামনে বক্তব্য দিয়ে নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠান ত্যাগ করেন। এই ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক জীবন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
আওয়ামী লীগের কটাক্ষের জবাবে ড. মঈন খান বলেন, "আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানকে ‘অখ্যাত মেজর’ বলে সমালোচনা করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ উপলব্ধি করতে পারেনি যে এই ‘অখ্যাত মেজর’ই নিজের এবং খালেদা জিয়ার জীবন বিপন্ন করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।"
তিনি আরও বলেন, "আওয়ামী লীগ এই উদারতা বুঝতে পারেনি যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বয়ং স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছিলেন। উদারতা হলো বিএনপির সবচেয়ে বড় গুণ।"
বিএনপিকে একটি মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল হিসেবে অভিহিত করে মঈন খান বলেন, দলটি চরম ডান কিংবা চরম বাম নীতিতে বিশ্বাস করে না। দেশের জনগণও চরমপন্থা নয়, বরং মধ্যপন্থাকেই সমর্থন করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলে মঈন খান বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ বিএনপির বিরুদ্ধে এক লাখেরও বেশি মামলা দায়ের করেছে। এ সময়ের মধ্যে ৫০ লাখ নেতাকর্মী, যার মধ্যে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান থেকে শুরু করে গ্রামীণ ছাত্র পর্যন্ত, সবাই শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, "পুলিশের ভয় এমন ছিল যে আমাকে রাত কাটাতে হয়েছিল ভাওয়ালের গজারি বন আর ধানক্ষেতে।"
আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক আহমেদ হুসেইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা কলেজের অধ্যাপক মো. আনোয়ার মাহমুদ। এতে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এফ রহমান হলের সাবেক ভিপি মো. মুস্তাফিজুর রহমান সেগুন প্রমুখ।