
জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র মতপার্থক্যের কারণে জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে গণভোটসহ সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
সরকার-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে গণভোট আয়োজনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে সরকার। যদিও এ নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের প্রসঙ্গ উঠে আসে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস উপদেষ্টাদের মতামত জানতে চান। অধিকাংশ উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে করার পক্ষে মত দিলেও প্রধান উপদেষ্টা কোনো সিদ্ধান্ত দেননি, শুধু মতামত শুনেছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বিশেষ আদেশের মাধ্যমে গেজেট আকারে প্রকাশ করে তার ভিত্তিতে গণভোট আয়োজন করতে হবে। গণভোটে প্রস্তাব অনুমোদিত হলে নতুন সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। তবে গণভোটের সময় নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারের ওপরই ছেড়ে দিয়েছে কমিশন।
কমিশনের সুপারিশের পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। বিএনপি দাবি করছে, সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো ক্ষমতা নেই। তাদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন “অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত।” অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যেই গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপ পর্যালোচনা করেই সনদে স্বাক্ষর করবে কি না, তা নির্ধারণ করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “২৭০ দিন যাবৎ আলাপ-আলোচনার পর আমরা প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যে যে অনৈক্যের সুর দেখছি, সেটা হতাশাজনক। এই তীব্র বিরোধের মধ্যে সমঝোতার দলিল পাস করানো এখন সরকারের জন্য দুরূহ চ্যালেঞ্জ।”
তিনি আরও বলেন, আগে কেবল বিষয়বস্তু নিয়ে মতবিরোধ ছিল, এখন ভিন্নতা দেখা দিয়েছে দুটি ইস্যুতে—সংস্কার প্রস্তাব পাসের প্রক্রিয়া ও গণভোটের সময় নিয়ে। “যারা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষে ছিলেন, তাদের মধ্যেও এখন বিভাজন স্পষ্ট,” যোগ করেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, “আপনারা যদি এ রকম অবস্থান নেন, সরকার কী করবে আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না। এত দিন আলোচনার পরও যদি ঐকমত্যে পৌঁছানো না যায়, তাহলে কীভাবে এগোনো উচিত তা আমাদের পুনর্বিবেচনা করতে হচ্ছে।”
বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “গণভোট কখন হবে, তা নিয়ে বিরোধ এখন চরম পর্যায়ে। তবে শেষ পর্যন্ত সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা খুব দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছাব এবং সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকব।”
তিনি আরও জানান, ফেব্রুয়ারির শুরুতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে তার আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য না হলে নির্বাচন ও সংস্কার—দুটি বিষয়ই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।
অন্যদিকে, জুলাই সনদের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সরকার প্রস্তাবগুলো বিশ্লেষণ করছে। দ্রুতই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।”