
আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ঘোষণা করা হবে জুলাই গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায়।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ট্রাইব্যুনালের আশপাশে জমায়েত হয়েছেন। রয়টার্স, এপি, এএফপি, আল জাজিরা, বিবিসি ওয়াল্ডসহ সারা বিশ্বের গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহের জন্য উপস্থিত রয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মাসউদুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। এ কারণেই বিশ্বের সব গণমাধ্যমের চোখ আজ ট্রাইব্যুনালের দিকে।”
রয়টার্স সরাসরি এই রায় সম্প্রচার করবে এবং এই বিশেষ দিবস উপলক্ষে ট্রাইব্যুনাল এলাকা কঠোর নিরাপত্তা বলয় দ্বারা সংরক্ষিত হয়েছে।
গত ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজকের রায়ের দিন নির্ধারণ করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্যান্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলার প্রক্রিয়া অনুযায়ী, শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর জেরা সম্পন্ন হয়েছে। এরপর ৯ কার্যদিবসে প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্স যুক্তি-প্রতিযুক্তি উপস্থাপন করেছে। ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রের প্রধান আইনকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সমাপনী বক্তব্য এবং চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের যুক্তিখণ্ডন শেষ হওয়ার পর রায়ের তারিখ নির্ধারণের জন্য সময় দেওয়া হয়।
প্রসিকিউশন শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা দাবী করেছে। তবে মামলার অন্যতম আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের অংশে ট্রাইব্যুনাল রায় নির্ধারণ করবে, যদিও তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ খালাস দাবি করেছেন। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন মনে করেন, শেখ হাসিনা ও কামালও খালাস পাবেন।
মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রের দৈর্ঘ্য ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠা। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার ৫ পৃষ্ঠা, এবং শহীদদের তালিকা দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। মোট ৮৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।