
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস কখনো ভুলে যাওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর ভাষায়, “কারণ ওটাই হচ্ছে আমাদের জন্মের ঠিকানা।” তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে এই ভূমিই স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জন করেছিল, যা আমাদের অস্তিত্ব, পরিচয় ও স্বাতন্ত্র্যের প্রতীক।
শনিবার (১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম আয়োজিত “স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ১৯৭১ সালে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, আজ তারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবমূল্যায়নের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “তারা শুধুমাত্র ২৪-এর জুলাইয়ের যে আন্দোলন, সেটাকেই বড় করে তুলে ধরতে চায়।” ফখরুলের মতে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিএনপি দীর্ঘ ১৫ বছর সংগ্রাম করেছে। “আজ কেউ যদি দাবি করেন, এককভাবে তারা নেতৃত্ব দিয়েছে, আমরা সেটা মানতে রাজি নই,” যোগ করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে প্রায় ৬০ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। “আমাদের পার্টির প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে, মিথ্যা মামলায় তাঁর ১০ বছরের সাজা হয়েছিল,” বলেন তিনি। তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত “একটি ফ্যাসিবাদী দানবীয় রাষ্ট্রে” বিএনপির অন্তত ১৭০০ নেতা-কর্মী গুম এবং ২০০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “১৯৭১ সালে যারা আমাদের হত্যা করছিল, তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আপনারা এই দেশের মানুষকে হত্যা করেছিলেন এবং বহু জ্ঞানী ব্যক্তিকে বধ্যভূমিতে নিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন। আমরা এগুলো ভুলিনি।” ফখরুল স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু করেন। তাঁর নেতৃত্বেই একদলীয় শাসনের অবসান ঘটে এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়।
ফখরুল বলেন, “প্রেসিডেন্ট জিয়ার পর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রেসিডেন্ট ফর্ম অব গভর্নমেন্ট থেকে পার্লামেন্টারি ফর্ম অব গভর্নমেন্টে রূপান্তর করেছিলেন।” তিনি মনে করিয়ে দেন, খালেদা জিয়া বিরোধী দলের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও নতুন নির্বাচন আয়োজন করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করেন, যার অধীনে চারটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর অভিযোগ, শেখ হাসিনা সেই ব্যবস্থা বাতিল করে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা সবসময় নির্বাচনের পক্ষে। গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা বলেছিলাম তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন চাই, কারণ একটি সংসদ গঠিত হলে অপশক্তির উত্থান রোধ করা সম্ভব হতো।”
সনদ স্বাক্ষর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের মনে আছে; পার্লামেন্টের সামনে বৃষ্টি হচ্ছিল, ছাতা ধরে আমরা সই করেছি।” তিনি জানান, আলোচনায় যেসব বিষয়ে সব দল একমত ছিল, তা সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, আর ভিন্নমতের বিষয়গুলো “নোট অব ডিসেন্ট” হিসেবে লিপিবদ্ধ করার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমানে যে প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয়েছে, সেখানে সেই বিধানটি বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, বিএনপি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে সবসময় সংযম দেখিয়েছে। “আমরা কোনো আন্দোলন বা অবরোধে যাইনি, শুধু প্রেস কনফারেন্স করে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি,” বলেন তিনি। তাঁর দাবি, দল যে বিষয়ে সই করেছে তার দায় তারা নেবে, কিন্তু যেগুলো সই করেনি, সেগুলোর দায়িত্ব নেবে না।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সময়সূচি উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “পিআর হবে কি হবে না, সেটা আগামী পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে।” তিনি জানান, বিএনপি গণভোটে রাজি হয়েছে এই শর্তে যে নির্বাচনের দিনেই তা অনুষ্ঠিত হবে। “আলাদা করে গণভোট করতে গেলে হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে,” বলেন তিনি। তাঁর মতে, ভোট ও গণভোট একসঙ্গে নেওয়াই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। “আমরা কখনোই নির্বাচনের তারিখ পেছানোর কথা বলিনি। বরং আমরা চাই নির্বাচন দ্রুত হোক। মানুষকে মিথ্যা বলে প্রতারণা করা বন্ধ করুন,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম এবং অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন[email protected]ঠিকানায়।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন[email protected]ঠিকানায়।