.png)
নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে সহিংসতা উসকে দেওয়া এবং সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে হামলায় প্ররোচনামূলক কনটেন্ট ছড়ানোর অভিযোগে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটাকে চিঠি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব কনটেন্টের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ–সংক্রান্ত আধেয়ের ওপর বিশেষ নজরদারি জোরদারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি গতকাল মেটার কাছে এই চিঠি পাঠায়। এতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশকেন্দ্রিক কনটেন্ট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোকে সহিংসতা ছড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যার প্রভাব বাস্তব জীবনেও পড়ছে। এতে করে সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে দুর্বৃত্তদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান বিন হাদি। তিনি ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক এবং ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন।
আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়।
ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই ওই রাতেই ঢাকায় প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার এবং ছায়ানট ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। গতকাল শুক্রবার তাঁর মরদেহ দেশে আনা হয়েছে। আজ তাঁর জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের মূল্যায়নে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ নেতা শরিফ ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যু এবং সংবাদমাধ্যমে হামলার ঘটনাগুলো ফেসবুক ব্যবহার করে ধারাবাহিকভাবে সহিংসতা ছড়ানোর অংশ।
জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি ফেসবুকে প্রকাশ্যে ওসমান হাদির মৃত্যুকে সমর্থন জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সরাসরি সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছেন। এসব কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়ার পরপরই প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে গুরুতর হুমকির মুখে ফেলে।
চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয়, সরকার ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও সহিংসতা উসকে দেওয়া অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করতে মেটা পর্যাপ্ত সহযোগিতা করেনি।
ফেসবুকের মাধ্যমে উসকে দেওয়া সহিংসতার সঙ্গে নাগরিকদের জীবন, গণতান্ত্রিক অধিকার, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা গভীরভাবে জড়িত উল্লেখ করে মেটাকে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশ–সংক্রান্ত কনটেন্টে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড আরও কঠোর, দ্রুত ও প্রেক্ষাপট সংবেদনশীলভাবে প্রয়োগ; বাংলা ভাষাভিত্তিক কনটেন্ট মডারেশন, অনুভূতি বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক পর্যালোচনা জোরদার করা; এবং সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন বা সংগঠিত ক্ষতির আহ্বান জানানো কনটেন্টের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
সরাসরি রিপোর্ট করার আহ্বান
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্ত্রাস ও সহিংসতার আহ্বানসংবলিত যেকোনো পোস্ট সরাসরি রিপোর্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
গতকাল ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি শনিবার (আজ) থেকে সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ০১৩০৮৩৩২৫৯২ এবং ই–মেইল [email protected]
–এর মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণ করবে।