
জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গুরুত্বপূর্ণ নতুন তথ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। জবানবন্দিতে তিনি কর্তৃপক্ষের ব্যবহৃত এক নতুন ‘সেইফ হাউজ’-এর অবস্থান জানান।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে তিনি এ জবানবন্দি দেন। মামলাটিতে বেরোবির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর হাসিবুর রশীদসহ মোট ৩০ জন আসামি রয়েছেন।
পরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই সারা দেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ চলাকালে রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই দিনে চট্টগ্রামে ওয়াসিমসহ মোট ছয়জন শিক্ষার্থী নিহত হন। তিনি জানান, ১৭ জুলাই গায়েবানা জানাজা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ায় গোয়েন্দা সংস্থার চাপের মুখে পড়তে হয়। সেই রাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে তাঁদের পদ্মা এলাকায় নেওয়া হয় এবং আন্দোলন থেকে সরে আসার জন্য নানাভাবে বোঝানো হয়।
হাসনাত আরও বলেন, “এক ঘণ্টা পর আমাদের সামনে দিয়েই তিনজন মন্ত্রী বের হয়ে যান। অর্থাৎ আমরা কোনো বৈঠক করিনি।” বৈঠকে রাজি না হওয়ায় রাতেই তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় একটি নিরাপদ কেন্দ্র- মৎস্য ভবন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাঝামাঝি অবস্থিত সেইফ হাউজে। বাইরে থেকে পরিত্যক্ত মনে হলেও ভেতরে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন ঘরটিতে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ ও চাপ প্রয়োগ করা হয় বলে তিনি দাবি করেন।
তার ভাষায়, “পরিবারকে জিম্মি করা হয়, ছাত্রলীগ দিয়ে স্থানীয়ভাবে হয়রানি করা হয় এবং বৈঠক করতে আমাদের বাধ্য করা হয়। সকালে একজন এজেন্সি সদস্য হুমকি দেন, যেন আমরা ঘোষণা দিই যে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তাহলে আমাদের ‘লাইফ সেটেল’ করে দেবে। তবে আমরা রাজি হইনি।”
দিনের বেলা সাড়ে ১১টার পর তাঁর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় এবং দুপুর দেড়টায় বিরতির পর তিনি গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখেন। দুপুর আড়াইটায় আবার আদালতে ফিরে অবশিষ্ট জবানবন্দি দেবেন এই জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক।
এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর মঈনুল করিম, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্যরা।