
দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী - অন্যদিকে কোলে বসে আছে চার বছরের একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া। বাড়ির আঙিনা লোকজনে ভরপুর, সবার চোখে শুধু অশ্রু। কেউ ভাবতেও পারেননি হাসিমুখে প্রবাসে যাওয়া মানুষটি ফিরবেন কফিনবন্দি হয়ে।
ছুটি কাটিয়ে প্রবাসে যাওয়ার মাত্র ১৮ দিনের মাথায় কর্মস্থলে স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন নোয়াখালীর শফিকুল ইসলাম মানিক (৪০)। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে তার মরদেহ নিজ গ্রামে পৌঁছালে পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। একনজর প্রিয় মানুষটিকে দেখতে ভিড় করেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও এলাকার শত শত নারী-পুরুষ।
শফিকুল ইসলাম মানিক চাটখিল উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বানসা গ্রামের পোদ্দার বাড়ির মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুই মাসের ছুটি শেষে ৪ নভেম্বর আবুধাবিতে ফেরেন মানিক। ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টার দিকে কর্মস্থলে হঠাৎ স্ট্রোক করলে সহকর্মীরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেন। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে বানসা মধ্যপাড়া বাইতুন নুর জামে মসজিদের সামনে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। শেষবারের মতো মরদেহ দেখার জন্য অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন।
মানিকের ছোট ভাই প্রবাসী জাবেদ হোসেন বলেন, আমার ভাই ১৭ বছর ধরে প্রবাসে ছিলেন। সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তিনিই সামলাতেন। আবুধাবিতে তিনি বলদিয়ার কাজ করতেন। তার মতো মানুষকে হারিয়ে আমাদের পৃথিবীটাই অন্ধকার হয়ে গেছে।
জানাজার ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আফসার বলেন, মানিক ভাইয়ের স্ত্রী দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা, আর চার বছরের সন্তানটি কান্না থামাতে পারছে না। স্ত্রী বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকলেন, কিন্তু সবকিছু ছেড়ে শেষ পর্যন্ত কফিনবন্দি হয়েই দেশে ফিরতে হলো তাকে।
মানিকের আত্মীয় শিপন ইকবাল বলেন, মানিক ভাইয়ের ব্যবহার অনেক ভালো ছিল। দেখা হলেই তিনি হাসিমুখে কথা বলতেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার জানাজায় অংশগ্রহণ করার জন্য অনেক মানুষজন এসেছে।
চাটখিল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় প্রবাসে গিয়েছিলেন মানিক। কিন্তু তার এই ফেরা জীবনের শেষ ফেরা হবে; এটা কেউ ভাবেনি। এমন আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। শত শত মানুষ এসে তাকে অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় জানিয়েছেন।