.png)
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়ে না–ফেরার দেশে চলে গেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তার মৃত্যুর খবর প্রকাশের পরপরই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি, আল জাজিরা, রয়টার্স, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ানসহ একাধিক আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমের প্রধান শিরোনামে উঠে আসে খালেদা জিয়ার প্রয়াণের সংবাদ।
বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ফেসবুকে এক ঘোষণায় জানায়, ‘আমাদের প্রিয় নেত্রী আর আমাদের মধ্যে নেই। তিনি মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।’
বিবিসি আরও জানায়, সোমবার রাতে চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থাকে ‘অত্যন্ত সংকটজনক’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। তবে বয়সজনিত জটিলতা ও সামগ্রিক শারীরিক অবনতির কারণে একসঙ্গে একাধিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।
আল জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে জানায়, দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয়েছে—এ তথ্য তার দল ও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তার শেষ দিনগুলোতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা মুহাম্মদ ইউনূস জাতির প্রতি আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করতে বলেন এবং তাকে দেশের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে উল্লেখ করেন।
আল জাজিরা আরও জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১৭ বছর নির্বাসনে থাকার পর সম্প্রতি দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার সময় বিপুলসংখ্যক সমর্থক তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ২০০৬ সালের পর থেকে ক্ষমতার বাইরে থাকলেও এবং দীর্ঘ সময় কারাবন্দি বা গৃহবন্দি অবস্থায় কাটালেও খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি দেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য সমর্থন ধরে রেখেছিল। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে এগিয়ে থাকা দল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। পাশাপাশি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
রয়টার্স আরও জানায়, ১৯৮১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে স্বামী জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে সাধারণত লাজুক ও নিবেদিতপ্রাণ গৃহবধূ হিসেবে দেখা হতো। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার তিন বছরের মধ্যেই তিনি তার স্বামীর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির নেতৃত্বে আসেন এবং দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার অঙ্গীকার করেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসার মাধ্যমে খালেদা জিয়া কার্যত তার প্রধানমন্ত্রীত্বের অধ্যায় শুরু করেন। তার নেতৃত্বেই দেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তিত হয় এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়।
এনডিটিভি আরও জানায়, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ কিডনি, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও চোখের জটিলতায় ভুগছিলেন। তার চিকিৎসায় বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা যুক্ত ছিলেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও দ্য গার্ডিয়ান জানায়, মঙ্গলবার বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তারা উল্লেখ করে, মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ফজরের নামাজের পর ইন্তেকাল করেন। জিও নিউজসহ পাকিস্তানের অন্যান্য সংবাদমাধ্যমেও তার মৃত্যু সংবাদ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। একইভাবে হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসহ ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতেও খবরটি শিরোনামে স্থান পায়।
বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান এবং দলের সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান খালেদা জিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তারা জানান, মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ২৩ নভেম্বর তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইস্কান্দার মজুমদারের বাড়ি ফেনী জেলার পরশুরামের শ্রীপুর গ্রামে এবং মা তৈয়বা বেগমের জন্ম পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ীতে। তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান।