
ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যারা উচ্চকণ্ঠ, তাদের দমিয়ে দিতেই ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করা হয়েছে- এমন মন্তব্য করেছেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে হাদির ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে পঞ্চগড়ের চৌরঙ্গী মোড়ে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সমাবেশে সারজিস আলম বলেন, শরিফ ওসমান হাদি অভ্যুত্থানের আগের সময় থেকে শুরু করে অভ্যুত্থানের পর পর্যন্ত ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে কথা বলে এসেছেন। তিনি দাবি করেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন পরিচয়ে সীমান্ত পেরিয়ে এমন অনেককে দেশে প্রবেশ করানো হয়েছে, যাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা। কারণ, তাদের ধারণা—যারা জুলাইয়ে রক্ত দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়েছে, সংকট এলে তারা আবারও এক হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, “আমাদের সামনে শুধু নির্বাচনী লড়াই নয়, আমাদের সামনে বাংলাদেশকে রক্ষা করার লড়াই। আমাদের সামনে শুধু ভোটের লড়াই নয়, যারা বাংলাদেশকে ধ্বংসের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই।”
সারজিস আলম আরও বলেন, “আওয়ামী সন্ত্রাসী যারা ছিলো তাদের গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে। তাদের সঙ্গে ইন্টারনাল আপোষ করে, ইন্টারনাল প্রটেকশন দিয়ে এই বাংলাদেশে আগামীতে কোনো কিছু সুষ্ঠুভাবে হতে পারে না। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করছি, সারা দেশে সাড়াশি অভিযান চালাতে হবে। খুনি সন্ত্রাসী তাদের দোসর এবং বাইরে থেকে যারা ষড়যন্ত্র করছে, যারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায়, অগ্রযাত্রা থামাতে চায়, যাদের স্বার্থ বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে মিলছে না তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সবাইকে বলি লুতুপুতু করে আগামীর বাংলাদেশে খুনিদের আশ্রয় দিয়ে কখনোই শান্তি ফেরানো সম্ভব নয়। দিনে এক কথা, রাতে এক কথা, এই যদি হয় অবস্থা তাহলে আগামীতে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবেন না।”
অভ্যুত্থানের পর দেশের প্রত্যাশিত পরিবর্তন নিয়ে হতাশার কথাও তুলে ধরেন তিনি। সারজিস আলম বলেন, “ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পরে এই বাংলাদেশকে যেই জায়গায় দেখতে চেয়েছিলাম বিগত এক বছরে আমরা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি স্টেপে যারা এই বাংলাদেশের পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে পারতো তাদের অধিকাংশকে আমরা দেখলাম তারা তাদের জায়গা থেকে একেকজন মহানুভব ব্যক্তি হয়ে প্রত্যেক কালপ্রিটকে তারা বিভিন্নভাবে সুযোগ করে দিচ্ছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে শুরু করে প্রশাসন, প্রশাসন থেকে শুরু করে সামনে পেছনে বিভিন্ন পরিচয়ে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম ইন্টারনাল নেগোসিয়েশনের মধ্য দিয়ে অনেক আওয়ামী লীগ কালপ্রিটকে যাদের থানা, করাগারে থাকার কথা, যাদের কোর্টে ওঠানোর কথা ছিলো তাদেরকে বিভিন্নভাবে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাইরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই বুলেট শুধু শরিফ ওসমান হাদীর মাথায় নয়, এই বুলেট বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাওয়া যে অভ্যুত্থান- সেই অভ্যুত্থানের বুকে করা হয়েছে। এই বুলেট শুধু শরীফ ওসমান হাদির মাথায় নয়। এই বুলেট বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাওয়া যে অভ্যুত্থান তার বুকে করা হয়েছে।”
আইনগত পদক্ষেপের ঘাটতির অভিযোগ তুলে সারজিস আলম বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তিকে দেখেছি কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের সামনে অনেক বড় বড় এজেন্ডা হাজির হয়েছে। কিন্তু যারা খুনি, যারা হাজারেরও অধিক ভাইয়ের জীবন নিলো, যারা রাস্তায় মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মারলো তাদের বিচারের জন্য, গ্রেপ্তারের জন্য তাদের তৎপরতা দেখতে পেলাম না। আমরা দেখলাম একটার পর একটা মামলা হয়, দশ বিশজন গ্রেপ্তার হয় কিন্তু টাকার বিনিময়ে হোক, পলিটিক্যাল নেগোসিয়েশনে হোক ওই আসামিরা একটার পর একটা জামিন পেয়ে গেছে।”
এনসিপির এই নেতা বলেন, “ওসমান হাদিকে গুলি করা একজন ব্যক্তিকে গুলি করার সমতুল্য নয়। বরং এটা দিয়ে যারা বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, যারা আগামীর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে চাচ্ছে, যারা নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতিকে বানচাল করতে চাচ্ছে দেশে ও দেশের বাইরে ওই এজেন্টদের এটা একটা খেলা। আর হাদিকে গুলি করার মধ্য দিয়ে এই খেলা তারা শুরু করলো। আগামীতে আমরা ঐক্যবদ্ধ না থাকলে আমরা যে পথে চলছি সেই পথ থেকে বিপথে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।”
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে জেলা জামায়াতের আমির ইকবাল হোসাইন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বিসহ ছাত্র-জনতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।