
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গভীর হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, কারণ উপদেষ্টা পরিষদ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশ বাদ দিয়েছে। টিআইবি প্রশ্ন তুলেছে, দুদককে জবাবদিহির বাইরে রেখে রাষ্ট্র সংস্কার কি শুধুই শূন্য বাক্যবাণী হয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে, ক্ষমতাসীনদের নির্দেশে কেবল প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া দুদকের কার্যক্রমকে উত্তরণের জন্য বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছিল। এই সুপারিশ বাদ দেওয়া শুধু হতাশাজনক নয়, সরকারের অভ্যন্তরে সংস্কারবিরোধী মহলের ষড়যন্ত্রের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যও বিপন্ন হওয়ার প্রতীক।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও ১১টি সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা দুদককে জবাবদিহির বাইরে রাখার মাধ্যমে কি রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীকে বোঝানো হচ্ছে যে রাষ্ট্র সংস্কার কেবলই ফাঁকা বুলি?”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বিগত দুই দশকের অভিজ্ঞতা, অংশগ্রহণকারীর মতামত, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দুদক যাতে ক্ষমতাসীনদের হয়রানির হাতিয়ার না হয়, সে লক্ষ্যে ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ সুপারিশ করা হয়েছিল। জন্মলগ্ন থেকে দুদক জনআস্থার সংকটে ভুগছে এবং স্বার্থান্বেষী মহলের ক্রীড়নক হিসেবে ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষা ও প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এ প্রস্তাব তা থেকে উত্তরণ ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুযায়ী অন্তত সাতজন উপদেষ্টা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন, যদিও তাঁরা জানেন যে জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারী সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছিল। টিআইবি প্রশ্ন তুলেছে, “জুলাই সনদ লঙ্ঘনের উদাহরণ তৈরি হওয়ার আগে সরকার কেন ভাবছে না যে এটি রাজনৈতিক দলকে উৎসাহিত করবে? তাহলে কেন এত রক্তক্ষয়ী আত্মত্যাগ?”
অধ্যাদেশের খসড়ার তুলনায় চূড়ান্ত খসড়াটি অনেকাংশে বিদ্যমান আইনের তুলনায় উন্নত মানের হলেও, নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। টিআইবি মনে করছে, এটি সরকারের অভ্যন্তরে স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালী মহলের দুর্নীতি-সহায়ক ও সংস্কার-পরিপন্থি অবস্থারই প্রতিফলন।