
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চানখারপুলে ছয়জন নিহতের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শাহবাগ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি নিজের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যে জানিয়েছেন, আন্দোলনের সময় তিনি সরকারি দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং কোনো অস্ত্র ব্যবহার বা হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল সোয়া ১০টায় ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া ৪২ বছর বয়সী আরশাদ হোসেন ২০১১ সালে এসআই পদে যোগদান করেন এবং ২০২২ সালে পরিদর্শক পদে উন্নীত হন। ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি শাহবাগ থানায় দায়িত্ব নেন।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, “২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আমি সরকারি আদেশ মেনে দায়িত্ব পালন করেছি। শাহবাগসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি পয়েন্টে পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের ব্যবস্থা করেছি এবং শাহবাগ মোড়ে ছাত্রদের সঙ্গে থেকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করেছি। কোনোরূপ অস্ত্র ব্যবহার, গুলি চালানো বা কাউকে আহত করার ঘটনা ঘটায়নি।”
তিনি উল্লেখ করেন, ৩১ জুলাই ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে শাহবাগ মোড়ে দায়িত্বে থাকাকালীন আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট মাজার গেটের দিকে আসছিল। একসময় তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলা হয় ‘ফুটফুটে সুন্দর আসছে’, এবং কয়েকজন মেয়ে মাটির দিকে থুতু নিক্ষেপ করে। উত্তেজিত হয়ে দুইজন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের পরিচয় যাচাই করা হয় এবং গাড়িতে উঠিয়ে নেওয়া হয়।
আরশাদ হোসেন জবানবন্দিতে আরও জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলন চরমে পৌঁছালে সরকার কারফিউ জারি করে। পুলিশ এবং সেনাবাহিনী নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেছেন তিনি। চানখারপুলে অবস্থানকালে কোনো অস্ত্র ব্যবহার বা হত্যার সঙ্গে জড়িত হননি।
তিনি বলেন, “আমি যদি কোনো অপরাধে জড়িত থাকতাম, তাহলে পরবর্তী পাঁচ মাস কর্মস্থলে থেকে পালিয়ে যেতাম। আমি আমার দায়িত্ব সিআরপিসি, পিআরবি, পুলিশ আইন ও ডিএমপি অধ্যাদেশ অনুযায়ী পালন করেছি। ৩১ জুলাই আন্দোলনকারী ছাত্ররা আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করলেও কোনো বলপ্রয়োগ করিনি।”
এ মামলায় মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন এবং মো. নাসিরুল ইসলাম। পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।
এর আগে, ৩০ নভেম্বর ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলামের জেরা সম্পন্ন হয়। এই মামলায় ২৩ কার্যদিবসে ২৬ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে।