
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার জানিয়েছেন, ২০২৬ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনের পর গঠিত নতুন সরকারের সঙ্গে ইইউ সহযোগিতার সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায়।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সাবেক কূটনীতিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার অ্যাম্বাসেডরস-এ সভার আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আবদুল্লাহ আল হাসান।
মাইকেল মিলার বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হবে, তার সঙ্গেই ইইউ কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, "বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি। আগামী বছর নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। আর নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।"
তিনি আরও জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা সফরকালে তিনি তরুণ সমাজের প্রত্যাশা ও স্বপ্ন প্রত্যক্ষ করেছেন। “বাংলাদেশের সামনে এখন তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণের সময় এসেছে,” বলেন মিলার। তার মতে, তরুণদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি এবং উন্নয়ন সহযোগীদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, "বাংলাদেশ এখন রাজনৈতিক উত্তরণের দিকে এগোচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বদ্ধপরিকর।"
গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী করতে সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক ঐক্যমত্য অপরিহার্য।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে মিলার বলেন, ইইউভুক্ত দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের বাজারে আগ্রহ দেখাচ্ছে, তবে তাদের প্রধান শর্ত হচ্ছে একটি স্থিতিশীল এবং নিরাপদ বিনিয়োগ পরিবেশ। তিনি বলেন, "যেকোনো বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগের সুরক্ষার পাশাপাশি একটি স্থিতিশীল পরিবেশ চায়।"
বাংলাদেশ ও ইইউর সম্পর্ক প্রসঙ্গে মিলার বলেন, "আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মূল ভিত্তি মানবাধিকার, উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও বাক্স্বাধীনতা। ভবিষ্যতেও আমরা এই বিষয়গুলোতে আরও জোরালোভাবে কাজ করে যাব।"
আইনগত প্রক্রিয়ায় অভিবাসন প্রসঙ্গে তিনি জানান, ইউরোপ বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী। “বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে,” বলেন মিলার।
নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, কোস্টগার্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইইউ ইতোমধ্যে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে সামরিক খাতেও সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে মাইকেল মিলার বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসন। তবে এই প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছায় এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে।”