
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য তফসিল ঘোষণা হওয়ার আগে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। পদত্যাগকারী সদস্যরা হলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে তারা উপদেষ্টা পদ থেকে সরে যাচ্ছেন। পদত্যাগের পর উপদেষ্টা পরিষদে নতুন মুখের সংযোজন দেখা যেতে পারে। একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়কদের মধ্যে উল্লিখিত দুজন নির্বাচনে অংশ নিতে মাঠে নামবেন। তারা বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এই পদত্যাগের বিষয়টি ইতোমধ্যেই মৌখিকভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সম্ভাব্য সময়সূচি অনুযায়ী, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হবে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এবং তফসিল ঘোষণা হবে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ধার্য করা হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি।
অন্যদিকে নির্বাচনি জোট গঠনের প্রস্তুতিও চলছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বুধবার রাতে নাহিদ ইসলামের বাসায় বৈঠক করে। দীর্ঘ বৈঠকে বিভিন্ন বিকল্প এবং সম্ভাব্য জোট নিয়ে আলোচনা হয়। তবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশকে (আপ বাংলাদেশ) জোটভুক্ত করার প্রস্তাবের কারণে আলোচনায় বাধা তৈরি হয়। ৪০ নেতার মধ্যে মাত্র ৩ জন আপ বাংলাদেশের সঙ্গে জোটের পক্ষে মত প্রকাশ করেন, বাকিরা বিএনপির সঙ্গে জোট বা স্বতন্ত্র নির্বাচনের পক্ষে মত দেন। এ পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া এনসিপি নেতারা জামায়াতের সঙ্গে জোট করতে রাজি নন, যা জোটভাঙনের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে।
পদত্যাগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পদত্যাগ করেই নির্বাচন করব। এমন কোনো আইন নেই যে উপদেষ্টা হলে নির্বাচন করা যাবে না। তবে নীতিগত কারণে উপদেষ্টা হিসাবে নির্বাচন করা ঠিক হবে না। কোন দল থেকে নির্বাচন করব- তা এখনো ঠিক করিনি।”
তিনি আরও জানান, “ঘোষণা দিয়েছি নির্বাচন করব, তবে কোথা থেকে করব ঘোষণা দেইনি।” আসিফ মাহমুদ উল্লেখ করেন যে শুধু দুজন নয়, আরও কিছু উপদেষ্টা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। তিনি আগে কুমিল্লার ভোটার ছিলেন, সম্প্রতি ঢাকা-১০ আসনের ভোটার হয়েছেন, যা নিয়ে গুঞ্জন চলছে যে এই আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে পারেন। বিএনপি এখনও এই আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেনি।
মাহফুজ আলম ২৮ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “২ মাস ধরে আমি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি- আমি কবে পদ ছাড়ব, তা এখনো জানি না।” পরে ২৬ অক্টোবর তিনি আরও বলেন, “নভেম্বরেই শেষ হয়ে যাবে উপদেষ্টা পরিষদের সভা। এরপর নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেবে। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর আর সম্ভবত কেবিনেট মিটিং বসে না।” এই মন্তব্যের পর সরকার একটি বিবৃতি প্রকাশ করে, যেখানে জানানো হয়, নভেম্বরের পরেও উপদেষ্টা পরিষদ দায়িত্ব পালন করবে এবং সংস্কার কাজ চলবে।
মাহফুজ আলম ফেসবুকে একসময় বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে “মজলুম জালিম হচ্ছে। ফ্যাসিবাদবিরোধীরা ফ্যাসিবাদী হচ্ছে। পুরো পরিস্থিতি হতাশার-ক্ষুব্ধতার।” দায়িত্বশীলরা মন্তব্য করেছেন, সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে এই ধরনের পোস্ট দেওয়া উচিত নয়।
এদিকে চলতি বছরের ৯ মে নতুন রাজনৈতিক দল ‘ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)’ যাত্রা শুরু করে। দলের নেপথ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কিছু নেতা। ৮২ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ এবং সদস্য সচিব আরেফিন মুহাম্মদ হিজবুল্লাহ।