
দেশে কোন ব্যক্তি দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। সরকারের মেয়াদ হবে চার বছর। নির্বাহী বিভাগ প্রধানমন্ত্রী পরিচালনা করলেও সাংবিধানিক পদে নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকবে না। সংবিধান প্রস্তাবনায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার বিষয়ে এমন প্রস্তাব এনেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাবনার কথা জানানো হয়।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি একই সঙ্গে নিজ দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হতে পারবেন না। জীবনে দুই বারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রাষ্ট্রের আর কোন পদেই তিনি থাকতে পারবেন না। কোম্পানি বা ব্যবসায়ী উদ্যোগের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ থাকবে। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সব সম্পদ ও সম্পত্তি স্টেট ব্যাংকের অধীনে চলে যাবে।’
এতে বলা হয়, ‘কোন সাংবিধানিক পদের নিয়োগে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে পারবেন। তবে তা পালন করা রাষ্ট্রপতির জন্য আবশ্যকীয় হবে না। সাংবিধানিক পদে নিয়োগ ও অপসারণ আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে। সাংবিধানিক পদে আসীন কাউকে অপসারণ করার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর থাকবে না।’
প্রস্তাবনায় বলা হয়, ‘৭০ অনুচ্ছেদের কঠোরতা খর্ব করতে হবে। সাংসদরা দল বদল করলে তথা অন্য কোন রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে বা দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করলে বা অব্যাহতি দেওয়া হলে তার সাংসদ পদ শুন্য হবে। আস্থা ভোটে দলের বিপরীতে ভোট দেওয়া যাবে না। তবে অন্য যে কোন বিষয়ে তিনি স্বাধীন থাকবেন, দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীসভার যাবতীয় সিদ্ধান্ত রদ করা বা চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা সংসদীয় দলের থাকবে। প্রধানমন্ত্রী হবেন সম ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী ক্রমবিচারে প্রথম হবেন- ক্ষমতা বিচারে নয়। মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী চয়ন করবেন। তবে সংসদের তাতে অনুমোদন নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করবেন এবং রদবদল করতে পারবেন। তবে অপসারণ করতে হলে সংসদের অনুমোদন নিতে হবে। সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা বাড়াতে হবে। মন্ত্রিসভার যাবতীয় সিদ্ধান্ত সংসদীয় কমিটি চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। শুনানি ও সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত আইনসভায় পাঠাবে মন্ত্রিসভা। এরপর সুপারিশ আইনসভায় ভোটাভুটির মুখোমুখি হবে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেওয়ার অধিকারী হবেন। তবে তা পালন করা রাষ্ট্রপতির জন্য আবশ্যকীয় হবে না। আইনসভাই কেবল সিদ্ধান্ত নেবে। তবে জরুরি আইন/আদেশ সর্বোচ্চ আদালতের কাছে পাঠাতে হবে। আদালত আইনের সাংবিধানিকতা/ অসাংবিধানিকতা সম্পর্কে রায় দেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত বাহিনীগুলার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান হবেন। কোন বাহিনীই সরাসরি তার অধীন থাকবে না।
প্রতিরক্ষা বা স্বরাষ্ট্র কোন মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে প্রধান হিসেবে থাকতে পারবেন না। বাহিনীর চেইন অব কমান্ড আইন ও বিধি দ্বারা সঙ্গত থাকবে। চেইন অব কমান্ডে হস্তক্ষেপ হবে অবৈধ। তবে যে কোন কাজের সঠিকতা সম্পর্কে জবাবদিহি থাকবে।
প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়, ‘কোন আদালতই প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণে রায় ঘোষণা করতে পারবেন না। কেবল সংসদ কর্তৃক আস্থাভোটই হবে তাকে অপসারণের বৈধ উপায়। সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যেন একক কর্তৃত্ব ভোগ না করেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী নিম্নকক্ষের প্রধান থাকবেন এবং যে কোন পলিসি তৈরির মাধ্যমে জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্রের কাজ করবেন।’
নির্বাহী বিভাগ পরিচালনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে নিয়োগের ক্ষমতা থাকবে না প্রধানমন্ত্রীর হাতে। যে কোন নিয়োগ দেবে উচ্চকক্ষ। এক্ষেত্রে নিম্নকক্ষ বা প্রধানমন্ত্রীর কোন অনুমতি লাগবে না বলেও প্রস্তাবনায় বলা হয়।