
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ইংরেজি ভাষা পরীক্ষা আইইএলটিএস- এ নম্বর ত্রুটির ঘটনায় প্রায় ৮০ হাজার পরীক্ষার্থী ভুলভাবে পাস করেছে- এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ। এই ভুলের কারণে অনেক অভিবাসী আইইএলটিএসে ফেল করার পরও যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের স্টাডি বা কাজের ভিসা পেয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চীন, বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব কারণে যোগ্যতা না থাকা বহু ছাত্র, এনএইচএস কর্মী ও অভিবাসী ভিসা পেয়েছেন, যা ব্রিটেনে নিরাপত্তা ও পেশাদারীত্বের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
গত মাসে আইইএলটিএস কর্তৃপক্ষ ভুল ফল পাওয়া পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সঠিক ফল জানায় এবং দুঃখপ্রকাশের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়।
দ্য টেলিগ্রাফের সহযোগী সম্পাদক গর্ডন রায়নার জানান, বাধ্যতামূলক ইংরেজি পরীক্ষায় অনেকে ব্যর্থ হলেও মার্কিং ত্রুটির কারণে তাদের পাস দেখানো হয়েছিল। ব্রিটিশ কাউন্সিল পরিচালিত এই পরীক্ষায় লিসেনিং ও রিডিং অংশে কারিগরি সমস্যা দেখা দেয়, যা পরীক্ষার প্রায় ১ শতাংশ- অর্থাৎ ৭৮ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর ওপর প্রভাব ফেলে। ত্রুটি দেরিতে ধরা পড়ায় অনেক পরীক্ষার্থী ভুল ফল ব্যবহার করে ভিসা পেয়ে আইনগতভাবে ব্রিটেনে প্রবেশ করেছেন।
দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, তিন দেশে পরীক্ষার কাগজপত্র ফাঁস করে বিক্রি করা হয়েছে। বাংলাদেশে পুলিশ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যারা ঘুষের মাধ্যমে আগাম প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১,০০০ থেকে ২,৫০০ পাউন্ড পর্যন্ত অর্থ নিতেন।
ভিয়েতনামে গত ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ কাউন্সিল হঠাৎ করে নির্ধারিত পরীক্ষা বাতিল করে বিকল্প পরীক্ষা নেয়, যা ফাঁসের জল্পনা আরও বাড়ায়।
তদন্তকারীরা জানান, ইংরেজিতে দুর্বল কিছু এনএইচএস ও কেয়ার সেক্টরের কর্মীর কারণে রোগীরা ঝুঁকিতে পড়ছেন। এমনকি এক কেয়ার কর্মী breathing (শ্বাসপ্রশ্বাস) ও bleeding (রক্তক্ষরণ)- এর পার্থক্যও বুঝতে পারেননি।
বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির নেতারা সরকারকে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যারা ভুলভাবে পাস দেখিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছেন, তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। ব্রিটিশ ছায়া মন্ত্রী ক্রিস ফিলপ বলেন, “যারা অনুচিতভাবে ভিসা পেয়েছেন, তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। মানুষ এখানে এসে যদি কখনো ইংরেজি না শেখেন, তাহলে তারা সমাজে মিশতে পারেন না এবং স্বাধীনভাবে জীবন গড়ে তুলতেও ব্যর্থ হন। এটি একটি ভয়াবহ ব্যর্থতা।”
ভিসা ব্যবস্থার দুর্নীতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে যুক্তরাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে।
অন্যদিকে, ব্রিটিশ কাউন্সিল করোনাকালের একটি সরকারি ঋণের ১৯৭ মিলিয়ন পাউন্ড এখনো পরিশোধ করতে পারেনি। পরীক্ষার ফল ত্রুটির কারণে ক্ষতিপূরণের দাবি উঠলে তাদের আর্থিক অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ