
দেশজুড়ে আলোচনায় আসা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের প্রাক্তন কর্মচারী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে ‘পানি জাহাঙ্গীর’-এর বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুটি জাতীয় দৈনিকে মামলাসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মামলাটি দায়ের করেছে।
জানা গেছে, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে চাকরি শুরু করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি স্বল্প সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ পদে দায়িত্ব পান। সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, এই সময়েই তিনি অস্বাভাবিকভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হন।
২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যা বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা পরিচালনা করত। তবে তদন্তে উঠে এসেছে, এই ব্যবসার আড়ালে তিনি ব্যাপক পরিমাণ সন্দেহজনক ব্যাংক লেনদেনে যুক্ত ছিলেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা হয়, যার বৈধ উৎস মিলেনি এবং ব্যবসার প্রকৃতির সঙ্গে যার মিল নেই।
সিআইডির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর বড় অংশই নগদে জমা পড়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব টাকার উৎস অজানা, এবং প্রাথমিক প্রমাণে হুন্ডি ও মানিলন্ডারিংয়ের কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
তদন্তে আরও জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার এবং ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেনে যুক্ত ছিলেন। ২০২৪ সালের জুনে জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় বসবাস করছেন। সিআইডির তদন্তে জানা গেছে, বিদেশে সম্পদ ক্রয় বা বিনিয়োগের কোনো সরকারি অনুমোদন না নিয়েই তারা দেশ ছাড়েন।
সিআইডির মুখপাত্র জসীম উদ্দিন খান বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। তিনি আরও জানান, এই চক্রের সম্পূর্ণ কর্মকাণ্ড উদঘাটন ও সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।