
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস তাদের পাঁচ দফা দাবিতে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের জোটের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব প্রণয়নসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছে।
রবিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর মজলিস মিলানায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের আমির মামুনুল হক লিখিত বক্তব্যে এই দাবিগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “দেশের জনগণ নির্ভরযোগ্য, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চায়। সেই লক্ষ্যেই খেলাফত মজলিস পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করছে।”
তাঁর ভাষ্য ছিল, “আমাদের এ দাবিগুলো কেবল রাজনৈতিক অংশগ্রহণের বিষয় নয়, বরং জনগণের অধিকার, ন্যায়পরায়ণতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।”
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তিনি শাপলা চত্বর, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহতদের স্মরণ করেন।
খেলাফত মজলিসের প্রস্তাবিত পাঁচ দফা হলো:
১. জুলাই সনদের অবিলম্বে বাস্তবায়ন
জুলাই সনদকে ‘ছাত্র জনতার সংগ্রাম ও ত্যাগের দলিল’ হিসেবে উল্লেখ করে মামুনুল হক এর অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানান। তিনি জানান, সনদটি কেবল ঘোষণাপত্র নয়, বরং কোটি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এই সনদের ভিত্তিতেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
পূর্বে ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্রে শাপলা গণহত্যার উল্লেখ না থাকার সমালোচনা করে এর দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বহন করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তার ভাষায়, “জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো জুলাই সনদকেও কাগুজে, অকার্যকর লেখায় পরিণত করা যাবে না।”
আগামী সংসদের হাতে সনদ বাস্তবায়নের ভার ছেড়ে না দিয়ে অবিলম্বে অধ্যাদেশ বা রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ঘোষণার মাধ্যমে এটি কার্যকর করার আহ্বান জানান তিনি।
২. জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ
খেলাফত মজলিসের দ্বিতীয় দাবিতে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলকে ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের এজেন্ট’ আখ্যা দিয়ে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। মামুনুল হক অভিযোগ করেন, “ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৬ বছর তারা ভারতের প্রেসক্রিপশনে হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনকে সমর্থন করেছে। খুন, গুম, দুর্নীতিতে নিজেদের শামিল রেখেছে।”
তিনি জানান, বর্তমানে দেশি বিদেশি চক্রান্তের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র চলছে।
৩. নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ
নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ তৈরির দাবি জানিয়ে মামুনুল হক জানান, এটি ছাড়া কোনো নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।
৪. জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা
২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করার দাবি জানিয়ে খেলাফত মজলিসের আমির জানান, শহীদদের রক্তের প্রতি সম্মান জানাতে এবং জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে এ হত্যাযজ্ঞের নেপথ্য কারিগরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচার প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি ছাড়া জনগণ আস্থা পাবে না।
৫. জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষে পি আর পদ্ধতি বাস্তবায়ন
ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় এককক্ষীয় সংসদের পরিবর্তে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পি আর) পদ্ধতি চালুর দাবি জানিয়েছে দলটি। মামুনুল হক জানান, উচ্চকক্ষ অবশ্যই পি আর ভিত্তিক হতে হবে, অন্যথায় তা ‘বেকার পুনর্বাসনের উচ্চকক্ষে’ পরিণত হবে। তার মতে, এটি বাস্তবায়ন হলে সংসদে কার্যকর রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ বাড়বে এবং জনমতের মূল্যায়ন নিশ্চিত হবে।
দাবি আদায়ে কর্মসূচি
১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর সকল বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের সমাপ্তিতে মামুনুল হক বলেন, “আমাদের এই পাঁচ দফা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ইসলামী মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ রক্ষার আন্দোলন।”