চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ আজ (বুধবার) ১২তম দিনে গড়াচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া এ মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচার চলছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজকের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, আজ এক জন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে।
গতকাল (মঙ্গলবার) মামলার ১৩তম সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদ। তিনি ছিলেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, মঈনুল করিম, সুলতান মাহমুদসহ অন্যরা।
এর আগে, ১০ নভেম্বর মামলার ১২তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও বেরোবির শিক্ষার্থী আকিব রেজা খান। তিনি আদালতে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। তবে ৪ নভেম্বর, ২১ এবং ১৩ অক্টোবর সাক্ষী হাজির না হওয়ায় তিন দফা শুনানি স্থগিত করতে হয়।
৬ অক্টোবর নবম দিনের শুনানিতে পুলিশের দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিক ও রায়হানুল রাজ দুলালের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। তার আগে, ২৯ সেপ্টেম্বর অষ্টম দিনের শুনানিতে তিনজন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। ২২ সেপ্টেম্বর সপ্তম দিনে ছয় নম্বর সাক্ষী সিয়াম আহসান আয়ানকে জেরা করা হয়, যিনি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আবু সাঈদকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রথম উদ্যোগ নেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২৮ আগস্ট, আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের সাক্ষ্যের মাধ্যমে। সেদিনই সাংবাদিক মঈনুল হকও জবানবন্দি দেন।
বর্তমানে ছয়জন আসামি কারাগারে আছেন। তারা হলেন এএসআই আমির হোসেন, বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ। আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের সময় তারাই উপস্থিত থাকেন।
এ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয় গত ২৭ আগস্ট চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। এর আগে, ৬ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়। তবে তাদের মধ্যে ২৪ জন এখনও পলাতক। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে ২২ জুলাই চারজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
৩০ জুলাই রাষ্ট্রনিযুক্ত ওই আইনজীবীরা পলাতক আসামিদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের হয়ে লড়েন আইনজীবী সুজাত মিয়া, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষে ছিলেন মামুনুর রশীদ, আর আইনজীবী ইশরাত জাহান ও শহিদুল ইসলামও শুনানিতে অংশ নেন। এর আগের দিন ২৯ জুলাই তিন আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো, আজিজুর রহমান দুলু ও সালাহউদ্দিন রিগ্যান।
এরও আগে, ২৮ জুলাই ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। ৩০ জুন ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আমলে নেয়, এবং ২৪ জুন তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন দাখিল করে। মামলায় মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৬২ জন।