
রাজধানীর চানখারপুলে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আংশিক সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম।
বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১টার পর ট্রাইব্যুনাল-১-এর একক বেঞ্চ, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
মামলার ১৫তম দিনে ২৫ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন কামরুল হাসান, যিনি জব্দ তালিকার সাক্ষী। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বিভিন্ন তথ্য ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থাপন করেন। এর আগে, ৯ নভেম্বর বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা সাক্ষ্য দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ফজলে নূর তাপসের দুটি ফোনালাপ ট্রাইব্যুনালে বাজিয়ে শোনানো হয়। একই দিনে ২৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন মাসুদ রানা। এ পর্যন্ত মোট ২৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য-জেরা শেষ হলে বাকি থাকবে যুক্তিতর্কের পর্যায়, এরপর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
প্রসিকিউশন জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ছাত্র-জনতার ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এর ফলশ্রুতিতে ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় ছয়জন নিহত হন। তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সময় প্রায় ৫০-এর বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য অভিযানে অংশ নেন এবং তাদের অধিকাংশই গুলি চালান। তবে এ মামলায় মাত্র তিনজনকে আসামি করা হয়েছে, কারণ তারা লেথাল ওয়েপন ব্যবহার করেছেন।
২ নভেম্বর মামলার ১৩তম দিনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন সিআইডির দুই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ। প্রথমে সাক্ষ্য দেন পুলিশ পরিদর্শক ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ রোকনুজ্জামান, পরে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের উপপরিদর্শক শাহেদ জোবায়ের লরেন্স। তারা উদ্ধারকৃত আলামত যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়ার বর্ণনা দেন।
এর আগে, ২৬ অক্টোবর ২০ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন আবদুস সালাম। তিনি সরাসরি ৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য নিজের মোবাইলে ধারণ করেন। ১৬ অক্টোবর যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য দেন, যেখানে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। ৯ অক্টোবর তার প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ১৯ নম্বর সাক্ষী হিসেবে আসিফ মাহমুদ জবানবন্দিতে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পটভূমি এবং চানখারপুলে পুলিশী নিপীড়নের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সরাসরি জড়িতদের দায়ী করেন।
এই মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামি হলেন শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। পলাতক আসামিরা হলেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।
১৪ জুলাই ট্রাইব্যুনাল মামলাটি পলাতক চার আসামিসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুলে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালায়। এতে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক নিহত হন।