
ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে নিজেদের দাবি করে তিনি বলেন, “এই জায়গা আমাদের।” তার এমন ঘোষণার মধ্যেই পশ্চিম তীরে নতুন বসতি নির্মাণের একটি বিতর্কিত প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন তিনি, যা বিশ্লেষকদের মতে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ পুরোপুরি রুদ্ধ করে দিতে পারে।
শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরের একটি নতুন বসতি নির্মাণ প্রকল্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হলে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমের মধ্যকার ভৌগোলিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে, যা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্নে বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াবে।
গত বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহু প্রকল্পটিতে স্বাক্ষর করেন। এটি পশ্চিম তীরের মাঝামাঝি অঞ্চলে অবস্থিত মা’লে আদুমিম নামক বসতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ওইদিন একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পালন করছি, কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না। এই জায়গা আমাদের।”
নেতানিয়াহু আরও ঘোষণা দেন, মা’লে আদুমিম শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়েছেন তারা।
নতুন বসতি প্রকল্পটি “ইস্ট ১” বা “ই-ওয়ান” নামে পরিচিত। ১২ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই প্রকল্পে ৩,৪০০ নতুন আবাসন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বাস্তবায়ন হলে এই বসতিগুলো পূর্ব জেরুজালেমকে পশ্চিম তীরের অন্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে, একইসঙ্গে সেখানে বসবাসরত হাজারো ইসরায়েলি বসতিকে একত্রে যুক্ত করবে।
উল্লেখযোগ্য যে, পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখে আসছে ফিলিস্তিনি জনগণ। তবে ১৯৬৭ সালে অধিকৃত পশ্চিম তীরে গড়ে ওঠা সকল ইসরায়েলি বসতিকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যদি তা ইসরায়েলের নিজস্ব অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদক হামদাহ সালহুত জানান, ই-ওয়ান প্রকল্পটি কার্যকর হলে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের মধ্যকার সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
এদিকে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনাহ বৃহস্পতিবার বলেন, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই এই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার মূল চাবিকাঠি। তিনি দ্বিরাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানকে “অপরিহার্য” বলে অভিহিত করেন।
রুদেইনাহ আরও অভিযোগ করেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গোটা অঞ্চলকে “অন্ধকার গহ্বরে ঠেলে দিচ্ছেন”, এবং বসতিগুলো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। তার মতে, বিশ্বের ১৪৯টি রাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে; তিনি অবশিষ্ট দেশগুলোকে দ্রুত সেই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
বসতি স্থাপন ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতায় নেতানিয়াহুর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৯০ দশকে স্বাক্ষরিত অসলো চুক্তিরও তিনি তীব্র সমালোচক ছিলেন। এমনকি ২০০১ সালে ফাঁস হওয়া একটি ভিডিওতে তিনি দাবি করেছিলেন, তিনি নিজেই কার্যত সেই চুক্তি ভেস্তে দিয়েছেন।
তার প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদে, ১৯৯৭ সালে তিনি পূর্ব জেরুজালেমে হার হোমা নামের একটি বসতির নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীকালে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, তার নেতৃত্বে কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র কখনও গঠিত হবে না।
সম্প্রতি ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচও বলেন, ই-ওয়ানের মতো প্রকল্পগুলো ফিলিস্তিনকে “মানচিত্র থেকে মুছে ফেলবে”।