
কূটনৈতিক টানাপোড়েনের নানা আলোচনা চললেও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখনো সংকটের পর্যায়ে পৌঁছায়নি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, এই সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যাবে না।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্যিক বিষয় ও রাজনৈতিক বিষয়কে আলাদা করে দেখা প্রয়োজন। কূটনৈতিক অঙ্গনে কিছু স্পর্শকাতর ইস্যু বা বক্তব্য থাকলেও অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। তিনি জানান, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায় বলেই এদিন ভারত থেকে ৫০ হাজার টন চাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশের আর্থিক লাভ হয়েছে, কারণ ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানি করলে প্রতি কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেশি খরচ পড়ত।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, কিছুটা বিলম্ব হলেও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন এবং তিনি নিজেও ভারতের হাইকমিশনের সঙ্গে কথা বলেছেন। হাইকমিশন থেকে জানানো হয়েছে, তারাও সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে উদ্যোগী। বাইরে নানা ধরনের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে পরিস্থিতি এতটা খারাপ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে কিছু বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বলেও উল্লেখ করেন অর্থ উপদেষ্টা।
ভারতবিরোধী বক্তব্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এগুলো আমাদের জন্য জটিল পরিস্থিতি তৈরি করছে। এগুলো আমাদের জাতীয় অভিব্যক্তি নয়।”
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের বিরোধে যেতে চায় না। বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিশ্বাস করে এবং ভারত, ভুটান, নেপাল ও পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। প্রধান উপদেষ্টা ভারতের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন কি না—এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ভারতের সঙ্গে নয়, তবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের মধ্যে যে টানাপোড়েন শুরু হয়, তা ধীরে ধীরে আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। দুই দেশই নিজ নিজ কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম শহরে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভ্যাক) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীর ভিসা কেন্দ্রে নিরাপত্তাঝুঁকির কথা উল্লেখ করে একদিন করে আংশিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছিল। পাশাপাশি নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের ঘটনা নিয়ে ঢাকা ও দিল্লির পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যও সামনে এসেছে।